একশো দিনের কাজ
শিল্পীর জন্য ঘর চেয়ে প্রশাসনের দ্বারস্থ বাসিন্দারা
ছেনি-হাতুড়ি ঠুকে কাঁসা-পিতলের বাসনের উপরে বাড়ির খোকা-খুকির নাম খোদাই করতে তাঁকে অনেকেই দেখেছেন। সাইকেল-রিকশার ‘হ্যান্ডেলে’র উপরেও তিনি এ ভাবে নাম লিখে দিতেন। নকশাও করতেন। বয়সের ভারে নানুরের সেই বরুণ হাজরার এখন চোখের তেজ কমে গিয়েছে। শরীরও অশক্ত হয়ে পড়েছে। নিজের ঘর নেই। নেই সংসারও। এ গ্রামে, ও গ্রামে ঘুরতে ঘুরতে এখন তিনি নানুর থানার পাকুড়হাঁস গ্রামে থিতু হয়েছেন।
এলাকার বাসিন্দারা এক সময়কার ওই নকশা শিল্পীকে সরকারি সাহায্য দেওয়ার জন্য প্রশাসনের কাছে আর্জি জানিয়েছেন। কিন্তু স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য থেকে প্রশাসনের আধিকারিকদের কাছে আশ্বাস মিললেও, সাহায্য
বরুণ হাজরা।
নিজস্ব চিত্র।
জোটেনি। আশা-হতাশার দোলাচলে দিন গুজরান করছেন বৃদ্ধ বরুণবাবু।
ছেলেবেলায় ঘর ছেড়েছিলেন। আপন করে নিয়েছিলেন পথে পরিচিত মানুষজনকে। তাঁর কথায়, “শুধু কি বীরভূম? আশপাশের কত জেলায় তখন ঘুরেছি। লোকজন ডেকে ডেকে বাড়ির থালা, বাসনে নাম লেখাতেন। সাইকেল, রিকশার উপরেও নকশা খোদাই করেছি। লোকে তখন এ কাজের সমাদর করত। গ্রামে-গঞ্জ থেকে মেলা, পার্বনে আমি কত ঘুরেছি।” পুরনো দিনের স্মৃতিচারণে চকচক করে ওঠে সত্তোরর্দ্ধ বরুণবাবুর দু’চোখ। তারপরেই তাঁর গলায় ঝরে পড়ে খেদ। জানান, এখনও তো কাঁসা-পিতলের বাসন লোকে আর ব্যবহার করে না। তাই বাসনে বাড়ির ছোট ছেলেমেয়েদের নাম লেখানোর রেওয়াজও আর নেই। সাইকেল-রিকশাতেও লোকে আর নকশা করায় না। এটা যে একটা শিল্প, তাই যেন অনেকে ভুলে গিয়েছেন। বর্ধমান জেলার অগ্রদ্বীপে তাঁর বাড়ি ছিল। বরুণবাবু বলেন, “অভিমানে বাড়ি ছেড়েছিলাম। আর ফিরতে চাই না। ছেনি-হাতুড়ি আর শিল নোড়া নিয়ে বেরিয়ে ছিলাম। কী ফেলে এসেছি, সে সব কথা আর মনে করতে চাই না।”
এখন ৭৪ বছর বয়সে তাঁর শরীর আর টানছে না। কাজের সূত্রে পাকুড়হাঁস গ্রামের বাসিন্দারা অবশ্য এখন তাঁকে আপন করে নিয়েছেন। আশ্রয় পেয়েছেন এই গ্রামেরই গোস্বামী বাড়িতে। বরুণবাবু জানান, কারও ‘বোঝা’ হয়ে থাকতে চান না। তাই প্রাপ্য সরকারি সাহায্যের জন্য প্রশাসনের আধিকারিকদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন। বরুণবাবুর আশা, “এতদিন নাম মাত্র খরচ নিয়ে লোকের কাজ করেছি। সংসার ছিল না বলে সঞ্চয়ও করিনি। এখন মাথার উপর একটা ছাদ আর দু’মুখো ভাত চাইছি। কিন্তু প্রশাসনের কাছে সেই সাহায্য পাচ্ছি না।” গোস্বামী পরিবারের সাধন গোস্বামী বলেন, “বিলুপ্ত প্রায় ওই শিল্পকে আঁকড়ে গত ৫০ বছর ধরে কাজ করেছেন বরুণবাবু। প্রায় ২০ বছর ধরে এই গ্রামে কখনও কারও বাড়িতে, কখনও কারও উঠোনে তিনি আশ্রয় পেয়েছেন। গরিবদের জন্য কত সরকারি প্রকল্প রয়েছে। বরুণবাবুর জন্য আমরা গ্রামবাসীরা প্রশাসনের কাছে সেই রকম প্রকল্পের সহায়তা চেয়েছিলাম। কিন্তু আজও তা পেলাম না।” ওই গ্রামের পূর্ব পাড়ার লালন থান্দার, সাধন থান্দার, মুসলিম পাড়ার রবু শেখ, কিংবা পশ্চিমপাড়ার মানু ভট্টাচার্যদের ক্ষোভ, “জনপ্রতিনিধিরা কিংবা স্থানীয় প্রশাসন উদ্যোগী হলে অন্তত দু’মুঠো ভাতের অভাব হত না বরুণবাবুর।”
স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য তরুণী বাগদি এবং জিতেন মাঝিরাও স্বীকার করেন, “ওই বৃদ্ধ শিল্পীর সরকারি প্রকল্পের প্রয়োজন রয়েছে। পঞ্চায়েতকে জানিয়েছি। তাঁর নাম কোনও প্রকল্পে তোলার চেষ্টা করা হবে।” নানুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের শোভারানি মণ্ডল কিংবা নানুরের বিডিও সজল দাস দু’জনেই বলেন, “ওই শিল্পীর কোনও সরকারি প্রকল্পের সাহায্য পাওয়া উচিত। এ নিয়ে খোঁজ করব।” বোলপুরের মহকুমাশাসক প্রবালকান্তি মাইতি বলেন, “বরুণবাবু আবেদন করে থাকলে শীঘ্রই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.