সম্পাদকীয় ২...
সংখ্যাগুরুর জাতীয়তা
ক্ষিণ-পশ্চিম মায়ানমারে বাংলাদেশ সংলগ্ন রাখিন প্রদেশে বৌদ্ধ বর্মিদের সহিত মুসলিম রোহিঙ্গিয়াদের দাঙ্গা ও হানাহানি, হত্যা, অগ্নিসংযোগ ও লুঠতরাজ চরমে উঠিয়াছে। এই প্রদেশে প্রায় ৮ লক্ষ রোহিঙ্গিয়ার বাস। মায়ানমার তাঁহাদের বেআইনি অনুপ্রবেশকারী বলিয়া গণ্য করিয়া থাকে। বাংলাদেশ সরকারও তাঁহাদের নাগরিক মানিতে নারাজ। তাই বঙ্গভাষী এই মুসলিম জনগোষ্ঠী যখনই সমুদ্রপথে নৌকাযোগে বাংলাদেশে আশ্রয় লওয়ার চেষ্টা করিয়াছেন, বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী তৎক্ষণাৎ তাঁহাদের ফেরত পাঠাইয়াছে, গত রবিবারও তাহা ঘটিয়াছে। অন্য দিকে নাগরিক বলিয়া স্বীকার না করায় মায়ানমারের সরকার কিংবা বিচারব্যবস্থার কাছেও তাঁহারা নির্যাতনের কোনও প্রতিকার পান নাই। অতীতেও যখনই দুই জনগোষ্ঠীর মধ্যে হানাহানি ঘটিয়াছে, রোহিঙ্গিয়ারাই হতাহত ও ক্ষতিগ্রস্ত হইয়াছেন বেশি। এ বারের হানাহানি বন্ধ করিতে মায়ানমার সরকার জরুরি অবস্থা জারি করিয়াছে। তথাপি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার লক্ষণ নাই।
মায়ানমার যখন দীর্ঘ ফৌজি শাসনের পর গণতান্ত্রিক সংস্কারের পথে দ্বিধাগ্রস্ত পদক্ষেপ করিতেছে, তখনই জনজাতীয় সংঘর্ষের এই বিস্ফোরণ তাহার ভবিষ্যতের পক্ষে সুসমাচার নয়। সংঘর্ষের আশু কারণ যাহাই হোক, ইহাকে উপলক্ষ করিয়া রোহিঙ্গিয়াদের প্রতি যে তীব্র ঘৃণা ও বিদ্বেষ স্ফুট হইয়াছে, তাহা বেদনাদায়ক। তাঁহাদের ‘সন্ত্রাসবাদী’ তকমা দাগিয়া দেওয়া হইয়াছে, মায়ানমার ছাড়িবার হুমকি দেওয়া হইতেছে। অথচ রোহিঙ্গিয়ারাই এ দেশে একমাত্র অ-বর্মি জনজাতি নয়। কাচিন ও কারেন জনজাতিরা রহিয়াছে, যেমন আছে তাহাদের সশস্ত্র, প্রশিক্ষিত, বিচ্ছিন্নতাকামী গেরিলা বাহিনী। রোহিঙ্গিয়াদের কিন্তু কোনও সংগঠন নাই, মার-খাওয়া এই ভাগ্যহত শরণার্থীরা দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের দ্বারা পালা করিয়া বহিষ্কৃত হওয়ার এবং কোথাওই থিতু হইতে না-পারার ঐতিহাসিক নিয়তি লইয়া প্রজন্মপরম্পরায় রাষ্ট্রপরিচয়হীন নাগরিকের ভবিতব্য শিরোধার্য করিয়া চলিয়াছে। মায়ানমারের বিরোধী নেত্রী এবং গণতান্ত্রিক উজ্জীবনের প্রাণপ্রতিমা আউং সান সু চি-ও এখনও পর্যন্ত রোহিঙ্গিয়াদের প্রতি সংঘটিত অনাচারের প্রতিকারে কোনও কঠোর অবস্থান লন নাই। তবে আন্তর্জাতিক বিশ্ব, বিশেষত গণতান্ত্রিক পশ্চিম নড়িয়া বসিয়াছে।
মায়ানমারের প্রেসিডেন্ট থাইন সেইন বিলক্ষণ জানেন, এ ধরনের জনজাতীয় হানাহানি তাঁহার সরকারের সংস্কার প্রয়াসকে শেষ পর্যন্ত বানচাল করিয়া দিতে পারে। কেননা ইহা প্রশমিত না হইলে দেশের অন্যান্য প্রান্তে যে সকল জনজাতির সহিত বর্মি জাতিসত্তার বৈরমূলক উত্তেজনা মজুত, সেগুলিরও বিস্ফোরিত হওয়ার আশঙ্কা। তিনি তাই কোনও ঝুঁকি না লইয়া এই উত্তেজনা প্রশমনের জন্য পত্রপাঠ কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করিয়াছেন। ইহা অবশ্যই আশাব্যঞ্জক। কিন্তু রোহিঙ্গিয়াদের সমস্যা কেবল প্রশাসনিক নয়, ইহা দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ-জাতীয়তার অহমিকা ও আগ্রাসী মনোভাবের পরিচিত সমস্যা। দেশ যখন গণতন্ত্রের পথে হাঁটিতেছে, তখন এই জাতীয় ‘ক্ষুদ্র জাতীয়তা’-কে কঠোর ভাবে দমন করাই বিধেয়। যখন জাতির নবনির্মাণ ঘটে, তখন কী ভাবে সংখ্যালঘুদের স্বার্থ রক্ষা করিতে হয়, তাহা শিখিতে হইলে জওহরলাল নেহরু অবিস্মরণীয়।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.