প্রণবে আপত্তি মমতার, উঠে এলেন কালাম
রাইসিনা হিলস-এর জন্য দৌড় এক নাটকীয় মোড় নিল।
আজ বিকেলে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকে কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী জানালেন, রাষ্ট্রপতি পদে তাঁর প্রথম পছন্দ প্রণব মুখোপাধ্যায়, দ্বিতীয় পছন্দ উপরাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারি। কিন্তু সেই বৈঠকের
বিকেল ৪.৩০ ১০ জনপথে
মমতা। সনিয়ার সঙ্গে বৈঠক।
দেড় ঘণ্টার মধ্যেই সমাজবাদী পার্টির নেতা মুলায়ম সিংহ যাদবের সঙ্গে বৈঠক সেরে সাংবাদিক সম্মেলনে তিনটি নাম তুলে ধরলেন মমতা: এ পি জে আব্দুল কালাম, মনমোহন সিংহ এবং সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়।
এবং সেই ঘোষণায় তৈরি হল চূড়ান্ত বিস্ময় ও রহস্য।
প্রথম প্রশ্ন হল, কেন আকস্মিক ভাবে উঠে এল মনমোহন সিংহের নাম? রাজধানীর রাজনীতির কারবারীদের কারও কারও মতে, এটা আসলে সনিয়ারই মোক্ষম চাল। দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের মাঝপথে বেহাল অর্থনীতি নিয়ে তীব্র ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। দিন কয়েক আগেই সরকারের নীতিপঙ্গুত্ব নিয়ে কংগ্রেসের বর্ধিত ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে দলীয় নেতাদের অসন্তোষের মুখে পড়েছেন মনমোহন। কংগ্রেসের অনেকেই বলছেন, ২০১৪ সালের ভোটের আগে ঘুরে দাঁড়াতে হলে ‘বড় ঝাঁকুনি’ দেওয়া দরকার। প্রধানমন্ত্রী বদল করা হলে ঝাঁকুনিটা সত্যি সত্যিই বড় মাপের হবে। আর সে জন্যই মুলায়ম-মমতাকে দিয়ে মনমোহনের ‘সম্মানজনক পুনর্বাসনের’ প্রস্তাব করালেন সনিয়া।
মমতা অবশ্য সনিয়ার কৌশলের কথা শুনে রীতিমতো রুষ্ট স্বরে বলছেন, “আপনারা কি এই কৃতিত্বটুকুও আমাদের দেবেন না? সব কৃতিত্বই কংগ্রেসের! মনমোহন সিংহের নাম আমি আর মুলায়ম সিংহজি মিলে আলোচনা করেই ঠিক করেছি।”
তৃণমূলের একটি সূত্রের দাবি, সনিয়ার সঙ্গে আলোচনাতেই প্রণব ও আনসারির নাম খারিজ করে দিয়ে মুলায়মের সঙ্গে মিলে কালাম, মনমোহন ও সোমনাথের নাম প্রস্তাব করার কথা জানিয়েছিলেন মমতা। সনিয়া নাকি তখন বলেন, কালামকে মেনে নেওয়া তাঁদের পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ আগের বার তিনি এনডিএ প্রার্থী হিসেবে রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন। আর মনমোহন প্রসঙ্গে তাঁর মন্তব্য ছিল: উনি কি রাজি হবেন? এই দাবি সত্যি হলে মনমোহনকে সরানোর ব্যাপারে সনিয়ার প্রচ্ছন্ন সমর্থন রয়েছে বলেই ধরে নিতে হয়।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে রাত পর্যন্ত এই প্রস্তাব নিয়ে রা কাড়েনি কংগ্রেস। যদিও প্রধানমন্ত্রী বদলের সম্ভাবনাকে সাধারণ অবস্থায় জোর গলায় খারিজ করে দেওয়াই স্বাভাবিক ছিল বলে ওয়াকিবহাল মহলের মত। প্রধানমন্ত্রী নিজে অবশ্য বলেছেন, তিনি যেখানে আছেন সেখানেই খুশি। শনিবার মেক্সিকো যাত্রাও বাতিল করেননি তিনি। কিন্তু কংগ্রেস মনমোহনকে প্রার্থী হওয়ার জন্য বোঝাতে পারে, এমন সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
৫.২০ বেরিয়ে মমতা বলেন, সনিয়ার
প্রথম পছন্দ প্রণব। তার পর আনসারি।
তবে মনমোহন রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী হলে তৎক্ষণাৎ আরও একটা সমস্যার সমাধান করতে হবে কংগ্রেসকে। তা হল, পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী কে হবেন? প্রণবের যে ওই পদে আসার সম্ভাবনা নেই সেটা বলাই বাহুল্য বলে কংগ্রেসের একটি অংশের মত। কারণ, দেশের প্রশাসনিক শীর্ষ পদের জন্য প্রণব যে তাঁর আস্থাভাজন নন, সেটা অনেক আগেই বুঝিয়ে দিয়েছেন সনিয়া। তা ছাড়া, রাষ্ট্রপতি পদে প্রণবকে না মানার পরে তাঁকে প্রধানমন্ত্রী পদে মমতা মেনে নেবেন তেমন সম্ভাবনাও সুদূর পরাহত।
