|
|
|
|
নিশানায় পঞ্চায়েত ভোট |
জামবনিতে সক্রিয় হচ্ছে তৃণমূল |
নিজস্ব সংবাদদাতা • ঝাড়গ্রাম |
বেলপাহাড়ির পর এ বার তৃণমূলের নিশানায় জামবনি। পঞ্চায়েত ভোটের আগে জঙ্গলমহলে সাংগঠনিক দিক থেকে তুলনামূলক ভাবে দুর্বল ব্লকগুলিতে রাজনৈতিক প্রভাব বাড়াতে শুরু করেছে তৃণমূল। সিপিএম ও ঝাড়খণ্ডীদের দুর্গে আঘাত হানতে প্রধানত গ্রামে-গঞ্জে দলীয় কার্যালয় খোলার নির্দেশ দিয়েছে তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্ব। তৃণমূলের দলীয় সূত্রের খবর, যেখানে সংগঠন দুর্বল কিংবা একেবারেই সংগঠন নেই, সে ক্ষেত্রে সিপিএম ও ঝাড়খণ্ডীদের বিক্ষু্ব্ধ অংশের সাহায্য নিয়ে ‘শত্রুর শত্রু, আমার মিত্র’ নীতিতে দলের বিস্তার করতে হবে।
দলের জেলা নেতা নির্মল ঘোষের বক্তব্যেও সেই ইঙ্গিতই স্পষ্ট। নির্মলবাবুর কথায়, “সিপিএমের সন্ত্রাসে ইতিপূর্বে জামবনির বেশ কিছু এলাকায় আমরা ঢুকতেই পারিনি। ঝাড়খণ্ডীদের একটা অংশও গোপনে এখানে সিপিএমের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে রয়েছে। ওদের ‘দ্বিমুখী সন্ত্রাসের’ মোকাবিলা করেই জামবনিতে দলীয় সংগঠন বাড়ছে। উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় স্থানীয় মানুষ আমাদের মিটিং-মিছিলে আসছেন।” রবিবার জামবনির ‘লালদুর্গ’ দুবড়া গ্রামে তৃণমূলের একটি দলীয় কার্যালয়ের উদ্বোধন করেছেন নির্মলবাবু। ২০০২ সালে দুবড়া গ্রামের ‘গণহত্যা’র ঘটনায় ৩ বৃদ্ধ-বৃদ্ধা নিহত হওয়ার পর বিরোধী-শূন্য এলাকায় দাপিয়ে বেড়িয়েছে সিপিএম। ২০০২ সালে জামবনির বালিজুড়িতে সিপিএম নেতা দিবাকর মালাকার খুনের পাল্টা হিসেবে দুবড়া গ্রামে এক কংগ্রেস নেতার বৃদ্ধ বাবা এবং এক ঝাড়খণ্ডী নেতার বৃদ্ধ বাবা-মা’কে নৃশংসভাবে খুন করার অভিযোগ
ওঠে সিপিএমের বিরুদ্ধে। যদিও দিবাকরবাবুর খুনের ঘটনা নিয়ে দলীয় নেতৃত্বের একাংশের ভূমিকা নিয়েও স্থানীয় সিপিএমের মধ্যেও
ক্ষোভ-বিক্ষোভ ছিল।
ঘটনাচক্রে, দিবাকরবাবুর অনুগামীদের একাংশ এখন ‘বিক্ষুব্ধ’। স্থানীয় রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, সিপিএমের ওই বিক্ষুব্ধ অংশের সমর্থন নিয়েই দুবড়ায় রাজনৈতিক কার্যক্রম শুরু করেছে তৃণমূল। আবার সংখ্যালঘু-অধ্যুষিত পড়িহাটি অঞ্চলেও বুধবার মিছিল ও পথসভা করেছে তৃণমূল। নির্মলবাবু ছাড়াও জেলা তৃণমূল-নেতা দুর্গেশ মল্লদেব, ব্লক যুব-তৃণমূল সভাপতি দেবনাথ হাঁসদা-র সঙ্গে এ দিন জনজাগরণ মঞ্চের নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। তৃণমূলের জেলা নেতৃত্বের হস্তক্ষেপে পঞ্চায়েত ভোটের আগে জামবনিতে দলের আভ্যন্তরীণ কোন্দল মিটিয়ে নেওয়ারও চেষ্টা হচ্ছে। মূলত, কেন্দডাংরি অঞ্চলে সক্রিয় ‘জনজাগরণ মঞ্চে’-র নেতৃত্বের সঙ্গে ব্লক তৃণমূলের একাংশের বিরোধ রয়েছে। কয়েক মাস আগে ব্লক যুব-তৃণমূলের এক নেতাকে নিগৃহীত করার অভিযোগ উঠেছিল মঞ্চের লোকজনের বিরুদ্ধে। মঞ্চের নেতাদের সাম্প্রতিক কিছু কাজকর্ম নিয়েও অস্বস্তি তৈরি হয়
তৃণমূলের মধ্যেই। সেই বিরোধ মিটিয়ে নেওয়ার ফলেই জামবনিতে সাম্প্রতিক স্কুল ভোটে তৃণমূলপন্থীরা উল্লেখযোগ্য ফল করেছে বলেই দলীয় সূত্রের দাবি। প্রসঙ্গত, জামবনি পঞ্চায়েত সমিতির ক্ষমতায় রয়েছে সিপিএম। দশটি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ৫টির ক্ষমতায় সিপিএম। বাকি ৫টির ক্ষমতায় রয়েছে ঝাড়খণ্ডীরা। পঞ্চায়েত সমিতিতে অর্জুন হাঁসদার নেতৃত্বাধীন ঝাড়খণ্ডীরা বিরোধীপক্ষে থাকলেও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সাম্প্রতিক স্কুল-ভোটে ঝাড়খণ্ডীদের সঙ্গেই বামপন্থীদের আসন সমঝোতা করতে দেখা গিয়েছে। বামপন্থী-ঝাড়খণ্ডীদের মোকাবিলা করাটাই জামবনিতে এখন তৃণমূলের কাছে মস্ত চ্যালেঞ্জ। |
|
|
|
|
|