বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই হুমকি চলছিল। কিন্তু পুরভোটের পরে তা বেড়ে গিয়েছে আরও। সম্প্রতি এলাকার এক বাসিন্দাকে তুলে নিয়ে গিয়ে মারধর করা হয়। এমনই অভিযোগ দুর্গাপুরের ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তরণ ভ্যাম্বে কলোনির বাসিন্দাদের।
ওই কলোনিতে মূলত ঝাড়খণ্ড, বিহার-সহ কয়েকটি রাজ্য থেকে আসা মানুষজনের বাস। দিনমজুরি করেই তাঁদের সংসার চলে। বাসিন্দারা জানান, বেশির ভাগ বাসিন্দাই ৩০-৩৫ বছর ধরে এলাকায় রয়েছেন। সিপিএমের সান্নিধ্য পেয়েছেন সেই সময়। এখনও অনেকেই সিপিএমের সমর্থক। বিধানসভা ভোটে দুর্গাপুর পূর্ব কেন্দ্রে জয়ী হয় তৃণমূল। অভিযোগ, তার পর থেকেই ওই কলোনির বাসিন্দাদের হুমকি দিতে শুরু করে তৃণমূল।
এ বারের পুরভোটে ওই ওয়ার্ড থেকে জয়ী হন তৃণমূল প্রার্থী প্রমোদ সরকার। গত শুক্রবার কাঁকসা থানায় লিখিত অভিযোগে কলোনির বাসিন্দা পম্পা দাস, মমতা দাস, সীমা রজক, অলোক দাসরা জানান, ১০ জুন সন্ধ্যায় কলোনির বাসিন্দা আরিফ মুনসারি যখন মুচিপাড়ায় বাজার করতে গিয়েছিলেন, তখন তাঁকে ভোজালি দেখিয়ে জোর করে গাড়িতে তুলে বামুনাড়ার বেনুবন এলাকায় তৃণমূল অফিসের সামনে নিয়ে যায় দলেরই কিছু লোকজন। সেখানে তাঁকে মারধর করা হয়। থানায় অভিযোগ জানাতে গেলে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকিও দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।
‘আক্রান্ত’ আরিফ অভিযোগ করেন, মারধরের পরে আক্রমণকারীরা তাঁকে এইচএফসিএল কমিউনিটি সেন্টারের সামনে নামিয়ে দিয়ে যায়। পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে নিউ টাউনশিপ থানায় নিয়ে যায়। |
কিন্তু সেখানে অভিযোগ দায়ের করতে গেলে উল্টে তাঁকেই হাজতে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। পরে তাঁর বাবা মহম্মদ আয়ুব আনসারি ও মা আসমা বেগম তাঁকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসেন। আরিফের অভিযোগ, “আমার তলপেটে ও চোখের নীচে মারা হয়। পায়ের উপর দিয়ে মোটরবাইক চালিয়ে দেওয়া হয়।” তাঁর বাবা মহম্মদ আয়ুব আনসারির দাবি, “ভয়ে ছেলে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে যেতে পারছে না। আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছি।”
সিপিএমের অভিযোগ, তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরাই এমন ঘটনা ঘটিয়েছে। দলের বিধাননগর জেমুয়া লোকাল কমিটির সম্পাদক পঙ্কজ রায় সরকারের অভিযোগ, “তৃণমূলের প্রশ্রয়ে বহিরাগতরা এলাকায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। তৃণমূল তাদের ইচ্ছামতো কাজে লাগাচ্ছে। আক্রান্ত হচ্ছেন সিপিএম সমর্থক-কর্মীরা।” তাঁর দাবি, “পুরভোটে এই এলাকার মানুষ তৃণমূলকে নির্বাচিত করেছেন। কাজেই এলাকার শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্ব নিতে হবে নির্বাচিত জন প্রতিনিধিকেই।”
এ দিকে, ওই ওয়ার্ড থেকে নির্বাচিত তৃণমূল কাউন্সিলর প্রমোদ সরকার দাবি করেন, এলাকার মানুষ যাতে শান্তিতে থাকেন সে ব্যাপারে তিনি সব সময় সচেষ্ট। বিরোধীদের উপরে আক্রমণের ঘটনাও তিনি সমর্থন করেন না। তাঁর কথায়, “অশান্তির আশঙ্কায় দলের কর্মী-সমর্থকদের এলাকায় বিজয় মিছিল পর্যন্ত করতে দেওয়া হয়নি। ভ্যাম্বে কলোনি নিয়ে এমন কোনও অভিযোগের কথা আমি শুনিনি। তবে খোঁজ নিয়ে দেখব।”
অভিযোগটি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছে পুলিশ। বর্ধমানের পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা বলেন, “কাঁকসা থানায় দায়ের হওয়া অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ যা করণীয় করবে।” আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের এডিসিপি (পূর্ব) শুভঙ্কর সিংহ সরকার জানান, পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। |