বছর তিনেকের অসুস্থ বিশুকে নিয়ে পাশের গ্রাম থেকে ছুটে এসেছিলেন বাড়ির লোক। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করাতে হবে। কিন্তু সে সময়ে বহির্বিভাগে রোগীদের লম্বা লাইন। এক জন চিকিৎসক পরীক্ষা করছেন। জানা গেল, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আর রোগী ভর্তি নেওয়া হচ্ছে না। গত জানুয়ারি থেকে ওই বিভাগে পরিষেবা বন্ধ। বহির্বিভাগটি কোনও মতে এক জন চিকিৎসককে দিয়ে চলছে। তিনিই পরীক্ষা করে ওই শিশুকে হাসপাতালে পাঠানোর পরামর্শ দিলেন। ছোট্ট বিশুকে নিয়ে ছোটা হল ৯ কিলোমিটার দূরে খানাকুল গ্রামীণ হাসপাতালে।
গত জানুয়ারিতে খানাকুলের প্রত্যন্ত এলাকা শাবলসিংহপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দুই চিকিৎসক মহকুমা হাসপাতালে বদলি হয়ে যাওয়ায় এই সমস্যা হচ্ছে। চিকিৎসকদের শূন্য স্থানে নতুন নিয়োগ না হওয়ায় পরিষেবা বন্ধ। এ দিকে, শশাপোতা, মমকপুর, নন্দনপুর, হরিশচক, বনহিজলি-সহ প্রায় ১২টি গ্রামের মানুষ নির্ভরশীল ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উপর। প্রায় প্রতিদিনই রোগীরা আসছেন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি হতে। পরিষেবা বন্ধ শুনে এরপরে তাঁদের ছুটতে হচ্ছে ৩৫ কিলোমিটার দূরে আরামবাগ মহকুমা হাসপাতাল কিংবা খানাকুল গ্রামীণ হাসপাতালে। গ্রামীণ হাসপাতালে রোগীর চাপ থাকলে আবার তাঁদের পাঠানো হয় মহকুমা হাসপাতালে। সব মিলিয়ে ব্যাপক সমস্যায় গ্রামবাসীরা।
ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক অভিজিৎ কাঁড়ার বলেন, “ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দুই চিকিৎসকের মধ্যে এক জনকে আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালে বদলি করে দেওয়ায় এই সমস্যা দেখা দিয়েছে। এক জন চিকিৎসক দিয়ে বহির্বিভাগটি চলছে। সমস্যার বিষয়টি জেলা স্বাস্থ্য দফতরে জানানো হয়েছে।” জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিক উন্মেষ বসু বলেন, “সমস্যাগুলি দ্রুত কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা চলছে। স্বাস্থ্য দফতরকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।”
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, খানাকুল-২ ব্লকের শাবলসিংহপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি ১৯৪৬ সালে তৈরি হয়। তারপরে বন্যা, ঝড়ে একাধিকবার ক্ষতি হয়েছে সেটি। প্রতিবারই গ্রামবাসীরা বেড়া দিয়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ঘর তৈরি করে দিতেন। পরে ১৯৯২ সালে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নতুন ভবন তৈরি হয়। তখনই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে শয্যার ব্যবস্থা করে পরিষেবা দেওয়ার দাবি জানান গ্রামবাসীরা। তার বছর পাঁচেকের মধ্যে শয্যা পাওয়া গেলেও চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী-সহ অন্য পরিকাঠামো নিয়ে পরিষেবা দেওয়া শুরু হয় ২০০৩-এ। প্রতি মাসে ১৫-২০টি প্রসব, প্রতি সপ্তাহে লাইগেশন, ডায়েরিয়া, সর্পদষ্টের চিকিৎসা হচ্ছিল ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। গত জানুয়ারিতে দুই চিকিৎসকের বদলির পর নতুন কোনও চিকিৎসক নিয়োগ হয়নি। |