বিশ্বসেরার খেতাব জয়ের পরে প্রতিবারই স্ত্রী অরুণা ও সঙ্গী সেকেন্ডদের নিয়ে প্রিয় রেস্তোরাঁয় নৈশভোজ সারাটাই রেওয়াজ তাঁর। এ বারও তাঁর ব্যতিক্রম হয়নি। মস্কোর অভিজাত রেস্তোরাঁয় ডিনার সারতে গিয়েছিলেন তিনি। সেখানেই স্ত্রী অরুণা আনন্দের মোবাইলে বুধবার রাতে ধরা গেল তাঁকে। যিনি জানাচ্ছেন, আনন্দ ক্লান্ত এবং বিধ্বস্ত। বলছিলেন, “বেশ ক্লান্ত ও। প্লিজ দু’তিন মিনিটের বেশি নেবেন না।” কিন্তু ভারতীয় সময় মধ্যরাতে আনন্দবাজারকে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে রীতিমতো তৃপ্ত শোনাল আনন্দকে। যিনি ভারতে ফিরছেন ২ জুন। দুবাই হয়ে নামবেন চেন্নাইয়ে। |
প্র: প্রেসের সামনে বললেন, আয়াম টু টেনশ্ড টু বি হ্যাপি। কিন্তু রিলিভড। এখনও তাই মনে হচ্ছে?
আনন্দ: হ্যাঁ। টাইব্রেকারে ফল যে কোনও দিকেই যেতে পারত। ওই যে বলেছি না আমি জিতেছি কারণ আমি জিতেছি। এর বেশি খুব বেশি ব্যাখ্যা করা কঠিন।
প্র: ম্যাচ শেষে বরিস গেলফাঁর সঙ্গে করমর্দনের মুহূর্তেও নির্বিকার লাগল আপনাকে। যেন কিছুই হয়নি। কী করে পারেন অতটা নির্বিকার থাকতে?
আনন্দ: নির্বিকার কি না জানি না, আমি খুব টেনসড ছিলাম। তাই ম্যাচ শেষেই ভিতরে চলে গিয়েছিলাম।
প্র: টাইব্রেকারে আজ নিষ্পত্তি হতই। সকালে উঠে অনুভূতিটা কেমন ছিল?
আনন্দ: সকালে ঘুম থেকে ওঠার পরে মনে হয়েছিল, আজই ব্যাপারটার নিষ্পত্তি হচ্ছে। হয় এ দিকে বা ও দিকে যাবে ম্যাচটা। আমি জানতাম না কোন দিকে যেতে পারে। টাইব্রেকারে কী হবে বা হতে পারে, তা নিয়ে কোনও নির্দিষ্ট ধারণা সকালে আমার ছিল না। টাইব্রেকারের সময়েও ম্যাচ ছিল একেবারে হাড্ডাহাড্ডি। যে কোনও দিকেই যেতে পারত। ব্যাপারটা শেষ পর্যন্ত আমার দিকে গিয়েছে। নার্ভটা ধরে রাখা খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। নার্ভের লড়াইটা জিতে পারাটাই টাইব্রেকে আসল ছিল। |
প্র: সংক্ষেপে পুরো ম্যাচটা ব্যাখ্যা করবেন?
আনন্দ: লম্বা তো বটেই, খুব টাফ ম্যাচ। ১২টা গেমের পরেও যখন আমাদের দু’জনের কাউকে এগিয়ে রাখা যায়নি, টাইব্রেকারই ছিল দু’জনকে বিচ্ছিন্ন করার একমাত্র পদ্ধতি। ব্যাপারটা দু’জনের কাছেই যুক্তিযুক্ত ছিল। এখানেও ম্যাচ যে কোনও সময় যে কোনও দিকে যেতে পারত। আমি বা আমার প্রতিপক্ষ, দু’জনেই টেনশনে ছিলাম। গেলফাঁ বারোটা গেমে তো বটেই, টাই-ব্রেকারেও খুব লড়াই করেছে। কোনও নির্দিষ্ট ট্রেন্ড ম্যাচটায় ছিল না। এত ‘টাইট’ ম্যাচ ছিল যে একটা ছোট ভুলের জন্য অনেক বড় মূল্য দেওয়া নিশ্চিত ছিল। যেমন আমি সপ্তম গেমে দিয়েছিলাম।
প্র: সপ্তম গেমে পিছিয়ে পড়ে ফিরে আসাটা টার্নিং পয়েন্ট মনে করছেন কেউ কেউ?
