ফেব্রুয়ারির পর মে আরও একবার বন্ধ মোকাবিলায় ‘কড়া’ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
পেট্রোলের ‘নজিরবিহীন’ মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে আজ, বৃহস্পতিবার এনডিএ-র ডাকা ২৪ ঘন্টার ভারত বন্ধ। এ রাজ্যের বিজেপি যার সঙ্গে ১২ ঘন্টার বাংলা বন্ধের ডাক দিয়েছে। এমনিতেই ‘রাজনৈতিক’ ভাবে এনডিএ-র বন্ধে সামিল হতে পারেন না মমতা। কিন্তু তার চেয়েও বেশি জরুরি প্রশাসক হিসেবে তাঁর বন্ধঅবরোধের বিরুদ্ধে ‘জেহাদ’। ঠিক যে কারণে ২৮ ফেব্রুয়ারির বন্ধেরও তিনি কঠোর হাতে মোকাবিলা করেছিলেন।
পাশাপাশিই অবশ্য মমতা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, বিজেপি-র ডাকা বন্ধের সুযোগ নিয়ে রাজ্যের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ক্ষুণ্ণ করার চক্রান্ত হতে পারে। বুধবার সীমান্তবর্তী জেলাগুলির মন্ত্রীদের তিনি নির্দেশ দিয়েছেন, তাঁরা যেন নিজেদের জেলাতেই থাকেন। দলের সব মন্ত্রী, বিধায়ক এবং নেতাদেরও মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ, কোথাও অশান্তির সৃষ্টি হলে তাঁরা যেন ‘সক্রিয়’ মোকাবিলায় না-নামেন। অশান্তি হলে মোকাবিলা করবে পুলিশ-প্রশাসন।
রাজ্যবাসীর কাছে মুখ্যমন্ত্রীর আবেদন, “নির্ভয়ে কাজে বেরোন। প্ররোচনার ফাঁদে পা দেবেন না। সব সচল-স্বাভাবিক রাখতে সরকার বদ্ধপরিকর।” বন্ধ ‘ব্যর্থ’ করার ‘বার্তা’ দিয়েই আজ দুপুরে মুখ্যমন্ত্রী দু’দিনের সফরে দক্ষিণ ২৪ পরগনা রওনা হবেন। মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় ও পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে তিনি নির্দেশ দিয়েছেন, মহাকরণে থেকে সমগ্র পরিস্থিতি তদারক করতে।
পরিবহণ মন্ত্রী মদন মিত্র জানিয়েছেন, বন্ধে রাজ্যের যান-চলাচল স্বাভাবিক রাখতে প্রশাসন সব ব্যবস্থা নেবে। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে মহাকরণে বৈঠকের পর মন্ত্রী বলেন, “বন্ধ-বন্ধ খেলা বন্ধ করতে হবে। পেট্রোলের দাম এক ধাক্কায় লিটার পিছু সাড়ে সাত টাকার উপর বেড়ে যাওয়ার পর রাস্তায় নেমে প্রথম প্রতিবাদ করেছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। এখন অন্য কারও বন্ধ ডাকাটা হাস্যকর ও গুরুত্বহীন।” তাঁর কথায়, “সকলে নিশ্চিন্তে অফিসে যাবেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খোলা থাকবে। লোকের যাতায়াতের জন্য যে পরিকাঠামো দরকার, তা রাখার চেষ্টা করবে সরকার।” ফেরি-ট্রেন-বাস-ট্রাম পাওয়ার আশ্বাস দিয়ে মন্ত্রী বলেন, “কেউ যাতে রাস্তায় অসুবিধায় না পড়েন, সরকার সেদিকে লক্ষ্য রাখবে।”
বন্ধের মোকাবিলায় রাজ্য সরকারের কাছে ‘পাশে’ই রয়েছে কংগ্রেস। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যের কথায়, “কেন্দ্র দাম কমানোর আশ্বাস দেওয়ার পরেও রাজ্যের আর্থিক সঙ্কটে এই বন্ধ অযৌক্তিক।” রাজ্য বিজেপি গোলমাল বাধিয়ে ‘প্রাসঙ্গিক’ থাকার চেষ্টা করবে বলে প্রশাসনের আশঙ্কা। তবে তা কলকাতা এবং মফস্সলের কিছু এলাকায় সীমাবদ্ধ থাকবে বলে অনুমান পুলিশ-প্রশাসনের। ২০০৯-এর ৩০ নভেম্বর বিজেপি বাংলা বন্ধ ডেকে ‘গায়ের জোরে’ বন্ধ ‘সফল’ করতে কলকাতা-সহ বিভিন্ন জায়গায় গোলমাল করেছিল। বিজেপি-র অন্দরের ব্যাখ্যা, ‘অশান্তি’কে হাতিয়ার করায় তারা ‘নিন্দিত’ হলেও তাদের ‘উপেক্ষা’ করা যায়নি। ওই অভিজ্ঞতা থেকেই বিজেপি পরের বছর ‘মহাকরণ অভিযান’ কর্মসূচিতেও ‘অশান্তি’ করে। আজ তারা রেল ও রাস্তা অবরোধ করতে পারে। বাসে আগুন দেওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না। বড়বাজার, হাওড়ার একাংশ, কলেজ স্ট্রিট, মহাত্মা গাঁধী রোড, রাজারহাট-নিউটাউন ও বাগুইআটি এলাকায় গোলমালের আশঙ্কা করছে প্রশাসন। প্রকাশ্যে অবশ্য দলের রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহের কথায়, “আমরা জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন আশা করছি। শান্তিপূর্ণ ভাবেই বন্ধ হবে।
ঘটনাচক্রে, পেট্রোলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে আজ রেল ও রাস্তা অবরোধ করবে সিপিআই (এমএল) লিবারেশন এবং ‘আইন অমান্য’ করবে এসইউসি। বেলা ১১টা থেকে আধঘন্টা জেলায় জেলায় রেল ও রাস্তা অবরোধ করবে লিবারেশন। কলকাতা পুরসভার সামনে থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত মিছিল করে সেখানে পথ অবরোধ করবে তারা। এসইউসি বেলা ১২টায় সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার থেকে মিছিল করে রানি রাসমণি অ্যাভিনিউ পর্যন্ত গিয়ে সেখানে ‘আইন অমান্য’ করবে। সিপিএম-সহ বামফ্রন্ট আবার বিকেলা ৫টায় রানি রাসমণি অ্যভিনিউ থেকে মৌলালির রামলীলা ময়দান পর্যন্ত মিছিল করবে। ফলে মিছিল-অবরোধে আমজনতার ভোগান্তির সম্ভাবনার কথা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। এখন দেখার, রাজ্য সরকার কী ভাবে তার মোকাবিলা করে। |
মোকাবিলায় পরিবহণ |
• চালু থাকবে ট্রেন, মেট্রো, সরকারি বাস, মিনিবাস, ফেরি |
• বেসরকারি বাস নামানোর চেষ্টা হবে, ট্যাক্সি থাকবে যথেষ্ট |
অফিস-কাছারি |
• সরকারি অফিসে না-এলে বেতনে কোপ |
• শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একই নির্দেশ |
বাজার-হাট |
• মালিকেরা দোকান খুলতে চান |
নিরাপত্তা |
• কলকাতায় ৩০০ পুলিশ পিকেট |
• ৮৫টি রেডিও ফ্লাইং স্কোয়াড |
• বড়বাজারে বাড়তি বাহিনী |
• গুরুত্বপূর্ণ ভবনে পাহারা |
• বাস-ট্যাক্সিস্ট্যান্ডে বাড়তি পুলিশ |
|