রাহুলকে প্রধানমন্ত্রী করার দাবি কংগ্রেসের অন্দরে অনেক দিন ধরেই রয়েছে। রাহুল প্রধানমন্ত্রী হলে তা নিয়ে বিতর্কও হবে না। কিন্তু তিনি এখনই প্রধানমন্ত্রী হতে চান কিনা, বা সনিয়া তাঁকে এগিয়ে দিতে চান কিনা, সেটা অজানা। বিশেষ করে জটিল এই পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি কতটা সফল হবেন, তা নিয়েও দলের একাংশের মধ্যে সংশয় রয়েছে। মনমোহন যদি সরেন তা হলে সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দশ জনপথের আস্থাভাজন প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ কে অ্যান্টনির কথা বলছেন অনেকে।
এই সব সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়ে যে নাটক শুরু হল তার যবনিকা ওঠে আজ বিকেল সাড়ে চারটেয়। যখন দশ জনপথে সনিয়ার সঙ্গে বৈঠক করতে পৌঁছন মমতা। প্রায় পঞ্চাশ মিনিট পরে বাইরে এসে সংবাদমাধ্যমকে কংগ্রেস সভানেত্রীর প্রস্তাব করা নাম দু’টি জানিয়েই মমতা সোজা চলে যান মুলায়মের বাড়ি। ওই দু’টি নামেই যে তাঁর আপত্তি রয়েছে, সে কথা জানান মুলায়মকে। প্রণবকে গোড়া থেকেই চাইছিলেন না মমতা। তাঁর বক্তব্য, গত এক বছর ধরে রাজ্যের বেহাল অর্থনৈতিক পরিস্থিতির জন্য বারবার দরবার করা সত্ত্বেও কিছুই করেননি কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। ফলে রাজ্যের দিকে সাহায্যের হাত বাড়াননি এমন এক জনকে সমর্থন করা তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। পাশাপাশি আনসারিকে সমর্থন করাও মমতার পক্ষে সম্ভব নয়, কারণ গত বার উপরাষ্ট্রপতি পদে তিনি ছিলেন বাম সমর্থিত প্রার্থী।
৫.৩০ ১৬ অশোক রোডে মুলায়মের বাড়িতে মমতা। বৈঠক শুরু দু’জনের।
আনসারির নামে গোড়া থেকে বিরোধিতা করে এসেছেন মুলায়মও। তাঁর যুক্তি, কোনও আমলা নয়, এক জন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকেই রাষ্ট্রপতি হিসেবে দেখতে চায় তাঁর দল। সেই একই যুক্তিতে মমতার প্রস্তাব করা গোপালকৃষ্ণ গাঁধীর নামও খারিজ করে দেন তিনি। মমতা লোকসভার স্পিকার মীরা কুমারের নাম প্রস্তাব করেছিলেন। কিন্তু তাঁকে নিয়েও আলোচনা এগোয়নি।
এই পরিস্থিতিতে কালাম, মনমোহন ও সোমনাথের নাম উঠে আসে আলোচনায়। (সপা সূত্রের দাবি মনমোহনের নাম মুলায়মই প্রস্তাব করেন। যা সনিয়ার কৌশলের তত্ত্বের নিরিখে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। কারণ, মুলায়ম রাজনীতি করেন অনেক অঙ্ক কষে।) কালাম রাজনীতির লোক না হলেও প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি হওয়ায় তাঁর নামে আপত্তি করেননি মুলায়ম। এর পর কালামের সঙ্গে কথা বলেন দুই নেতা-নেত্রী।
কালাম গোড়ায় এই প্রস্তাবে রাজি ছিলেন না। এক দফা রাষ্ট্রপতি পদে থাকার পরে ফের ভোটাভুটির পথে যেতে আপত্তি ছিল তাঁর। কালাম বলেন, তাঁর নাম নিয়ে ঐকমত্য হলে তবেই রাষ্ট্রপতি হওয়ার কথা ভাববেন। মমতা-মুলায়ম তাঁকে বলেন, ঐকমত্য তৈরির চেষ্টা তাঁরা করবেন। কিন্তু প্রয়োজনে ভোটেও লড়তে হতে পারে। সূত্রের খবর, প্রস্তাবটি ইতিবাচক ভাবেই দেখছেন কালাম। আগামিকাল তিনি তাঁর প্রতিক্রিয়া জানাবেন।
তা হলে, সোমনাথের নাম কেন তুললেন মমতা? অনেকের মতে, প্রণবের নাম খারিজ করায় দেশের শীর্ষপদে তিনি এক জন বাঙালিকে বসতে দিলেন না বলে অভিযোগ উঠতে পারে মমতার বিরুদ্ধে। সেই সম্ভাবনা খারিজ করতেই সোমনাথের নাম প্রস্তাব করেছেন তিনি। পাশাপাশি বামেদেরও বিপাকে ফেলে দিয়েছেন। কিন্তু আজ রাত পর্যন্ত সোমনাথের সঙ্গে কথা বলেননি মমতা বা মুলায়ম। লন্ডন থেকে নিজেই এ কথা জানিয়েছেন লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার।

