চব্বিশ ঘণ্টা আগে যা বলেছিলেন তা থেকে ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেলেন পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র।
পরিবহণ নিগমগুলির জিয়নকাঠির খোঁজে শুক্রবার মন্ত্রী নিজে যে দাওয়াই বাতলেছিলেন, শনিবার তিনি নিজেই তা কার্যত নস্যাৎ করে দিয়েছেন। নিগমগুলির ৫০ শতাংশ কর্মীর স্বেচ্ছাবসরই রাজ্য সরকারের ঘাড় থেকে বিপুল ভর্তুকির বোঝা নামাতে পারে বলে এক দিন আগে মদনবাবু দাবি করেছিলেন। এ দিন তিনি বলেন, “পরিবহণ নিগমগুলির যা অবস্থা, তাতে অনেককে স্বেচ্ছাবসর দিলেও সরকারি ভর্তুকি থেকে রেহাই মেলার সম্ভাবনা নেই। তেমন ম্যাজিক কিছুতেই ঘটবে না।”
কিন্তু মন্ত্রী মদনবাবুর কেন এমন ভোলবদল?
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, নিগমকর্মীদের ‘স্বেচ্ছাবসর-নীতি’র কথা ঘোষণার জন্য মন্ত্রীকে এক রকম ভর্ৎসনাই করেছেন মমতা। এ দিন দুপুরে রাজ্যের পরিবহণ সচিব ভগবতীপ্রসাদ গোপালিকাকে সঙ্গে নিয়ে মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘরে যান মদনবাবু। তাঁকে ‘সতর্ক’ করে দিয়ে ভবিষ্যতে বুঝে-শুনে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। তার পরই তড়িঘড়ি মহাকরণে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন মদনবাবু।
মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে কী বলেছেন, তা অবশ্য সংবাদমাধ্যমের সামনে বলতে চাননি পরিবহণ মন্ত্রী। শুধু বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কী কথা হয়েছে, তা সাংবাদিকদের বলার নয়।” নিগম কর্মীদের বিষয়ে সরকারি নীতি প্রসঙ্গে পরিহণমন্ত্রী বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী কখনও চান না, কর্মী ছাঁটাই হোক। মানুষ উচ্ছেদ হোক। পরিবহণকর্মীরা নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন, তাঁদের ঘাড়ে স্বেচ্ছাবসরের খাঁড়া নামবে না।” ঠিক এক দিন আগে মন্ত্রী জানিয়েছিলেন, সাত দিনের মধ্যে স্বেচ্ছাবসরের জন্য চারটি নিগমের কর্মীদের তালিকা তৈরি করে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে। কিন্তু এ দিন মন্ত্রী দাবি করেছেন, তাঁর পুরনো বক্তব্যের ক্ষেত্রে ‘ভুল বোঝাবুঝি’ হয়েছে। তাঁর কথায়, “সরকার ৫০ শতাংশ নিগমকর্মীকে স্বেচ্ছাবসর দেবে, এ কথা আমি বলতে চাইনি। আমার কথা হয় সংবাদমাধ্যম বুঝতে পারেনি, বা আমি তাদের বোঝাতে পারিনি।”
তা হলে কর্মীদের স্বেচ্ছাবসর নিয়ে কী বোঝাতে চেয়েছিলেন মন্ত্রী?
মদন বলেন, “আমি বলতে চেয়েছি, অনেক কর্মী স্বেচ্ছাবসর চাইছেন। তাঁরা আবেদন করতে পারেন। অনেক কর্মী অসুস্থ, অক্ষম। তাঁদের জন্য মেডিক্যাল বোর্ড গড়া হবে। তাঁরা সেখানে আসতে পারেন।” এখন চার নিগম সিএসটিসি, এনবিএসটিসি, সিটিসি এবং এসবিএসটিসি-র কর্মীদের মাইনের টাকা ভর্তুকি দেয় রাজ্য। পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, চারটি নিগমের ৫০ শতাংশ কর্মী মানে প্রায় ১০ হাজার লোক। তাঁদের স্বেচ্ছাবসর দিলেও কেন ভর্তুকির বোঝা কমবে না, তা-ও এ দিন ব্যাখ্যা করেছেন পরিবহণমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “সরকারি আর বেসরকারি ক্ষেত্র এক নয়। বেসরকারি বাসে চালকের মাইনে মাসে মাত্র ৮০০০ টাকা। সেখানে এক জন সরকারি বাসের চালক পান ৩২ হাজার টাকা। ৫০ শতাংশ কর্মীকে স্বেচ্ছাবসর দিলেও তাই ভর্তুকি বন্ধ করা যাবে না।”
রাজ্যের পরিবহণ নিগমগুলিতে প্রচুর ‘বাড়তি লোক’ রয়েছেন বলে আগে বহু বার ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পরিবহণমন্ত্রী। রুগ্ণ নিগমগুলির হাল ফেরাতে ছ’মাস আগে স্বেচ্ছাবসর-এর দাওয়াই ছাড়াও চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন রুটে বাসের সংখ্যার অদলবদলের কথাও বলেছিলেন তিনি। সেই সঙ্গে ডিপোয় পড়ে-থাকা বাতিল বাসগুলো ‘স্ক্র্যাপ’ হিসেবে বিক্রি করে দেওয়ার কথাও ভাবা হয়েছিল। তবে এখনও পর্যন্ত এই পদক্ষেপগুলির একটিও বাস্তবায়িত হয়নি। |