|
|
|
|
চার পুরসভাতেই কাজে পিছিয়ে বাম-বিরোধীরা |
অভিজিৎ চক্রবর্তী • ঘাটাল |
দু’বছর হতে চলল। পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল মহকুমার চারটি পুরসভাতেই উল্লেখযোগ্য কোনও কাজ করতে পারল না তৃণমূল-কংগ্রেস জোট। উল্টে যে অভিযোগ নিয়ে পুরভোটের আগে সিপিএমের বিরুদ্ধে সরব হয়ে ক্ষমতায় এসেছিল, এখন সেই ‘দুর্নীতি’ আর ‘পক্ষপাতিত্বে’ই অভিযুক্ত তারা। ঘাটাল, রামজীবনপুর, খড়ার থেকে চন্দ্রকোনাসর্বত্রই পুরবোর্ডের কাজকর্মে যারপরনাই ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। পুরবাসীর অভিযোগ, নিজেদের মধ্যে কোন্দলেই ব্যস্ত কাউন্সিলরেরা। তার জেরে থমকে গিয়েছে কাজকর্ম। ‘পরিবর্তনে’র পরেও বন্ধ হয়নি ‘স্বজনপোষণ’ আর ঠিকাদারদের সঙ্গে গোপন আঁতাত। সদ্য হলদিয়া পুরভোটে দলের বিপর্যয়ের পর ঘাটালের চার পুরসভা নিয়েও উদ্বেগ ছড়িয়েছে তৃণমূল-শিবিরে। নিজেদের শুধরে আগামী তিন বছরে কাজকর্ম না করলে পুরসভা দখলে রাখা যে শক্ত হবেতা-ও একান্তে মানছেন কংগ্রেস-তৃণমূল নেতাদের কেউ কেউ।
২০১০ সালের পুর-নিবার্চনে দীর্ঘ দিন পর খড়ার পুরসভা তৃণমূলের দখলে আসে। রামজীবনপুর পুরসভায় অবশ্য আগে থেকেই ক্ষমতায় ছিল কংগ্রেস-বিজেপি-তৃণমূলের মহাজোট। সেই ক্ষমতা ধরে রাখতে সক্ষম হয় তারা। চন্দ্রকোনা ও ক্ষীরপাই পুরসভা সিপিএম পেলেও পরে সিপিএমের কাছ থেকে চন্দ্রকোনা পুরসভাটিকে ছিনিয়ে নেয় তৃণমূল। ঘাটালে ভোটের সময় কংগ্রেস ও তৃণমূলের মধ্যে জোট হয়নি। পরে অবশ্য দু’দল জোট করেই পুরবোর্ডের দখল নেয়।
কিন্তু সেই জোট শুধু নামেই। দু’দলের বিবাদ ক্রমশ বাড়ছে। বোর্ড-মিটিং বয়কট থেকে শুরু করে কংগ্রেসের চেয়ারম্যানের সঙ্গে অসহযোগিতাতৃণমূলের একাংশের বিরোধিতায় জোট-শরিকদের পারস্পরিক সম্পর্কে তিক্ততাই বেড়ে চলেছে ঘাটালে। যার প্রভাব পড়ছে উন্নয়নের কাজেও। তৃণমূলের জেলা-স্তরের নেতারা এসে জোড়াতালি দিতে চাইলেও সম্পর্ক জোড়া লাগছে না। ভোটের আগে রাস্তা-ঘাট, পানীয় জল, বিদ্যুৎ-সহ ন্যূনতম নাগরিক পরিষেবাগুলি নিশ্চিত করা ছাড়াও প্রতিটি ওয়ার্ডে পার্ক, অল্প খরচে চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল, শিলাবতী নদীর দু’পাড়কে সাজিয়ে তোলা, নদীতে সেতু তৈরি-সহ হাজারো প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন কংগ্রেস ও তৃণমূলের নেতা ও প্রার্থীরা। জোট ক্ষমতায় আসার পরে অবশ্য ঘাটালে রাস্তা, পানীয় জলের সাধারণ কিছু কাজ ছাড়া কিছুই হয়নি। যেটুকু কাজ হয়েছে, তা-ও পছন্দের ঠিকাদারদের দিয়ে করিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
অন্য দিকে, পরপর দু’বার ক্ষমতায় এসেও রামজীবনপুর পুরসভায় মহাজোট নজরকাড়া কোনও কাজ করতে পারেনি বলেই অভিযোগ। শহরের ঐতিহ্যবাহী তাঁত ও কাঁসাশিল্পীদের জন্য কিছুই করা হয়নি। একটি হাসপাতাল তৈরি হলেও এখনও চালু হয়নি। আর প্রায় ৭ বছর ধরে বাসস্ট্যান্ডের কাজ চলছে তো চলছেই। অভিযোগ, তৃণমূলের চেয়ারম্যান শিবরাম দাস একাই চালাচ্ছেন পুরসভাটি। বিজেপি ও কংগ্রেসের কাউন্সিলরদের সঙ্গে মনোমালিন্য লেগেই রয়েছে। ঠিকাদারি নিয়ে নানা অনিয়মের গুঞ্জনও রয়েছে। চেয়ারম্যান শিবরাম দাসের প্রাসাদোপম বাড়ি তৈরি নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। যদিও শিবরামবাবু বলেন, “আমার ভাই ও স্ত্রী চাকরি করেন। মা পেনশন পান। এর পরেও বাড়ি না হওয়ার কী আছে?”
একই রকম ভাবে দলবাজির অভিযোগ উঠেছে খড়ার পুরসভাতেও। ভোটের আগে দেওয়া প্রতিশ্রুতি যেমন রক্ষা হয়নি, তেমনই বিরোধী ওয়ার্ডগুলিকে উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত করে রাখা হয়েছে বলে সিপিএমের অভিযোগ। পুরসভার ১০টি ওয়ার্ডের মধ্যে তৃণমূল ৬টিতে জিতে ক্ষমতা দখল করেছিল। কিন্তু দু’বছরেও তেমন কিছু কাজ না করতে পারায় সমর্থকদের মধ্যেই ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। নিজেদের মধ্যেও কোন্দল রয়েছে। তার প্রভাব পড়ছে উন্নয়নে। চেয়ারম্যান উত্তম মুখোপাধ্যায় স্কুলের প্রধান শিক্ষক হওয়ায় সব সময়ে পুরসভায় তাঁকে পাওয়াও যায় না বলে অভিযোগ। শহর থেকে আধ কিলোমিটার দূরে বাসস্ট্যান্ড নির্মাণ নিয়েও ক্ষোভ বাড়ছে পুরবাসীর মধ্যে। |
|
|
|
|
|