নারী কমিশনের চোখ রাঙানি, মানবাধিকার কমিশনের নিন্দার পরেও মেঘালয়ে গ্রামসভার স্বেচ্ছাচারিতায় রাশ টানা গেল না। জমি দুর্নীতিতে পঞ্চায়েত প্রধানকে সাহায্য করতে রাজি না হওয়ায় একঘরে হতে হয়েছে ২৩ টি পরিবারকে। আরও অভিযোগ, বিপিএল কার্ড বা রেশন কার্ড ছাড়াই গ্রামবাসীদের মধ্যে ইচ্ছামতো খাদ্যপণ্য ও কেরসিন বিতরণ করা হচ্ছে। এমনকী, বিডিও নিজেই, এখনও ১৯৯১ সালের বিপিএল তালিকা অনুসরণ করছেন। সেই তালিকার বহু ব্যক্তিরই মৃত্যু হয়েছে। অথচ তাদের জন্য নির্ধারিত রেশনও নিয়মিত বণ্টিত হয়েছে।
ঘটনার সূত্রপাত গত বছর। রি ভয় জেলার আপার লিউ গ্রামে গণবন্টন নিয়ে গ্রামবাসীদের মধ্যে ক্ষোভ ছিল। অভিযোগ ছিল পঞ্চায়েত মৃত ব্যক্তিদের নামে আসা রেশন আত্মসাৎ করছে পঞ্চায়েত ও গ্রামসভার ঘনিষ্ঠ পরিবারগুলি। সম্প্রতি, গ্রামপ্রধান ফোলনিং মাকডো গ্রামের সর্বজনীন জমি, ঘনিষ্ঠদের মধ্যে বিলি করতে উদ্যোগী হলে গ্রামের ২৩টি পরিবার তাতে আপত্তি জানায়। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, ১৯৯০-৯১ সালের নথি ব্যবহার করে গ্রামে জমি ও খাদ্য বন্টন চালানো হচ্ছে। গ্রামপ্রধান ও স্থানীয় প্রশাসনের দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরব হওয়ায় ২৩ টি পরিবারকে একঘরে করা হয়েছে। তাদের রেশন দেওয়াও দীর্ঘদিন ধরেই বন্ধ।
বিষয়টি মানবাধিকার কমিশনকে জানানো হয়। কমিশন, ঘটনার নিন্দা করে, রি ভয় জেলার অতিরিক্ত জেলাশাসক আই মাওলংকে ঘটনার তদন্ত করে রিপোর্ট দিতে বললেও জেলাশাসক গ্রামেই আসেননি। বরং বিষয়টিকে লঘু করে দেখিয়ে রিপোর্ট পাঠিয়েছেন তিনি। উমসিং-এর বিডিও-ও কোনও ব্যবস্থা নেননি। ফলে, গত একবছর ধরে ২৩টি পরিবার গণবন্টনের খাদ্য বা এমএনরেগা প্রকল্পে জব কার্ড পায়নি। অথচ, ওই ২৩টি পরিবারের নাম ব্যবহার করে গ্রামের নিয়োগ কমিটি সরকারের কাছ থেকে জব কার্ড উঠিয়েছে। গ্রামপ্রধান নিজেই নিয়োগ কমিটির প্রধান। গ্রামে বৈদ্যুতীকরণ ও পানীয় জল প্রকল্প চালু হলেও ২৩টি পরিবার বিদ্যুৎ বা পানীয় জলের লাইন পাননি। শেষ পর্যন্ত সংবাদ মাধ্যমের দ্বারস্থ হয়েছেন তাঁরা।
তবে, গ্রামপ্রধান ফোলনিং সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর সাফাই, “পঞ্চায়েত সব দিক বিচার করে সিদ্ধান্ত নেয়। খাদ্য বা জমি বন্টনে কোনও অনিয়ম হয়নি। খামোকা স্বার্থসিদ্ধির জন্য ২৩টি পরিবার, পঞ্চায়েতের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে চাইছে।” গ্রামের রেশন দোকানগুলির একটিতেও দারিদ্র সীমার নীচে থাকা বাসিন্দাদের জন্য রেশন কার্ড দেওয়ার ব্যবস্থা নেই। কার্ড ছাড়াই খাদ্যপণ্য বা কেরোসিন কী ভাবে বন্টন হচ্ছে? গ্রামপ্রধানের সাফাই, “আমাদের কোনওদিনই কার্ড দেওয়ার ব্যবস্থা ছিল না। রেশন দোকানকে বলা হয়েছে যা পণ্য বা তেল আছে, তা যেন এলাকার সকলকে সমানভাবে বণ্টন করা হয়।”
প্রশাসন কেন ব্যবস্থা নিচ্ছে না? গ্রামবাসীরা তথ্য অধিকার আইন মারফত যে তথ্য পেয়েছেন তা দেখাচ্ছে, খোদ বিডিও, গণবণ্টন বা জব কার্ড বিলির ব্যাপারে ১৯৯০-৯১ সালের তথ্য ভিত্তি করেই কাজ চালাচ্ছেন। বহু মৃত ও বিত্তশালী ব্যক্তিও, নিয়মিত ‘বিপিএল’ হিসাবে সরকারি সাহায্য, খাদ্যপণ্য পাচ্ছেন। জেলাশাসক আকাশ দীপ ত্রুটি মেনে নিয়ে বলেন, “অবিলম্বে বিপিএল তালিকা সংশোধন করা প্রয়োজন। গণবণ্টন ব্যবস্থা ও এমএনরেগা প্রকল্পে কার্ড বিলির ক্ষেত্রেও স্বচ্ছতা আনতে হবে।” |