রেলের নিরাপত্তাব্যবস্থার হাল ফেরাতে অর্থ চেয়ে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের দ্বারস্থ হলেন মুকুল রায়। ‘রেল নিরাপত্তা তহবিল’ খাতে কেন্দ্র দাবি মতো এককালীন ওই টাকা মঞ্জুর করলে দশ বছর ধরে তা সার্বিক পরিকাঠামোগত উন্নয়ন ও সুরক্ষাখাতে ব্যবহার করার পরিকল্পনা নিয়েছে মন্ত্রক। তবে এর জন্য আগামী দিনে ট্রেনের টিকিটে সুরক্ষা ‘সেস’ বসানো হবে না বলেও মন্ত্রক সূত্রে জানানো হয়েছে।
দেশে পরিকাঠামো সংক্রান্ত প্রকল্প রূপায়ণের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করতে বুধবার বিভিন্ন মন্ত্রকের বৈঠক ডেকেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সড়ক ও জাহাজ মন্ত্রকের মন্ত্রীরা বৈঠকে উপস্থিত থাকলেও মথুরাতে বিধানসভা উপনির্বাচনের প্রচারে ব্যস্ত থাকায় থাকতে পারেননি মুকুল। রেলমন্ত্রক সূত্রে জানানো হয়েছে, সেই কারণে পরে প্রধানমন্ত্রীর কাছে সময় চেয়েছিলেন মুকুল। আজ দু’পক্ষের মধ্যে যে বৈঠক হয় তাতে রেলের বিভিন্ন প্রকল্পের দ্রুত রূপায়ণে জোর দেওয়া ছাড়াও নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে মুকুল রেলের সার্বিক সুরক্ষা ও আধুনিকীকরণের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর কাছে অর্থের দরবার করেন। তবে কী পরিমাণ অর্থ চাওয়া হয়েছে তা নিয়ে মুখ খোলেননি কোনও রেল কর্তাই। তবে মন্ত্রক ইঙ্গিত দিয়েছে, এর আগে বাজপেয়ী জামানায় নীতীশ কুমার রেলমন্ত্রী থাকাকালীন ১৭ হাজার কোটি টাকা নিরাপত্তা খাতে দেওয়া হয়েছিল। এইবার মন্ত্রকের দাবি অন্তত পঁচিশ হাজার কোটি টাকা।
তবে এনডিএ আমলে রেলকে যে অর্থ সাহায্য দেওয়া হয়েছিল, সেই টাকা তুলতে টিকিটে সুরক্ষা সেস বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন নীতীশ। ফলে যাত্রিভাড়া কিছুটা হলেও বৃদ্ধি পায়। কিন্তু বর্তমান রেলমন্ত্রী কোনও ভাবেই দলের নীতি ভেঙে যাত্রিভাড়া বাড়ানোর রাস্তায় হাঁটতে চান না। তাই প্রশ্ন উঠেছে, প্রধানমন্ত্রী আজ সাহায্যের বিষয়ে আশ্বাস দিলেও টিকিটে সুরক্ষা সেস না বসলে কি কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রক বা যোজনা কমিশন রেলকে এই অনুদান দেওয়ার বিষয়ে আদৌও সবুজ সংকেত দেবে। যাত্রিভাড়া বাড়ানো উচিত বলে স্বীকার করে নিয়েও রেলমন্ত্রক কিন্তু ব্যাখ্যা দিচ্ছে, সড়ক পরিবহণমন্ত্রক বা বিমানমন্ত্রকের আধুনিকীকরণে যে পরিমাণ অর্থ কেন্দ্র দিয়ে থাকে, তার সিকি ভাগও পায় না রেল। তাই নিরাপত্তা খাতে রেলকে এই অর্থ দিয়ে সাহায্য করুক কেন্দ্র।
কয়েক বছরে যে ক’টি রেল দুর্ঘটনা ঘটেছে সেগুলির কারণ হিসাবে সুরক্ষাব্যবস্থায় বড়সড় ফাঁককে দায়ী করেছে তদন্ত কমিটি। অর্থের অভাবে বন্ধ আধুনিকীকরণের কাজও। তাই প্রাক্তন রেলমন্ত্রী দীনেশ ত্রিবেদী রেলের নিরাপত্তাব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে কমিটি গঠন করেন। পরমাণু শক্তি কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান অনিল কাকোদকর রিপোর্টে জানান, রেল-নিরাপত্তাব্যবস্থা উন্নত করতে প্রায় এক লক্ষ কোটি টাকার প্রয়োজন। আর্থিক ভাবে দীর্ণ রেলের পক্ষে এখন ওই অর্থ বিনিয়োগ করা অসম্ভব। রেলের এক কর্তা বলেন, “কাকোদকরের রিপোর্ট অনুযায়ী অর্থ না পেলেও মন্ত্রকের দাবি কেন্দ্র অন্তত এককালীন কিছু অর্থ দিক যাতে নিরাপত্তা সংক্রান্ত আধুনিকীকরণের কাজ করা সম্ভব হয়।” তবে যে ভাবে রেল সুরক্ষা সেস বাড়াতে অনিচ্ছুক, তাতে আদৌও ওই অর্থ কেন্দ্র মঞ্জুর করবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে মন্ত্রকের মধ্যেই। |