শিক্ষকের নাবালিকা মেয়ের বিয়ে আটকাল প্রশাসন
মাজকে আলো দেখানোর গুরুদায়িত্ব যাঁর কাঁধে, সেই শিক্ষকই নাবালিকা মেয়ের বিয়ে দিতে গিয়েছিলেন। কিন্তু বিয়েটা শেষ পর্যন্ত হয়নি। বুধবার দুপুরে খবর পেয়ে বিয়ে আটকে দিলেন উলুবেড়িয়ার মহকুমাশাসক সুজয় আচার্য। শুধু তাই নয়, রাতে যাতে গোপনে বিয়ের আয়োজন করা না হয়, তা দেখার জন্য সারারাত পুলিশের নজরদারিও চলল। যাঁর সঙ্গে ওই নাবালিকার বিয়ে ঠিক হয়েছিল তিনি দমকলের কর্মী।
উলুবেড়িয়া মহকুমা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রের খবর, পুরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের বাবুপাড়ার বাসিন্দা প্রসেনজিৎ পাল চেঙ্গাইলের একটি হাইস্কুলের শিক্ষক। তাঁর মেয়ে স্থানীয় লতিবপুর হাইস্কুল থেকে এ বছরে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। তার বয়স ১৮ বছরের নীচে। তা সত্ত্বেও প্রসেনজিৎবাবু মেয়ের বিয়ে ঠিক করেন উলুবেড়িয়ারই বাগান্ডার দিব্যেন বাগের সঙ্গে। তিনি চাকরি করেন দমকলে।
কয়েকদিন ধরে বিয়ের আয়োজন চলছিল। বুধবার সকালের মধ্যেই আয়োজন সম্পূর্ণ হয়ে যায়। বাড়ির সামনে বিশাল প্যান্ডেল বাঁধা হয়। বিপুল খাওয়া-দাওয়ারও আয়োজন হয়। কিন্তু সব উদ্যোগ ভেস্তে যায় দুপুরে বিয়েবাড়িতে এক জন ম্যাজিস্ট্রেট এবং পুলিশ হানা দেওয়ায়।
উলুবেড়িয়ার সেই বিয়েবাড়ি। ছবি: হিলটন ঘোষ
মহকুমাশাসক বলেন, “আমাকে টেলিফোনে এক ব্যক্তি খবর দেন বাবুপাড়ায় এক শিক্ষক তাঁর নাবালিকা মেয়ের বিয়ের আয়োজন করেছেন। সঙ্গে সঙ্গে আমি এক জন ম্যাজিস্ট্রেট এবং পুলিশ পাঠিয়ে ওই শিক্ষক এবং তাঁর মেয়েকে ডেকে আনি।”
জিজ্ঞাসাবাদের উত্তরে মহকুমাশাসকের কাছে প্রসেনজিৎবাবু কবুল করেন তাঁর মেয়ের বয়স ১৮ বছরের নীচে। তা হলে কেন তিনি মেয়ের বিয়ে দিচ্ছেন? মহকুমাশাসকের প্রশ্নের উত্তরে প্রসেনজিৎবাবু দাবি করেন, পাড়ার কিছু ছেলে তাঁর মেয়েকে নিয়মিত বিরক্ত করছে। সেই কারণেই ভাল পাত্র পেয়ে যাওয়ায় তিনি মেয়ের বিয়ে ঠিক করে ফেলেছিলেন। মহকুমাশাসক এই বিয়ে বন্ধ করার জন্য তাঁকে নির্দেশ দেন। নির্দেশ মানা না হলে প্রসেনজিৎবাবুর বিরুদ্ধে যে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে, সে কথাও তাঁকে জানিয়ে দেন মহকুমাশাসক। এ কথা শুনেই প্রসেনজিৎবাবু লিখিত ভাবে মহকুমাশাসককে মেয়ের বিয়ে বাতিল করছেন বলে জানিয়ে দেন।
প্রসেনজিৎবাবুর কাছ থেকে পাত্রের বিবরণ পেয়ে মহকুমাশাসক দমকলের অধিকর্তার সঙ্গেও কথা বলেন। মহকুমাশাসকের কথায়, “দমকলের অধিকর্তাকে পাত্রের বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে অনুরোধ করি ওই পাত্র যদি বিয়ে করেন তা-হলে তাঁর বিরুদ্ধেও যেন দমকল বিভাগের পক্ষ থেকে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়।” এক জন সরকারি কর্মী হয়ে আপনি কী করে নাবালিকা বিয়ে করতে গিয়েছিলেন? পাত্র দিব্যেন বাগ বলেন, “পাত্রী যে নাবালিকা তা জানতাম না। আমি এ জন্য অনুতপ্ত।”
বুধবার রাতে প্রসেনজিৎবাবুর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, প্যান্ডেল বাঁধা হয়েছে। আলো জ্বলছে। কিছু নিমন্ত্রিতও হাজির হয়েছেন। কিন্তু মেয়ের বিয়ে ভেস্তে যাওয়ায় বিমর্ষ হয়ে ঘুরছেন প্রসেনজিৎবাবু। তিনি বললেন, “মেয়ের ১৮ বছর বয়স হতে মাত্র ৪ মাস দেরি আছে। তা ছাড়া এই বিয়ে তো আর রেজিস্ট্রি করে হচ্ছে না। কেউ নিশ্চয় শত্রুতা করে মহকুমাশাসককে খবর দিয়েছেন। তবে মহকুমাশাসকের নির্দেশ অমান্য করা সম্ভব নয়। তাই বিয়ে বাতিল করি।” তাঁর মেয়ে বলে, “আমার মত নিয়েই বাবা বিয়ে ঠিক করছিলেন। পাড়ার ছেলেরা আমায় বিরক্ত করছিল বলে আমিই বাবাকে বিয়ে ঠিক করতে বলেছিলাম।” মহকুমাশাসক বলেন, “কোনও অবস্থাতেই বেআইনি কাজ বরদাস্ত করা হবে না।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.