সন্ধ্যা ৬.২০
মুলায়ম-মমতা যৌথ ঘোষণায় এল তিনটি নাম:
আব্দুল কালাম, মনমোহন সিংহ, সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়

আমি যেমন আছি, তাতেই খুশি।
মনমোহন সিংহ
রাত ৮.২০ বৈঠক শেষে বিজেপি বলল, আগে কংগ্রেস
নাম বলুক। তবে তলে তলে কালামের জন্য চেষ্টা।
কংগ্রেস কিন্তু চুপ। মনমোহনের নাম ওঠার
পরেও তারা তা খারিজ করে বিবৃতি দেয়নি।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে আজ প্রধানমন্ত্রী চাইলেও মমতা কিন্তু তাঁর সঙ্গে দেখা করতে যাননি। প্রকাশ্যে বলছেন, তিনি দিল্লি এসেছেন রাষ্ট্রপতির নাম স্থির করতে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর কাছে গেলেই বলা হবে, বিনিময়ে রাজ্যের জন্য আর্থিক প্যাকেজ আদায় করতে চাইছেন তিনি। কিন্তু এই প্রশ্নও উঠছে যে, রাষ্ট্রপতি পদে নাম প্রস্তাব করেছেন বলেই কি মমতা ‘প্রধানমন্ত্রী’ মনমোহনের সঙ্গে সাক্ষাৎ এড়িয়ে গেলেন?
পাশাপাশি এই পরিস্থিতিতে আগামিকাল দুপুরে কলকাতা না ফিরে আরও এক দিন দিল্লি থেকে যাওয়ার কথা ভাবছেন মমতা। এ দিকে পরশু বিদেশ যাওয়ার কথা সনিয়ার। তার আগে রাষ্ট্রপতি-জট কাটে, না সনিয়া-মনমোহন দেশে ফেরার পর, সেটাই দেখার।

এবং

হঠাৎ কেন মনমোহনের নাম?
এ-ও কি সনিয়ার চাল? নাকি মমতা-মুলায়মের?
তবে কি মনমোহনের প্রতি দলীয় নেতৃত্বের
অনাস্থা ও সম্মানজনক পুনর্বাসনের ব্যবস্থা?
এই নিয়ে কংগ্রেসের প্রতিক্রিয়া কোথায়?
যদি মনমোহন রাষ্ট্রপতি হন, তা হলে প্রধানমন্ত্রী কে?


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.