রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ইউপিএ প্রার্থীর নাম নিয়ে দিনভর নাটকের পর ‘সতর্ক’ বিজেপি ঘোলা জলে মাছ ধরতে নেমে পড়েছে। সনিয়া গাঁধীর প্রস্তাবিত দু’টি নাম খারিজ করে মুলায়ম সিংহ যাদব ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে তিনটি নাম সামনে এনেছেন, কংগ্রেসকে আরও বিপাকে ফেলতে তার মধ্যে এ পি জে আব্দুল কালামকে সামনে রেখেই এগোতে চাইছেন বিজেপি নেতৃত্ব। তবে প্রধানমন্ত্রীর নাম তুলে আনার পিছনে কংগ্রেস নেতৃত্বের কোনও সুগভীর কৌশল রয়েছে কি না সেটাও বুঝে নিতে চাইছেন বিজেপি নেতৃত্ব। ফলে কংগ্রেসের প্রতিক্রিয়া জানার আগে প্রকাশ্যে অন্তত কোনও অবস্থান নিচ্ছে না বিজেপি। প্রকাশ্যে ঘোষণা করছে না কালামের নামও।
কংগ্রেস ও তার শরিক-সহযোগী দলের কৌশল বুঝে নিতেই সতর্ক পদক্ষেপ করতে চাইছে কেন্দ্রের প্রধান বিরোধী দল। আজ মুলায়ম-মমতার ঘোষণার পরেই বিজেপি সভাপতি নিতিন গডকড়ীর বাড়িতে দলের কোর গ্রুপের বৈঠক হয়। ছিলেন সুষমা স্বরাজ, অনন্ত কুমার, রাজনাথ সিংহ, মুরলীমনোহর জোশীরা। অরুণ জেটলি বিদেশে। আর লালকৃষ্ণ আডবাণী চেন্নাইয়ে। দু’জনের সঙ্গেই ফোনে আলোচনা করেন গডকড়ী। দলীয় সূত্রের খবর, আগামী কাল জয়ললিতার সঙ্গে কালামকে নিয়ে কথা বলবেন আডবাণী। এডিএমকে নেত্রী ও নবীন পট্টনায়ক আগেই পূর্ণ এ সাংমার সমর্থনে ময়দানে নেমেছিলেন। পাল্টে যাওয়া পরিস্থিতিতে সাংমাকে বোঝানোর জন্য জয়ললিতাকেই অনুরোধ করতে পারেন আডবাণী। |
রাষ্ট্রপতি নির্বাচন |
মোট ভোটমূল্য
১০.৯৮ লক্ষ |
জয়ের জন্য চাই
৫.৫০ লক্ষ |
দলগত শক্তি |
ইউপিএ* |
সহযোগী |
কংগ্রেস
৩.৩০ লক্ষ (৩০%)
তৃণমূল
৪৮,০৪৯ (৪.৩%) |
সপা
৬৮,৮১২ (৬.২%)
বসপা
৪৩, ৩৪৯ (৩.৯%) |
ইউপিএ+ ৫.৭২ (৫২%) |
এনডিএ ৩.০৫ লক্ষ (২৮%)
চার বাম দল ৫১,৬৮২ (৫%)
নির্দল ও ছোট দল ৭১,৪৯৮ (৬%) |
* সব শরিককে নিয়ে ইউপিএ-র মোট ভোট ৪.৬০ লক্ষ (৪২%) |
|
কোর গ্রুপের বৈঠকের পর অনন্ত কুমার জানান, “মুলায়ম-মমতার প্রস্তাবিত ৩টি নাম নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। এ ব্যাপারে কংগ্রেস প্রথমে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করুক। তার পর এনডিএ-র বৈঠক ডেকে আমরা আমাদের অবস্থান জানাব।” কিন্তু বিজেপি-র শীর্ষ সূত্রের মতে, কালামের নাম আগেই প্রস্তাব করেছিলেন মুলায়ম। সেই সময়ই স্থির হয়েছিল, ইউপিএ-র শরিক বা সমর্থক দলের কেউ কালামের মতো ‘গ্রহণযোগ্য’ কোনও নাম প্রস্তাব করলে বিজেপি তাঁকে সমর্থন করবে। বিজেডি, এডিএমকে-র মতো এনডিএ-র বাইরের দলগুলিকেও সঙ্গে নেওয়া হবে। কিন্তু আগ বাড়িয়ে বিজেপি সেই নাম প্রস্তাব করবে না। পাছে বাকি দলগুলির সমর্থন পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়ে। তখনই ভাবা হয়েছিল, পরিবর্তে উপরাষ্ট্রপতি পদে বিজেপি-র প্রার্থীর জন্য সমর্থন চাওয়া হতে পারে ‘বৃহত্তর’ এনডিএ-র দলগুলির কাছে। সুধীন্দ্র কুলকার্নির মতো নেতারা এখন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিচ্ছেন এ ব্যাপারে।