ইতালি-ইংল্যান্ড ম্যাচে মাঝ মাঠ থেকে একটু এগিয়ে গিয়ে পির্লো কী ভাবে পাসটা ডি নাতালেকে বাড়াল দেখেছিস?
জামতলা মোড় থেকে একটু এগিয়ে রাস্তার পাশে একজন হাত নেড়ে কথা বলছেন। তাঁর সামনে বসে থাকা এক ঝাঁক তরুণ মন দিয়ে শুনছেন তাঁর কথা। দূর থেকে দেখলে কে বলবে, রোজকার মতো চলছে সান্ধ্য আড্ডা। বরং মনে হবে রীতিমত ক্লাস চলছে। ঘটনাটা হল, সত্যিই ফুটবলেরই ক্লাস চলছে। ইউরো কাপে কে কেমন গোল করল, কার পায়ে কেমন জাদু, ফ্রি কিকেই বা ওস্তাদ কে-এ সব নিয়েই চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। হাতলওয়ালা হলুদ চেয়ারে বসে কথা বলতে বলতে রীতিমত উত্তেজিত হয়ে পড়েছেন করিমপুরের বিগত আঞ্চলিক ক্রীড়া সংস্থার সদস্য সুজিত বিশ্বাস। সামনে টুল কিংবা বেঞ্চে বসে অনেকে।
ইউরো কাপ নিয়ে সেই আলোচনায় বসেই সৌগত রায় বললেন, “সত্যি কথা বলতে কী, ইউরো কাপ যেন ফুটবল খেলোয়াড়দের কাছে একটা শিক্ষার কেন্দ্রই।” তিনি জানান, সমীর নাসরি গোলে শট নেওয়ার সময়ে রিবেরি কী ভাবে গোলকিপারকে আড়াল করলেন সেটা তরুণ খেলোয়াড়দের কাছে শিক্ষনীয়। বল ছাড়াও যে কত ভাবে খেলা যায়, ফুটবল যে কী ভাবে শিল্প হয়ে ওঠে, তা ইউরো কাপ থেকেই তো শেখার কথা।
ইউরো কাপ এল কখন? এক দিকে প্রচন্ড গরমে যখন মাঠে অনুশীলন করতে পারছেন না এলাকার ফুটবলাররা। অন্য দিকে জেলা ক্রীড়া সংস্থা ভেঙে যাওয়ার ফলে লিগের খেলাও অনিশ্চিত। ঠিক সেই সময়েই সীমান্তের প্রত্যন্ত গ্রামের অনামি ফুটবলাররা শিখে নিচ্ছেন ফুটবলের সব নতুন পাঠ। সৌজন্যে ইউরো কাপ। সুজিতবাবু বলেন, “এখন প্রায় সব বাড়িতেই টিভি রয়েছে। পৌঁছে গিয়েছে কেবল চ্যানেলও। ফলে সকলেই খেলা দেখছেন। কেউ কেউ আবার নিজের বাড়িতে বন্ধু বান্ধব ডেকে নিয়ে একসাথে খেলা দেখছেন। এখনকার প্রজন্ম অনেক কিছু শিখছে। এটা কিন্তু বিরাট প্রাপ্তি। পরের দিন সেই খেলা নিয়ে চলছে নানা ধরনের আলোচনা, বিশ্লেষণ এতে সকলেরই লাভ হচ্ছে’’ করিমপুর আঞ্চলিক ক্রীড়া সংস্থার বিগত সম্পাদক দীপঙ্কর সাহা বলেন, “কত কিছু নিখুঁত ভাবে শিখছি বলুন তো? কত অজানা জিনিস জানতে পারছি। ইউরো কাপটাকে যেন কেউ নিছক বিনোদন হিসাবে না নেন। প্রতিটি মূহূর্তে অজস্র জিনিস শেখার আছে সেগুলো খুঁটিয়ে দেখে রপ্ত করতে পারলে নিজের দক্ষতা বহুগুণ বাড়ানো যাবে।” ১৯৮০-৯১ সাল করিমপুর এলাকায় দাপুটে গোলরক্ষক হিসাবে পরিচিত ছিলেন দীপঙ্করবাবু। তিনি বলেন, “বাড়িতে বসেই দেখা যাচ্ছে রোনাল্ডো, মুলারদের খেলা। ইউরো কাপ গ্রাম বাংলার ছেলেদের কাছে শুধু খেলা নয়, বলা যেতে পারে আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ।” করিমপুর নবারুণ সংঘের সুব্রত সর্দার, জয়লাল সেখ কিংবা যমশেরপুর ক্লাবের বনি আমিন শেখ জানান, তাঁরা খেলা দেখার পরে সবার সঙ্গে বসে আলোচনাও করছি। |