চিকিৎসক না থাকায় পরিষেবা পাওয়া যাচ্ছে না, এমন অভিযোগ বারবার তুলছিলেন কালনা হাসপাতালে আসা রোগী ও তাঁদের আত্মীয়েরা। সম্প্রতি বিনা চিকিৎসায় এক রোগীর মৃত্যু হয়েছে, এই অভিযোগ তুলে সুপারকে ঘেরাও করে রাখেন বাড়ির লোকজন। শেষ পর্যন্ত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষই বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানালেন, মেডিসিন বিভাগে ডাক্তার কম থাকায় পূর্ণ পরিষেবা দেওয়া যাচ্ছে না। তাই সকলকে সহযোগিতা করার অনুরোধও করেছেন কর্তৃপক্ষ।
হাসপাতালের ভিতরে মঙ্গলবারের তারিখ দিয়ে জারি করা এই বিজ্ঞপ্তিতে সুপার অভিরূপ মণ্ডলর সই করা রয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, মেডিসিন বিভাগে অস্থায়ী ভাবে এক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক যোগ দিয়েছেন ঠিকই। কিন্তু স্থায়ী কোনও চিকিৎসক এখনও নিয়োগ করা যায়নি ওই বিভাগে। ফলে রাতের হাসপাতালে বেহাল অবস্থা মেডিসিনের চিকিৎসা পরিষেবার। তবে হাসপাতালে স্থায়ী চিকিৎসক নিয়োগ হতে কত দিন সময় লাগতে পারে, তা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি হাসপাতালের সুপার অভিরূপ মণ্ডল। তিনি বলেন, “এই ব্যাপারে লাগাতার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হচ্ছে। দ্রুত স্থায়ী চিকিৎসক পাওয়ার আশ্বাস মিলেছে।” |
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, মেডিসিন বিভাগে যে অস্থায়ী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়োগ করা হয়েছে, তাঁর নাম সুকুমার ঘোষ। ছ’দিন আগে কাটোয়া মহকুমা হাসপাতাল থেকে এসে হাসপাতালের ওই বিভাগ সামলাচ্ছেন তিনি। কালনা হাসপাতালে স্থায়ী চিকিৎসক যোগ দিলেই তাঁর ফিরে যাওয়ার কথা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, সুকুমারবাবু তাঁদের শর্ত দিয়েছেন, সপ্তাহে প্রতিদিন তাঁর পক্ষে রোগী দেখা সম্ভব নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ডিউটি করার পর রাতে তাঁর পক্ষে কাজ করা অসম্ভব। চিকিৎসক সঙ্কটে পড়ে তাঁর দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সূত্রে খবর।
কিন্তু, রাতে চিকিৎসক না থাকলে কীভাবে ওই বিভাগের রোগীদের চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে? হাসপাতাল সূত্রে খবর, রাতে সুকুমারবাবুর পরামর্শ অনুযায়ী রোগীদের চিকিৎসা করা হচ্ছে। কোনও রোগীর আচমকা সঙ্কটজনক অবস্থা তৈরি হলে তাঁকে সরাসরি জেলা হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। পেট ব্যথা ইত্যাদি ছোটখাটো অসুখের ক্ষেত্রে সুপার নিজেই রোগীদের চিকিৎসা করছেন। অন্যান্য মেডিক্যাল অফিসারেরাও রোগীদের চিকিৎসায় তাঁকে সাহায্য করছেন। সুপার অভিরূপবাবু বলেন, “বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক থাকলে মুমূর্ষু রোগীকে জেলা হাসপাতালে পাঠানোর আগে ঠিক করে প্রাথমিক চিকিৎসা করা যায় ঠিকই। তবে রাতে হাসপাতালে যে চিকিৎসকেরা থাকেন, তাঁরাও রোগীদের বিষয়ে যথেষ্ট যত্নবান।”
তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, সুকুমারবাবু হাসপাতালে না আসলে মেডিসিন বিভাগের অবস্থা দুর্বিসহ হয়ে উঠছে। হাসপাতাল থেকে রোগীদের ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন তাঁরা। সুপার অবশ্য বলেন, “একজন অস্থায়ী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পক্ষে একটি গোটা বিভাগ সবসময়ে সামাল দেওয়া সম্ভব নয়। সুকুমারবাবু যতটা পারছেন, চেষ্টা করছেন। আমরাও চেষ্টা করছি, যত কম সংখ্যক রোগীকে রেফার করা যায়।” |