ক্ষমতায় আসার দু’বছরের মধ্যেই রঘুনাথপুরে দলীয় পুরপ্রধান মদন বরাটের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনলেন তৃণমূলের তিন কাউন্সিলর। সম্প্রতি ওই অনাস্থা এনেছেন পুরসভায় দলনেতা বিষ্ণুচরণ মেহেতা, উপ-পুরপ্রধান বাসুদেব তিওয়ারি-সহ তৃণমূলের তিন জন এবং আরএসপি-র এক কাউন্সিলর। কংগ্রেসের এক কাউন্সিলর প্রথমে অনাস্থা প্রস্তাবে সামিল হলেও পরে সরে এসেছেন।
পুরসভায় দলীয় কোন্দল সামনে আসায় অস্বস্তিতে পড়েছেন পুরুলিয়া জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। সেই প্রেক্ষিতেই বুধবার রঘুনাথপুর পুরসভার কাউন্সিলর এবং দল ও শাখা সংগঠনের নেতা-কর্মীদের নিয়ে বৈঠক করেন জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে বরফ সে ভাবে গলেনি। অনাস্থায় অনড় রয়েছেন দলের একাংশ।
রঘুনাথপুর পুরসভায় পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা এর আগেও একাধিকবার আনা হয়েছে। তৃণমূলের দখলে থাকা পুরবোর্ডে অনাস্থার জেরে আগে তিন বার পুরপ্রধান বদল হয়েছেন। ২০১০ সালে নতুন বোর্ড গঠনের দুই বছরের মধ্যে ফের অনাস্থা আনা হল পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি নিজেদের মধ্যে বৈঠক করে রঘুনাথপুরের মহকুমাশাসকের কাছে পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব জমা দেন ওই কাউন্সিলরেরা। মহকুমা শাসক প্রণব বিশ্বাস জানিয়েছেন, পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাবের আইনগত দিকগুলি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
পুরসভায় দলের নেতা তথা জেলা তৃণমূলের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক বিষ্ণুবাবুর অভিযোগ, “পুরপ্রধান ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন। পুরসভা পরিচালনার ক্ষেত্রে কাউন্সিলরদের আলোচনা না করেই বহু সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন পুরপ্রধান। যার ফলে শহরে দলের ভাবমূর্তির ক্ষতি হচ্ছে। দলের বিরুদ্ধে জনমত তৈরি হচ্ছে। এই অবস্থার বদলের জন্যই অনাস্থা আনা হয়েছে।” যদিও পুরপ্রধান মদন বরাটের দাবি, “ভিত্তিহীন অভিযোগ করা হচ্ছে আমার বিরুদ্ধে। এলাকায় উন্নয়নের কাজে গুরুত্ব দিয়েছি। কিন্তু কিছু কাউন্সিলর পুরসভা থেকে ব্যক্তিগত সুবিধা পেতে চাইছেন বলেই অনাস্থা এনেছেন।” তাঁর আরও কটাক্ষ, “দলের মধ্যে আমার বিরুদ্ধে সমর্থন জোগাড় করতে না পেরে অন্য দলের সমর্থন নিয়ে অনাস্থা এনেছে তৃণমূলের একাংশ।”
রঘুনাথপুর পুরসভার ১৩টি ওয়ার্ডের মধ্যে দু’টিতে বর্তমানে কোনও দলেরই কাউন্সিলর নেই। একটিতে কাউন্সিলর প্রয়াত হয়েছেন। অন্যটিতে পুরভোটের সময় গণ্ডগোলের জেরে ভোটই হয়নি। বাকি ১১টির মধ্যে তৃণমূল ৬, সিপিএম ২ এবং আরএসপি, কংগ্রেস ও এসইউসি-র দখলে ১টি করে আসন। কংগ্রেস এবং এসইউসি-র সমর্থনে পুরবোর্ড গঠন করে তৃণমূল।
এই অবস্থায় চার জন কাউন্সিলর অনাস্থা আনায় পুরপ্রধান বদলের জল্পনা ফের উস্কে উঠেছে রঘুনাথপুর পুর-শহরে। দলীয় কোন্দল এ ভাবে সামনে আসায় এবং দলের জেলা নেতৃত্বকে অন্ধকারে রেখে পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে দলেরই কাউন্সিলরদের একাংশ অনাস্থা প্রস্তাব জমা দেওয়ায় রিস্থিতি সামলাতে তড়িঘড়ি রঘুনাথপুরে এসে বৈঠক করেন তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি। সুজয়বাবু জানান, দলের জেলা সভাপতি শান্তিরাম মাহাতোর সঙ্গে আলোচনা করেই এই বৈঠক হয়েছে। তৃণমূল সূত্রের খবর, অনাস্থা প্রস্তাব প্রত্যাহারের জন্য কাউন্সিলরদের ওই অংশকে বলা হলেও তাঁরা রাজি হননি। বিষ্ণুবাবু বলেন, “দলের স্বার্থেই এখানে পুরপ্রধান বদলের প্রয়োজনীয়তা তৈরি হয়েছে। বিষয়টি কার্যকরী সভাপতিকে জানিয়েও দিয়েছেন বৈঠকে উপস্থিত নেতা-কর্মীরা। এই অবস্থায় অনাস্থার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসা হবে না।”
সুজয়বাবু বলেন, “নেতৃত্বকে না জানিয়ে এ ভাবে অনাস্থা প্রস্তাব দল অনুমোদন করছে না। এই প্রেক্ষিতেই এ দিন দলের নেতা-কর্মীদের কাছে পুরসভার কাজ পরিচালনা নিয়ে মতামত জানতে চাওয়া হয়েছিল। তাঁদের মতামত দলের রাজ্য নেতৃত্বের কাছে পাঠানো হবে।” প্রয়োজনে কাউন্সিলরদের কলকাতায় ডেকে পাঠিয়ে আলোচনা করে রাজ্য নেতৃত্ব রঘুনাথপুরে পুরপ্রধান বদলের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন বলেও জানান সুজয়বাবু। |