সিমেন্টের চাঙড়, সিমেন্টের বস্তা, পাথর প্রভৃতি ব্যবহার করেও রাজ্যে ভাঙন প্রতিরোধ করা যায়নি। এ বার রাজ্যে নদী-ভাঙনের মোকাবিলায় ইস্পাত প্রযুক্তি নিয়ে এগিয়ে আসছে বিশ্বে সর্বাধিক ইস্পাত উৎপাদনকারী সংস্থা আর্সেলর মিত্তল। ভাঙন ঠেকাতে নিজেদের প্রযুক্তি বিক্রি করার জন্য ওই সংস্থার প্রতিনিধিরা বুধবার মহাকরণে মন্ত্রী পর্যায়ের এক বৈঠকে যোগ দেন। সেখানে নিজেদের প্রযুক্তির সবিস্তার বিবরণও দেন তাঁরা।
বৈঠকের পরে সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়া জানান, নদীর ভাঙন রুখতে এত দিন সিমেন্টের চাঙড় ফেলা হত। লোহার তারের জালে পাথর ঢুকিয়ে তোলা হত দেওয়াল। সিমেন্টের বস্তা দিয়েও ঠেকা দেওয়া হয়ে থাকে। সেচমন্ত্রী বলেন, “এগুলো প্রথাগত পদ্ধতি। এই সব পন্থায় পুরোপুরি ভাঙনের মোকাবিলা করা সম্ভব হয়, জোর গলায় এমন দাবি করা যায় না। আর্সেলর মিত্তলের প্রতিনিধিরা বলছেন, ভাঙন ঠেকানোর জন্য তাঁরা স্টিলপ্লেট পাইলিং টেকনোলজি (এসপিটি) ব্যবহার করতে চান। এই প্রযুক্তি ইতিমধ্যে কর্নাটক ও অন্ধ্রপ্রদেশে ব্যবহার করা হয়েছে বলে ওই সংস্থার দাবি।” এই বিষয়ে আজ, বৃহস্পতিবারেও এক দফা আলোচনা হবে বলে জানান মানসবাবু।
এ দিনের বৈঠকে ছিলেন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র, পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, সেচমন্ত্রী মানসবাবু এবং কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। এ ছাড়া পুর, নগরোন্নয়ন ও সেচ দফতরের তিন সচিব এবং কেএমডি-র এমডি-ও ছিলেন।
ভাঙন রোধ ছাড়াও এ দিনের বৈঠকে আরও দু’টি বিষয়ে আলোচনা হয়। সেগুলো হল গভীর সমুদ্র-বন্দর এবং কলকাতার নিকাশি ব্যবস্থা। সাগরদ্বীপে গভীর সমুদ্র-বন্দর গড়ে তোলার উদ্যোগ চলছে। সেখানেও এসপিটি প্রযুক্তি ব্যবহার করার প্রস্তাব দিয়েছে লক্ষ্মী মিত্তলের সংস্থা। কেন্দ্র ও রাজ্য যৌথ ভাবে গভীর সমুদ্র-বন্দর গড়ার পরিকল্পনা করছে। তাই সংস্থার প্রতিনিধিদের পরামর্শ দেওয়া হয়, তাঁরা যেন এই বিষয়ে কেন্দ্রীয় সংস্থা কলকাতা পোর্ট ট্রাস্টের সঙ্গে আলোচনা করে নেন।
কলকাতার নিকাশি বর্জ্য গঙ্গায় পড়ার আগে স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট বসানো, এশীয় উন্নয়ন ব্যাঙ্ক বা এডিবি-র ৪৮ কোটি টাকায় কালীঘাট, চেতলা ও চড়িয়ালে তিনটি পাম্পের কাজ শুরু করার ব্যাপারেও আলোচনা হয় এ দিনের বৈঠকে। ওই পাম্পগুলি কলকাতা পুরসভার এক্তিয়ারে। কিন্তু গত পাঁচ বছর ধরে তার কোনও কাজই হয়নি। পুরমন্ত্রী জানান, চলতি মাসেই এডিবি-র ঋণ দেওয়ার মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। পাম্পের কাজ আদৌ না-হওয়ায় ৪৮ কোটি টাকাই ফেরত চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সেই কারণে এডিবি-কে আবেদন জানানো হচ্ছে, ঋণের মেয়াদ যেন আরও এক বছর বাড়িয়ে দেওয়া হয়। |