হাসপাতালে অমিল জলাতঙ্কের টিকা
টানা সাত দিন জলাতঙ্কের টিকা-শূন্য ছিল হাওড়া। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের ভাঁড়ারে জলাতঙ্ক প্রতিরোধের একটিও টিকা ছিল না এক সপ্তাহ ধরে।
অভিযোগ, তার পরেও জেলার স্বাস্থ্যকর্তাদের বিশেষ হেলদোল দেখা যায়নি। দ্রুত টিকা কেনার ব্যবস্থাও হয়নি। এমনকী, স্বাস্থ্যভবনে বিষয়টি জানানো বা সেন্ট্রাল মেডিক্যাল স্টোর্স থেকে জরুরি ভিত্তিতে টিকা আনার চেষ্টাও হয়নি। বিভিন্ন পশুর কামড় বা আঁচড় খেয়ে রোগীরা হাওড়ার সরকারি হাসপাতালে টিকা নিতে এসে ফিরে গিয়েছেন বলে অভিযোগ।
গত সোমবার সংবাদমাধ্যমের কাছ থেকে বিষয়টি জানতে পারেন সেন্ট্রাল মেডিক্যাল স্টোর্সের কর্তারা। সে দিনই তড়িঘড়ি ৪০০ ভায়াল জলাতঙ্কের টিকা হাওড়ার ডিস্ট্রিক্ট রিজার্ভ স্টোর্সে পাঠানো হয়। হাওড়ার স্বাস্থ্যকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন সেন্ট্রাল মেডিক্যাল স্টোর্সের কর্তারা। জেলায় জলাতঙ্কের সমস্ত টিকা কী ভাবে এক সঙ্গে শেষ হয়ে গেল, কেন হিসেব করে টিকা কেনা ও খরচ হয়নি এবং শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও স্বাস্থ্য দফতরকে না জানিয়ে কেন বসে থাকা হল, তার লিখিত ব্যাখ্যা চেয়ে পাঠান স্বাস্থ্যভবনের কর্তারা।
কিন্তু গত এক সপ্তাহে যাঁরা হাওড়ার বিভিন্ন হাসপাতালে এসে টিকা না পেয়ে ফিরে গিয়েছেন, রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্তাদের চিন্তা তাঁদের নিয়ে। কারণ, জলাতঙ্ক নিয়ে মানুষের সচেতনতা কম। কুকুর বা বিড়াল সামান্য আঁচড়ালেও যে টিকা নেওয়া উচিত এবং টিকার কোর্স শেষ করা উচিত, সেই সম্পর্কে বহু মানুষের ধারণা নেই। তাই স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা আশঙ্কা করছেন, এই এক সপ্তাহের মধ্যে দূর থেকে টিকা নিতে যদি কেউ এসেও থাকেন, সে ক্ষেত্রে এক বার টিকা না পেয়ে ফিরে গিয়ে তাঁদের অধিকাংশই আর টিকা নেবেন না। বেসরকারি জায়গায় দ্বিগুণ দাম দিয়ে টিকা কেনাও অনেকের পক্ষে সম্ভব হবে না। তাই তাঁদের জলাতঙ্কে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে।
স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারাই জানাচ্ছেন, গত এপ্রিলে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের এক পরিসংখ্যানে জানানো হয়েছিল, ২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গে জলাতঙ্কে মৃতের সংখ্যা ৭৩, যা দেশের মধ্যে সব চেয়ে বেশি। ওই বছর শুধু বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালেই ৩৯ জন জলাতঙ্কের রোগী ভর্তি হন। প্রত্যেকেরই মৃত্যু হয়েছে। হাওড়া জেলা হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ৭০ জন জলাতঙ্কের টিকা নিতে আসেন। ফলে, এক সপ্তাহে কী হারে রোগী ফিরে গিয়েছেন, তা সহজেই অনুমেয়। এই পরিস্থিতিতে হাওড়ার স্বাস্থ্যকর্তারা এক সপ্তাহ কী করে চুপচাপ বসে রইলেন, সেটাই বোধগম্য হচ্ছে না স্বাস্থ্য দফতরের।
রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের মুখপাত্র অসিত বিশ্বাস জানান, জলাতঙ্কের টিকার জন্য এমনিতে জেলাগুলিকে সেন্ট্রাল মেডিক্যাল স্টোর্সের (সিএমএস) উপরে ভরসা করতে হয় না। সিএমএস দরপত্র ডেকে ওষুধ সংস্থা ঠিক করে দেয়। জেলার স্বাস্থ্য বিভাগকে টাকা দেওয়া থাকে। মাসে কত টিকা লাগবে, তা হিসেব করে তারা টিকা কিনে ডিস্ট্রিক্ট রিজার্ভ স্টোর্সে রেখে দেয়। খুব প্রয়োজন পড়লে রোগী কল্যাণ সমিতির টাকা থেকেও টিকা কেনা হয়। অসিতবাবুর কথায়, “এর পরেও এক সপ্তাহ কোনও জেলা কী ভাবে জলাতঙ্ক টিকা-শূন্য থাকতে পারে, বুঝতে পারছি না। দফতরের নিয়ম মানার ক্ষেত্রে বড় কোনও ফাঁক থেকে যাচ্ছে। হাওড়া জেলা স্বাস্থ্য দফতরকে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে।”
জেলা সূত্রে খবর, টিকার বিষয়টি দেখেন মূলত উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তারা। হাওড়ার তিন উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা এখন ছুটিতে রয়েছেন। তাই জলাতঙ্ক টিকা নিয়ে কেউ মাথা ঘামাননি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.