ঘোষণাই সার। আমরি-র অগ্নিকাণ্ড থেকে সরকার যে কোনও শিক্ষাই নেয়নি, আরও এক বার তার প্রমাণ পাওয়া গেল। বুধবার সকালে আগুন লেগে যাওয়ায় ভাল রকম ক্ষতিগ্রস্ত হল এসএসকেএম হাসপাতালের অ্যানাটমি বিভাগের একটি বড় অংশ। ওই বিভাগে অগ্নি-নির্বাপণের যে ব্যবস্থা মজুত ছিল, তা কোনও কাজেই লাগেনি বলে স্বীকার করেছেন হাসপাতালের কর্মীরা।
আমরি-র অগ্নিকাণ্ডের পরে বিভিন্ন হাসপাতাল পরিদর্শন করে সেখানকার অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা খতিয়ে দেখেছিল সরকারি প্রতিনিধিদল। দ্রুত পরিকাঠামো নির্মাণের কিছু প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে তা যে মানা হয়নি, এ দিনের ঘটনাই তার প্রমাণ। পরিকাঠামো যে কিছুই তৈরি হয়নি, তা মেনে নিয়েছেন রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তিনি বলেন, “বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমন্বয় গড়ে তোলা দরকার। প্রয়াসটা শুরু হয়েও থমকে গিয়েছে। আজকের ঘটনার পরে আমাদের আরও সতর্ক হতে হবে।”
দমকল সূত্রের খবর, বুধবার সকাল সওয়া ৯টা নাগাদ ওই হাসপাতালের ইউসিএম ভবনের চারতলায় অ্যানাটমি বিভাগের একটি সেমিনার-কক্ষে আগুন লাগে। দ্রুত তা ছড়িয়ে পড়ে ঘরের আশপাশে। দমকলের চারটি ইঞ্জিন ঘণ্টাখানেকের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণ করে। ঢাকুরিয়ার আমরি-তে অগ্নিকাণ্ডের পরে রাজ্যের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলির অগ্নি-নির্বাপক ব্যবস্থা-সহ নিরাপত্তার অন্যান্য খুঁটিনাটি দেখতে বিশেষ কমিটি গঠন করেছিল সরকার। নিয়ম না-মানলে কঠোর ব্যবস্থার হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আমরি-র ঘটনার ছ’মাস কেটে যাওয়ার পরেও কলকাতার অন্যতম সরকারি হাসপাতালের ‘নড়বড়ে’ অগ্নি-নির্বাপক ব্যবস্থার ছবিটা ফের এক বার বেআব্রু হল। |
অগ্নিকাণ্ডের পরে। বুধবার, এসএসকেএমে। — নিজস্ব চিত্র। |
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, এ জে সি বসু রোডের দিকে এসএসকেএম হাসপাতালের প্রবেশপথ লাগোয়া ইউনিভার্সিটি কলেজ অফ মেডিসিন ভবনে মূলত স্নাতকোত্তর স্তরের ক্লাস হয়। চারতলায় অ্যানাটমি বিভাগের সেমিনার-কক্ষ এবং গবেষণাগার। প্রাথমিক ভাবে অনুমান, আগুন ছড়ায় সেমিনার-কক্ষের শীতাতপ-নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র বা কম্পিউটার থেকে। এক চিকিৎসক জানিয়েছেন, সকাল সওয়া ৯টা নাগাদ অ্যানাটমি বিভাগের এক কর্মী সেমিনার-কক্ষের দরজা খুলেই আগুনের শিখা দেখতে পান। ধোঁয়াও বেরোচ্ছিল তখন। খবর যায় হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়িতে। দমকল ডাকে পুলিশ।
আগুন নিয়ন্ত্রণের পরে চারতলায় গিয়ে দেখা যায়, ওই ঘরের সব জিনিস পুড়ে গিয়েছে। দরজা-জানলার কাঠ ছাই। প্রচণ্ড তাপে দুমড়ে গিয়েছে সেমিনার-কক্ষের সিলিংয়ের লোহার কাঠামো, পাখা। জানলার কাচ চৌচির। ঘরের লাগোয়া গবেষণাগারের এক দিকেও অগ্নিকাণ্ডের ‘চিহ্ন’ রয়েছে। তবে সেখানকার কোনও রাসায়নিক আগুনে নষ্ট হয়নি বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।
অ্যানাটমি বিভাগের অধ্যাপক, চিকিৎসক মৌলিক দেবনাথ বলেন, “বাইরে থেকেই দেখছিলাম, চারতলার সেমিনার-কক্ষ থেকে গলগলিয়ে ধোঁয়া বেরোচ্ছে। আগুনের শিখাও দেখা যাচ্ছিল। তাপে জানলার কাচ ভেঙে পড়ার শব্দ শুনি।” হাসপাতাল সূত্রে খবর, এখন পরীক্ষা চলায় কয়েক দিন ওই ভবনে স্নাতকোত্তর স্তরের পঠনপাঠন বন্ধ ছিল। সাধারণত, প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে সেখানে ক্লাস শুরু হয়ে যায়। ছুটির জন্য এ দিন তাই ঘটনার সময়ে সেখানে কোনও অধ্যাপক, ছাত্র ছিলেন না। পুলিশ ও দমকলের অনুমতি পাওয়ার পরে ওই ভবনে ঢুকে প্রয়োজনীয় জিনিস সরিয়ে নেন হাসপাতালের শিক্ষক-ছাত্র-কর্মীরা। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, অগ্নিকাণ্ডের জেরে অনলাইনে মেডিক্যাল ছাত্রদের ভর্তি প্রক্রিয়া কিছুক্ষণের জন্য ব্যাহত হয়েছে।
কালো ধোঁয়া দেখেই ওই বাড়ির সামনে জড়ো হয়ে গিয়েছিলেন হাসপাতালে ভর্তি কয়েক জন রোগীর পরিজনও। তাঁদেরই এক জন বিমল নায়েক বললেন, “একের পর এক দমকলের গাড়ি ঢুকছিল। আমরি-র কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল। ভাগ্যিস এখানে কেউ ছিলেন না। থাকলে যে কী হত!” |