‘গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ (জিটিএ)-এ তরাই-ডুয়ার্সের এলাকার অন্তর্ভুক্তি ব্যাপারে শ্যামল সেন কমিটির রিপোর্ট গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা নেতৃত্বকে ‘অস্বস্তি’তে রেখেছে। তারই মাঝে জিটিএ-কে চ্যালেঞ্জ করে মামলা করার পথে জিএনএলএফ-প্রধান সুবাস ঘিসিং।
জিএনএলএফ সূত্রের খবর, আজ, বৃহস্পতিবার সকালে কলকাতা হাইকোর্টে হাজির হয়ে ঘিসিংয়ের ওই মামলা দায়ের করার কথা। বুধবার তিনি কলকাতায় আইনজীবী অরুণাভ ঘোষের সঙ্গে এ ব্যাপারে আলোচনাও করেছেন। অরুণাভবাবু জানান, ‘যে ভাবে’ জিটিএ গঠন করা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ ‘সংবিধান বিরোধী’ বলে মনে করেন ঘিসিং।
অরুণাভবাবুর ব্যাখ্যা, “সংবিধানের ৯ ও ৯ (ক) ধারায় বলা রয়েছে, ভারতের সর্বত্র গ্রামীণ এলাকার প্রশাসন পঞ্চায়েত আইন অনুযায়ী আর নগর এলাকার প্রশাসন পুর-আইন অনুযায়ী পরিচালিত হবে। ১৯৮৮ সালে গোর্খা পার্বত্য পরিষদ গড়ার সময় ওই আইনের সংশোধন করে পার্বত্য পরিষদ এলাকায় প্রশাসন চালানোর জন্য পরিষদকে বিশেষ ক্ষমতা দেওয়া হয়। কিন্তু জিটিএ হওয়ার পরে গোর্খা পার্বত্য পরিষদ অস্তিত্বহীন। এখন ওই সংশোধনের কোনও মূল্য নেই।” ওই আইনজীবী দাবি করেন, যতক্ষণ সংবিধান সংশোধন করে জিটিএ-কে বিশেষ ক্ষমতা দেওয়া না হচ্ছে, ততক্ষণ পাহাড়ে জনপ্রতিনিধি পরিচালিত যে কোনও স্বশাসিত সংস্থাকে পঞ্চায়েত বা পুর-আইন অনুযায়ী চালাতে হবে। সে ক্ষেত্রে পাহাড়ে প্রশাসন পরিচালনা করায় জিটিএ-র এক্তিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হতে চলেছেন ঘিসিং।
ঘটনা হল, দার্জিলিং পাহাড়ে মোর্চার কর্তৃত্ব কায়েমের পরে পাহাড় থেকে কার্যত সরতে বাধ্য হন ঘিসিং। দীর্ঘ দিন প্রকাশ্যে কোনও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে তাঁকে দেখা যায়নি। তাই আচমকা এ সময়ে পাহাড়ের রাজনীতিতে তিনি ‘পুনরাবির্ভাবের’ চেষ্টা কেন করছেন, সে প্রশ্নের জবাব খুঁজতে ব্যস্ত রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা।
জিএনএলএফ সূত্রের খবর, দার্জিলিং থেকে সরে থাকলেও পাহাড়ের রাজনীতির দৈনন্দিন খবরাখবর নিজস্ব সূত্রে রাখেন ঘিসিং। সম্প্রতি শ্যামল সেন কমিটির রিপোর্ট পেশের পরে মোর্চা নেতৃত্ব কিছুটা ‘বেকায়দায়’ পড়ায় পাহাড়ে এখনও যে সব ঘিসিং অনুগামী রয়েছেন, তাঁরা সক্রিয় হয়ে ওঠেন। ওই ঘিসিং অনুগামীদের তরফে তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু তৃণমূলের তরফে সে ভাবে সাড়া মেলেনি। সেই সময়েই কয়েক জন প্রবীণ আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করে ঘিসিং কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়েরের সিদ্ধান্ত নেন।
ঘিসিং-অনুগামীদের অভিমত, বর্তমান ‘কৌশলে’ একাধিক উদ্দেশ্য সিদ্ধির আশা করছেন জিএনএলএফ-প্রধান। প্রথমত, পাহাড়ের রাজনীতিতে ফের নিজেকে কিছুটা ‘প্রাসঙ্গিক’ করে তুলতে পারবেন ঘিসিং। দ্বিতীয়ত, ঘিসিং পাহাড়ের রাজনীতিতে সামান্য ‘প্রাসঙ্গিকতা’ ফিরে পেলে, পরে মোর্চা বিরোধী দলগুলি যদি জোট বাঁধে, সেখানে যোগ দেওয়ার কথা ভাবতে পারবে জিএনএলএফ। তৃতীয়ত, মোর্চার এই মুহূর্তের ‘অস্বস্তি’র সুযোগ নিয়ে মাঠে নামলে, আগামী দিনে জিটিএ-ভোটে কিছু বাছাই এলাকায় লড়াইয়ের প্রস্তুতি-পর্বে কিছুটা এগিয়ে থাকতে পারেন ঘিসিং।
তবে মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বিনয় তামাংয়ের কটাক্ষ, “জিটিএ নিয়ে মামলা! কে করছেন? সুবাস ঘিসিং। পাহাড়ের ঘিসিংকে তো মানুষ নির্বাসনে পাঠিয়েছেন। জলপাইগুড়িতে এক জন ঘিসিং থাকেন (ঘটনা হল, পাহাড়ে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরে ঘিসিং এখন জলপাইগুড়ি শহরে বাড়ি ভাড়া করে থাকেন)। তিনি এ সব করার চেষ্টা করলেও কোনও লাভ হবে না।” যদিও মোর্চার প্রচার সচিব হরকা বাহাদুর ছেত্রী জানান, পাহাড়ের সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করার জন্য আজ, বৃহস্পতিবার দার্জিলিঙের জিমখানা হলে সভার ডাক দিয়েছেন মোর্চা সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ।
পক্ষান্তরে পাহাড়ের মোর্চা-বিরোধী দল গোর্খা লিগও ঘিসিংয়ের ‘কৌশল’ নিয়ে টিপ্পনী করেছে। দলের সাধারণ সম্পাদক প্রতাপ খাতির কথায়, “গোর্খা পার্বত্য পরিষদের চেয়ারম্যান থাকাকালীন সুবাস ঘিসিং নিজে কোনও দিন আইন মানেননি। এখন উনিই উচ্চ আদালতে গিয়ে আইনের সাহায্য চাইবেন বলে ভাবছেন! ওঁর (ঘিসিংয়ের) মানসিক স্বাস্থ্যের এই উন্নতিতে আমরা খুশি।” |