নিজস্ব সংবাদদাতা • ফালাকাটা |
এতদিন বিভিন্ন মহলে আর্জি জানানো হলেও মহকুমার দাবিতে সেভাবে রাস্তায় নেমে কোনও আন্দোলন করেননি ফালাকাটার বাসিন্দারা। সরকারি ভাবে আলিপুরদুয়ারকে আলাদা জেলা করার প্রস্তাবের পরেই ফালাকাটাকে মহকুমা ঘোষণার দাবিতে রাস্তায় নামল শাসক দলের পাশাপাশি বিভিন্ন সংগঠন। ইতিমধ্যে শাসক দল তৃণমূল শহরের বিভিন্ন এলাকায় পোষ্টার দিয়ে আলিপুরদুয়ারকে পৃথক জেলা ঘোষণা করার জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানানোর পাশাপাশি ফালাকাটাকে মহকুমা করার জানিয়েছে। এলাকার বিধায়ক তথা তৃণমূলের আলিপুরদুয়ার সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অনিল অধিকারী বলেন, “আলিপুরদপুয়ার জেলা হলে ফালাকাটা অবশ্যই মহকুমা হবে বলে আমার বিশ্বাস। ফালাকাটার মহকুমা হওয়ার সমস্ত পরিকাঠামো রয়েছে। এখানে মানুষ খুবই উপকৃত হবেন।” আলিপুরদুয়ারের মহকুমাশাসক অমলকান্তি রায় বলেন, “মহকুমা করার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ দেখছেন। তৃণমূলের জোট সঙ্গী কংগ্রেসের পক্ষ থেকেও ফালাকাটাকে মহকুমা ঘোষণার পাশাপাশি পুরসভা ঘোষণার দাবিতে শহর জুড়ে পোষ্টার পড়েছে। কংগ্রেসের ব্লক সভাপতি স্বপন বসু বলেন, “বাম আমলে ফালাকাটাকে বঞ্চিত করে রাখা হয়েছিল। এখানকার প্রস্তাবিত স্টেট জেনারেল হাসপাতালটিও আরএসপি প্রভাবিত অন্য এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। রাজ্যে পরিবর্তনের পাশাপাশি ফালাকাটায় তৃণমূলকে জিতিয়েছেন জনগণ। মানুষের মহকুমার দাবি পূরণ হবে বলে আশা রাখি।” সিপিএমের তরফেও ফালাকাটাকে মহকুমা ঘোষণার দাবি করা হয়েছে। রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা জলপাইগুড়ি জেলা সিপিএমের নেতা যোগেশ বর্মন বলেন, “আলাদা ভাবে আমরা ডেপুটেশন দিইনি। তবে, প্রশাসনিক ভাবে আলিপুরদুয়ার জেলার পাশাপাশি ফালাকাটাকে মহকুমা করার প্রস্তাব যখন দেওয়া হয়েছে সে সময় আমরাও মহকুমার দাবি জানাই।” বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি প্রায় প্রতিদিন কোনও-না-কোনও ব্যবসায়ী সংগঠন বা ক্লাবের পক্ষে স্থানীয় প্রশাসনকে মহকুমা ঘোষণার আর্জি জানিয়ে দাবিপত্র দেওয়া হচ্ছে। শহর জুড়ে মহকুমার দাবি তুলে ব্যানার, ফ্লেক্সে নির্বাচনী প্রচারের মতো মহকুমার দাবি তোলা হচ্ছে। এলাকার বাসিন্দারাও চাইছেন ফালাকাটা মহকুমা হোক। তারা জানান, ১৮৬৮ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার বক্সা মহকুমা সরিয়ে ফালাকাটায় নিয়ে এসেছিলেন। দুই বছরের বেশি সময় ধরে প্রশাসনিক কাজকর্ম চলেছে ফালাকাটায়। পরে তা সরিয়ে আলিপুরদুয়ারে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে ৪০ কিলোমিটার দূরে আলিপুরদুয়ার গিয়ে প্রশাসনিক, আদালতের কাজকর্ম সারতে দিয়ে কেবল যাতায়াত বাবদ দরিদ্র মানুষের মোটা টাকা খরচ হচ্ছে। ফালাকাটাকে মহকুমা হিসাবে ঘোষণা করা হলে আদালত থেকে প্রশাসনিক ভবন তৈরির জন্য জমির অভাব থাকবে না বলে বাসিন্দাদের দাবি। এতে মানুষের হয়রানিও কমবে বলে তাদের দাবি। ফালাকাটা ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক দিলীপ দত্ত বলেন, “একজন ব্যবসায়ীকে সকাল থেকে ব্যবসা বন্ধ করে এখন আলিপুরদুয়ার ছুটতে হচ্ছে। আলিপুরদুয়ার জেলা হলে ফালাকাটা অবশ্যই মহকুমা ঘোষণা করা উচিত। আমরা প্রশাসনকে এই দাবি জানিয়েছি।” শিক্ষক ও গবেষক রমাপ্রসাদ নাগ বলেন, “শহরের জলসেচ দফতরের পাশে প্রশাসনিক ভবন ছিল। ফালাকাটা তহশিল দফতরে নিযুক্ত ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট আশেপাশের দুটি ব্লক নিয়ন্ত্রণ করতেন। যোগাযোগের সুবিধা ছাড়া নানান দিক থেকে ফালাকাটা মহকুমা উপযুক্ত বলে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার উপলব্ধি করে। বর্তমানে পরিকাঠামোগত দিক থেকেই ফালাকাটা মহকুমা ঘোষণা করা প্রয়োজন। আশা করি এখানকার মানুষের দাবি পূরণ করবে সরকার।” |