আনন্দ: সাত নম্বর গেমটায় হেরে যাওয়া ছিল আমার কাছে খুব বড় ধাক্কা। এই ধরনের ম্যাচে একবার হেরে গেলে তারপর ফিরে আসা খুব কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। তার উপর প্রথম দিকের গেমগুলোয় সাদা ঘুঁটি নিয়ে আমি সে ভাবে সুবিধে করতে পারছিলাম না। বরং বলব আমার ভাগ্য খুব ভাল যে অষ্টম গেমেই সমতা ফেরাতে পেরেছিলাম। ফিরে এসেছিলাম। বাকি যে চারটে গেম তার পরে ছিল, সেখানেও আমি জেতার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু বরিসের ডিফেন্স এত ভাল ছিল যে কিছু করা যায়নি। নিজেকে কখনওই ফেভারিট হিসেবে ভাবিনি।
প্র: আপনার অন্যতম সেকেন্ড সূর্য বলছেন, অষ্টম গেমের আগের রাতে সারা রাত কাজ করেছিলেন। যে ভাবে হোক ফিরে আসাই লক্ষ্য ছিল পরের ম্যাচে।
আনন্দ: আমার টিমের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। অমানুষিক পরিশ্রম করেছে সবাই। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস শুধু আমার জন্য পড়ে থেকেছে। আট নম্বর গেমটার আগের রাতে ঘুমোতে পারছিলাম না। আমাকে ঘুমোতে পাঠিয়ে ওরা কাজে বসে যায়। পর দিন ফল পেয়েছিলাম।
|
|
পাঁচ বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন* |
ফিডে র্যাপিড বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন (২০০৩) |
চেস অস্কার (৬ বার) |
দাবার এভারেস্ট, ২৮০০ এলো রেটিং ক্লাবের ষষ্ঠ সদস্য |
২০০৭ এপ্রিল থেকে ২০০৮ জুলাই টানা ১৫ মাস বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে এক নম্বর থাকার বিরল কৃতিত্ব। |
*প্রতিদ্বন্দ্বী
অ্যালেক্সি শিরোভ (২০০০), লিগে পিছনে ফেলেন ভ্লাদিমির ক্রামনিককে (২০০৭),
ভ্লাদিমির ক্রামনিক (২০০৮), ভেসিলিন টোপালোভ (২০১০), বরিস গেলফাঁ (২০১২) |
|
প্র: টাইব্রেকারে যে কেউ জিততে পারত, বলছিলেন?
আনন্দ: আগেই বলেছি, টাইব্রেকারে দু’জনেরই কাছে জেতার সুযোগ এসেছিল। আমিই প্রথমে এগিয়ে যাই। কিন্তু তার পরের গেমটায় চাপে ছিলাম। যে-কোনও ফলই হতে পারত। আসলে ম্যাচটা এত হাড্ডাহাড্ডি ছিল যে টাইব্রেকে কী হতে পারে তা নিয়ে কোনও ধারণাই আমার ছিল না। আমি জানি অনেকেই ভাবছেন যে বরিস আর আমি দু’জনেই খেলাটাকে টাইব্রেকারে নিয়ে যাওয়ার জন্য খেলছিলাম। সেটা সত্যি নয়। কিন্তু হ্যাঁ, টাইব্রেকের আগেই ফয়সালা করার জন্য কোনও রকম ঝুঁকিও আমরা কেউ নিইনি। |