আইপিএল-জয়ী কলকাতা নাইট রাইডার্সের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ইডেনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে দাঁড়িয়ে মঙ্গলবার তিনি যা বলেছিলেন, তার ভুল ব্যাখ্যা করা হচ্ছে বুধবার পাল্টা ব্যাখ্যা দিলেন রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন। তাঁর ওই মন্তব্য ঘিরে তত ক্ষণে অবশ্য ‘রাজনৈতিক বিতর্ক’ শুরু হয়ে গিয়েছে।
শহরের একটি হোটেলে এক অনুষ্ঠানের পরে এ দিন সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের উত্তরে রাজ্যপাল জানান, কোনও সরকারের সাফল্যের প্রসঙ্গে ‘পরিবর্তন’ কথাটি তিনি ব্যবহার করেননি। রাজ্যপালের কথায়, “পাঁচ বছর ধরে চেষ্টা করে (কেকেআর-এর)আইপিএলে সফল হওয়াটা পরিবর্তন। আমি কোনও বিশেষ সরকারের প্রসঙ্গে ওই কথা বলিনি।”
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার ইডেনে মুখ্যমন্ত্রী মমতার পাশে দাঁড়িয়ে রাজ্যপাল বলেছিলেন, “এটাই বাংলার প্রকৃত পরিবর্তন। এক বছর আগে যে পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।” সেই কথায় অবশ্য আইপিএল বা কেকেআর-প্রসঙ্গ উল্লিখিত ছিল না। রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান হিসাবে রাজ্যপাল এমন মন্তব্য করতে পারেন কি না, তা নিয়ে মঙ্গলবারই প্রশ্ন তুলেছিল বিরোধী শিবির।
সিপিএম নেতৃত্ব অবশ্য রাজ্যপালের মন্তব্য নিয়ে এ দিনও প্রশ্ন তোলা অব্যাহত রেখেছেন। তবে প্রশ্ন তোলার সময় তাঁরা জানতেন না, রাজ্যপাল তাঁর বক্তব্যের অন্য ‘ব্যাখ্যা’ দিয়েছেন। বিরোধী দলনেতা তথা সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য সূর্যকান্ত মিশ্র এ দিন বলেন, “একে যদি পরিবর্তন বলা হয়, তবে এই পরিবর্তনের জন্য লোকে ভোট দেয়নি!” রাজ্যপালের ‘ভূমিকা’র সরাসরি সমালোচনা করতে চাননি বিরোধী দলনেতা। নাম না-করেই তিনি রাজ্যপালের মঙ্গলবারের ‘মন্তব্যে’র সমালোচনা করেছেন।
সিপিএম সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শ্যামল চক্রবর্তী অবশ্য সরাসরিই বলেছেন, “রাজ্যপালের এই ধরনের মন্তব্য অনভিপ্রেত।” রাজ্যপালের ভূমিকাকে কটাক্ষ করে শ্যামলবাবু বলেন, “রাজ্যপাল সঠিক কাজই করেছেন! কারণ এই সরকার তাঁরই সরকার। পরিবর্তন মানে বেকারত্ব, কর্মসংস্থান, আইন-শৃঙ্খলা ও শিল্পায়নের পরিবর্তনের কথাই মানুষ ভাবেন। কারণ সেটাই প্রকৃত পরিবর্তন। কিন্তু এ সব ক্ষেত্রে তো কোনও পরিবর্তন হয়নি। তাই নাইটদের আইপিএল জয়কেই তিনি পরিবর্তন বলেছেন!” প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্যের বক্তব্য, “পরিবর্তন হয়েছে কি না, মানুষ বলবেন। তবে আমরা মনে করি, পরিবর্তন হয়নি!”
আইপিএল-জয়ীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী তথা রাজ্য সরকারের জড়িয়ে পড়া নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন তুলেছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু। সূর্যবাবুও এ দিন বলেছেন, জাতীয় বা রাজ্য দলের কোনও সাফল্যের ব্যাপার এটা নয়। কলকাতার দলের জয় নিয়ে ক্রিকেটপ্রেমী মানুষের একটা আবেগ আছেই। জয়ের স্ট্রোক যাঁর ব্যাট থেকে এসেছে, তিনি হাওড়ার মানুষ। বিরোধী দলনেতা নিজেও আইপিএল জয়ের জন্য কেকেআর-কে শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন। সূর্যবাবুর মতে, “কিন্তু গত কালের অনুষ্ঠান দেখে মনে হয়েছে, রাজ্য সরকারের বর্ষপূর্তি বা তৃণমূলের কোনও অনুষ্ঠান হচ্ছে! যা হয়েছে, তা আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে মেলে না!” এই সূত্রেই বিরোধী দলনেতার মন্তব্য, “দেশের কোনও মুখ্যমন্ত্রী তাঁর মাথা (ব্রহ্মতালু অর্থে) পর্যন্ত কাউকে পৌঁছতে দেবেন কি না, জানি না!” ইডেনের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীর মাথায় আবেগতাড়িত শাহরুখ খানের চুম্বনের ছবির প্রতিই ইঙ্গিত করতে চেয়েছেন সূর্যবাবু।
নাইটদের জয়কে অভিনন্দন জানিয়েও সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রবীন দেবের বক্তব্য, “কেন বিজয় উৎসবে তৃণমূলের স্লোগান ব্যবহার করা হল?” |