পুলিশ গিয়ে উদ্ধার করল পরিবারকে
বছর ঘুরতেই পুরনো ছবি সেই কপড়রা গ্রামে
ক বছর আগে যে গ্রামের আদিবাসী বাসিন্দাদের একটা বড় অংশ কুসংস্কার ও ডাইনি-প্রথার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর শপথ নিয়েছিলেন, সেখানেই আজ উলটপুরাণ!
মানবাজার থানার কপড়রা গ্রামে ২০১১ এর ১৯ জানুয়ারি সালিশি সভায় বসে অনেক বাসিন্দা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, ডাইন বা ভূতের নামে কাউকে অপবাদ দেওয়া চলবে না। কেউ এ কাজ করলে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হবে। অথচ ওই গ্রামেই ‘ভূত পোষা’র অপবাদ দিয়ে এক সালিশি সভা বসিয়ে এক আদিবাসী মহিলাকে জরিমানা করা হয়েছে। ওই মহিলার পরিবারের উপরে হামলা হতে পারে, এই আশঙ্কায় পুলিশ সোমবার গভীর রাতে তাদের মানবাজার থানায় নিয়ে যায়। বর্তমানে পরিবারটি বোরো থানা এলাকার একটি গ্রামে, তাদের আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।
এক বছর আগে যাঁরা কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আশার আলো জ্বালিয়েছিলেন, তাঁদের এ হেন ‘পরিবর্তনে’ বিস্মিত যুক্তিবাদী সমিতি, বিজ্ঞান মঞ্চ এবং পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা। পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার সি সুধাকর বলেন, “ওই গ্রামে সালিশি সভা ডেকে একটি পরিবারকে জরিমানা করা হয়েছে। আতঙ্কিত পরিবারটিকে পুলিশ উদ্ধার করেছে। ওই কাণ্ডে কে বা কারা জড়িত, খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।” মানবাজারের বিডিও সায়ক দেব বলেছেন, “ওই গ্রামে এখনও উত্তেজনা রয়েছে। তবে, শীঘ্রই সেখানে কুসংস্কারের বিরুদ্ধে সচেতনতা শিবিরকরা হবে।”
মঙ্গলবার মানবাজার থানায় বসেছিলেন লক্ষ্মীমণি কিস্কু, তাঁর স্বামী মিতুন কিস্কু এবং তাঁদের ছেলে, ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র রবীন্দ্রনাথ। পেশায় চাষি মিতুনবাবু জানান, ১৫ এপ্রিল তাঁদের পড়শি বাড়ির পাঁচ বছরের একটি মেয়ে অসুখে মারা যায়। তার পর থেকেই তার বাবা সুদেব কিস্কু ও মা মনোহারি কিস্কু মেয়ের মৃত্যুর জন্য লক্ষ্মীমণিকে দায়ী করে অশান্তি পাকাতে শুরু করে। মিতুনবাবু বলেন, “ওদের অভিযোগ আমার স্ত্রী নাকি ভূত পুষেছে। মেয়ের মৃত্যু সে জন্যই হয়েছে। এই নিয়ে গত বৃহস্পতিবার গ্রামে ষোলো আনার বৈঠক বসে। তাতে সেদিনের খরচ বাবদ পাঁচ হাজার টাকা দিতে হয় আমাদের। অশান্তি এড়াতে ঘরের ধান বিক্রি করে ওই টাকা মিটিয়েছিলাম।”
সোমবার সন্ধ্যায় ফের সালিশি সভা বসে। বৈঠকে স্থির হয় লক্ষ্মীমণির বাড়িতে ওঝা ডেকে পুজো করাতে হবে। সেই বাবদ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয় ওই দম্পতিকে। ওই টাকা দিতে পারবেন না জানানোয় সন্ধ্যা থেকে তাঁদের আটকে রেখে উপরে চাপ সৃষ্টি করা হয় বলে লক্ষ্মীমণির অভিযোগ। শেষ পর্যন্ত রাত ২টো নাগাদ যুক্তিবাদী সমিতি ও সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে বিরাট পুলিশ বাহিনী গ্রামের সালিশি সভা থেকে লক্ষ্মীমণিদের উদ্ধার করে মানবাজার থানায় নিয়ে আসে। লক্ষ্মীমণির কথায়, “পুলিশ ভাগ্যিস সময়ে গ্রামে পৌঁছেছিল। জরিমানা দিতে না পারলে ওই রাতেই আমাদের জীবন বিপন্ন হতে পারত। জানি না এর পর ওই গ্রামে থাকতে পারব কি না।”
পুলিশ জানিয়েছে, সালিশি সভার প্রধান উদ্যোক্তা হিসাবে স্থানীয় মোড়ল লুলা সরেন, জালিম কিস্কু, গোপীনাথ কিস্কু, সুদেব কিস্কু, শ্রীহরি হাঁসদা রমানাথ হাঁসদা রেবতী টুডু-সহ কয়েক জনের নাম উঠে এসেছে। পুলিশের দাবি, মঙ্গলবার সকালে গ্রামে গিয়ে অভিযুক্তদের দেখা মেলেনি। গ্রাম ছিল কার্যত পুরুষশূন্য।
২০১১-র জানুয়ারিতে কুসংস্কারের বিরুদ্ধে যাঁরা সরব হয়েছিলেন, কপড়রা গ্রামের সেই বুদ্ধেশ্বর মুর্মু, মহাদেব টুড,ু সতীশ হাঁসদারা সোমবারের ঘটনা নিয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি। মহাদেববাবুর দাবি, “ঘটনার কথা জানি না।” স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য, সিপিএমের গুণমণি মুর্মুও মন্তব্য করেননি। পুলিশ জানিয়েছে, সংশ্লিষ্ট বামনি-মাঝিহিড়া পঞ্চায়েতের সিপিএম প্রধান মিলনী হাঁসদা-সহ কয়েক জনকে থানায় আলোচনার জন ডেকে পাঠানো হলেও তাঁরা আসেননি।
বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির পুরুলিয়া জেলা সম্পাদক মধূসুদন মাহাতোর আক্ষেপ, “আমরা মঙ্গলবার ও বুধবার অনেক চেষ্টা করেও গ্রামের লোকেদের মুখ থেকে একটা কথাও বার করতে পারিনি। তবে আশা ছাড়ছি না। কুসংস্কার দূর করতে ফের গ্রামে গিয়ে প্রচার চালাব।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.