মমতার ‘ভর্ৎসনা’, সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে ‘বুঝেশুনে’ কথা বলার নির্দেশ
আয় বাড়াতে ঘুরপথে ভাড়া বৃদ্ধি পরিবহণে
রাসরি নয়, খুচরোর সঙ্কটকে সামনে রেখে এ বার ‘ঘুরপথে’ সরকারি বাস ও ট্রামের ভাড়া বাড়াল রাজ্য সরকার। আজ সরকারের তরফে এই বর্ধিত ভাড়ার হার ঘোষণা করা হয়েছে। সরকারি বাসে ন্যূনতম ভাড়া চার টাকা থেকে বেড়ে হচ্ছে পাঁচ টাকা। আর ট্রামের ক্ষেত্রে সাড়ে তিন টাকা ভাড়া বেড়ে হচ্ছে চার টাকা। পরিবহণ মন্ত্রী মদন মিত্র অবশ্য একে ভাড়া বাড়ানো বলছেন না। তাঁর কথায়, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাস ভাড়া বাড়ানোর বিরুদ্ধে। এটি ভাড়ার পুনর্বিন্যাস মাত্র। কারণ খুচরোর আকাল।” শীঘ্রই পরিবহণ নিগমগুলি নতুন হারে ভাড়া নেওয়া শুরু করবে।
সরকারি ভাবে একে পুনর্বিন্যাস বলা হলেও আসলে এটি আয় বাড়ানোরই পথ। কারণ, দ্বিতীয় ধাপে ৫০ পয়সা কমানো হলেও প্রথম ধাপের যাত্রীই যে হেতু বেশি, তাই সার্বিক বিচারে রোজগার বাড়বে পরিবহণ সংস্থাগুলির। পরিবহণের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের মতে, সারা দিনে যত যাত্রী বাসে বা ট্রামে ওঠেন, তাঁদের বেশির ভাগই ন্যূনতম ভাড়ার যাত্রী, অর্থাৎ কম দূরত্বের। তাঁদের ৫০ পয়সা করে বাড়তি ভাড়া দিতে হবে। তাই প্রকারান্তরে এটি ভাড়া বাড়ানোই হল।
প্রশাসনিক সূত্রের ব্যাখ্যা, জনমোহিনী নীতি যে বার বার বাস্তবতার কাছে হার মানছে, প্রকাশ্যে স্বীকার না করলেও সরকার আসলে তা মানতে বাধ্য হচ্ছে। ক্ষমতায় এসেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ঘোষণা করেছিল, বিদ্যুতের দাম বাড়বে না। আর সেই নীতির কারণে, সরকারি বিদ্যুৎ সংস্থাগুলি বিপুল লোকসানের মুখে পড়ে। শেষে বাস্তব পরিস্থিতি মেনে সরকার নিজের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে।
সাংবাদিক বৈঠকে পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র। শনিবার মহাকরণে সুদীপ আচার্যের তোলা ছবি।
গত ছ’মাসে রাজ্যে চার বার বিদ্যুতের দাম বেড়েছে। সরকারি দুধের ক্ষেত্রেও চাপে পড়ে মাদার ডেয়ারি-কে ‘মা শক্তি’ নামে নতুন দামি ব্র্যান্ডের দুধ বাজারে বিক্রি করে আয় বাড়ানোর ব্যাপারে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। উৎপাদন কমিয়ে দেওয়া হয়েছে তুলনামূলক ভাবে কম দামের আমজনতার দুধ। ট্যাক্সির ক্ষেত্রেও সেই একই কৌশল নিয়েছে রাজ্য। ইউনিয়নগুলির চাপে রাতের ট্যাক্সি ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। বাস্তব মেনে এ বার সরকারি পরিবহন শিল্পেও সরাসরি ভাড়া না বাড়িয়ে ঘুরপথে বাড়ানো হল বাস ও ট্রাম ভাড়া। কারণ দু’টি ক্ষেত্রেই কম দূরত্বের যাত্রীর সংখ্যাই সব থেকে বেশি।
কী ভাবে বাস ও ট্রামের ভাড়া পুনর্বিন্যাস করছে সরকার?
সরকারি বাসে যে দূরত্বের জন্য ৪ টাকা ৫০ পয়সা ভাড়া ছিল, তা ৫০ পয়সা বাড়িয়ে ৫ টাকা করা হচ্ছে। আর ৫ টাকা ৫০ পয়সার ভাড়ার ক্ষেত্রে ৫০ পয়সা কমিয়ে ৫ টাকা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ট্রামের ক্ষেত্রেও এখন থেকে আর কোনও শ্রেণি বিভাজন (ফার্স্ট ক্লাস, সেকেন্ড ক্লাস) থাকছে না। এত দিন ট্রামের বিভিন্ন দূরত্ব এবং শ্রেণি অনুযায়ী ভাড়া ছিল ৩ টাকা ৫০ পয়সা, ৪ টাকা এবং ৪ টাকা ৫০ পয়সা। পুনর্বিন্যাস করে ট্রামের ভাড়া করা হচ্ছে ৪ টাকা। মদনবাবু বলেন, “নতুন নিয়মে সরকারি বাসের ন্যূনতম ভাড়া হয়ে যাচ্ছে ৫ টাকা আর ট্রামের ক্ষেত্রে আর কোনও শ্রেণি বিভাজন থাকছে না। ট্রামের ভাড়া হয়ে যাচ্ছে ৪ টাকা।”
তা হলে বেসরকারি বাসের ভাড়া বাড়ানোর দাবিও কি রাজ্য সরকার এ বার মানতে চলেছে? জবাবে পরিবহণ মন্ত্রী অবশ্য স্পষ্ট করে কিছু বলেননি। উল্টে তিনি বেসরকারি বাস মালিকদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন, ভাড়া না বাড়িয়েও বাস পরিষেবা চালিয়ে যাওয়ার জন্য। তবে পরিবহণ মন্ত্রী জানিয়েছেন, আগামী কাল, সোমবার বেসরকারি বাস মালিকদের সঙ্গে বৈঠকে বসে তিনি তাঁদের কথা শুনবেন।
কলকাতা স্টেট ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশন (সিএসটিসি) সূত্রের খবর, দিন কয়েক আগে পরিবহণ দফতরের কাছে ভাড়ার পুনর্বিন্যাসের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল। ওই প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, দূরপাল্লার বাসের ক্ষেত্রে দশ বা এগারো টাকার ভাড়া কিছুটা কমানো হলে খুব বেশি ক্ষতি হবে না। কিন্তু কম দূরত্বে সাড়ে চার টাকার ভাড়া বাড়িয়ে পাঁচ টাকা করা জরুরি। চাপে পড়ে পরিবহণ দফতরের সেই যুক্তিই মেনে নিল সরকার।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.