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে ঘিরে বিজেপি নেতৃত্বের কৌশলই হল, লোকসভা ভোটের আগে কংগ্রেসকে যতটা সম্ভব দুর্বল করা, এনডিএ-র বিস্তার ঘটানো। মমতা-মুলায়মের ঘোষণায় কংগ্রেসকে বেগ দেওয়ার সুবর্ণ সুযোগটা পেয়ে গিয়েছে বিজেপি। সে কারণে কালামের নামে সমর্থন জোটানোর কাজও শুরু করে দিয়েছে তারা। কালাম জানিয়েছিলেন, একমাত্র সর্বসম্মত প্রস্তাব হলেই তিনি প্রার্থী হবেন। কিন্তু বিজেপি-র এক শীর্ষ নেতার কথায়, “কোনও রাষ্ট্রপতি নির্বাচনই সর্বসম্মত হয় না। কালাম রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন নির্বাচনে জিতেই। এ বারেও তাঁকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেই জিতে আসতে হবে।” আজ সন্ধ্যায় নাম-ঘোষণার নাটকীয় সাংবাদিক বৈঠকের পরই মমতা ও মুলায়ম কালামের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁকে বুঝিয়েছেন, যাতে ‘সবর্সম্মত’ প্রার্থী হওয়ার প্রশ্নে তিনি অনড় না থাকেন। বিশেষ করে যেখানে গোটা এনডিএ-র সমর্থনই পাবেন তিনি।
কিন্তু আজ দিল্লিতে ঘটনার ধারা দেখে অন্য গন্ধেরও আঁচ পাচ্ছে বিজেপি। তাদের ধারণা, প্রণববাবুকে আটকানোর জন্য মমতার অনুরোধে সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের নাম প্রস্তাব করেছেন মুলায়ম। কিন্তু ৩টির মধ্যে উল্লেখযোগ্য নামটি অবশ্যই মনমোহন সিংহ। বিজেপি নেতারা মনে করছেন, দুর্নীতি-মূল্যবৃদ্ধির জাঁতাকলে সরকার যে ভাবে জেরবার হচ্ছে, তাতে মনমোহনকে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে সরাতে চাইছেন সনিয়াই। সেটা করার সব থেকে সম্মানজনক পথ হল তাঁকে রাষ্ট্রপতি করা। মুলায়মকে দিয়ে আজ সেই কাজটিই করালেন সনিয়া। সঙ্গে মমতাকেও নিলেন তিনি। কিন্তু কংগ্রেস কখন কী করে, তার উপরে ভরসা নেই মুলায়মের। সে কারণেই সুকৌশলে কালামের নামটিও যোগ করে দিয়েছেন, যাতে গোটা এনডিএ-রই সমর্থন পাওয়া যায় প্রয়োজনে। একপ্রস্ত কথা বলেছেন এনডিএ-র আহ্বায়ক শরদ যাদবের সঙ্গেও।
বিজেপি-র এক নেতার কথায়, গত কাল এক ঘণ্টার ব্যবধানে দেখা করার কথা থাকলেও যশোবন্ত সিংহ ও যোগগুরু রামদেবের সঙ্গে বৈঠকের সময় একসঙ্গে করে দেন মুলায়ম। যাতে যশোবন্তের সঙ্গে তাঁর বৈঠকও ভাল প্রচার পায়। কংগ্রেসকে মুলায়ম বার্তা দিলেন যে, বিজেপি-র সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছেন তিনি। তবে সতর্ক বিজেপি এ-ও বুঝে নিতে চায়, দু’দিক খুলে রাখতে এটা মুলায়মের চাল কি না। বিজেপি আপাতত তাই এইটুকু বলেই ক্ষান্ত হয়েছে যে, কংগ্রেস আগে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করুক। |