হাজার টাকা মাসিক আয়ের সংসারেও সফল শুভ
মাত্র দু’বছর বয়সে বাবার মৃত্যুর পরে সংসারের হাল ধরেছেন মা। বাড়ি বাড়ি ঘুরে তিনি পরিচারিকার কাজ করেন। মাসে সাকুল্যে রোজগার হাজার খানেক টাকা। সংসারের অতলান্ত এই দারিদ্র্য শুভ সিংহের মাধ্যমিক পরীক্ষায় সাফল্যের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। হাওড়ার বাগনানের দেগ্রামের বাসিন্দা শুভ এ বছর ডিএমবি হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিল। সে পেয়েছে মোট ৫৯৭ নম্বর। তার স্কুলে এটাই সর্ব্বোচ্চ নম্বর।
শুভ পেয়েছে বাংলায় ৮৩, অংকে ৯৪, প্রকৃতি বিজ্ঞানে ৯৮, ভূগোলে ৮৫, ইংরেজিতে ৭৫, জীবন বিজ্ঞানে ৯৩ এবং ইতিহাসে ৬৯। তার বাবা রবীন্দ্রনাথ দাস ছিলেন মিষ্টি তৈরির কারিগর। দিল্লিতে একটি দোকানে কাজ করতেন তিনি। দুর্ঘটনায় ১৯৯৭ সালে সেখানেই মারা যান তিনি। তার পরে থেকে সংসার চালাতে গিয়ে অথৈ জলে পড়েন তার মা মাধবী সিংহ। শুভর এক দাদা রয়েছে। সে আরামবাগে মামার বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করে। বর্তমানে সে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র।
আর্থিক কারণে শুভর প্রথম দিকে কোনও গৃহশিক্ষক ছিল না। কিন্তু মেধা এবং চেষ্টার জোরে সে নবম শ্রেণি থেকে স্কুলের পরীক্ষায় ভাল ফল করতে শুরু করে। এরপর থেকেই তার উপরে নজর পড়তে শুরু করে শিক্ষকদের।
এক সময়ে তার আর্থিক অবস্থা এতটাই খারাপ হয়ে পড়ে যে নবম শ্রেণিতে স্কুলে ভর্তির টাকাও তার কাছে ছিল না। ফলে তার পঠন-পাঠন বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। শেষ পর্যন্ত স্কুলের শিক্ষকেরাই টাকা দিয়ে তাকে ভর্তি করিয়ে দেন। দশম শ্রেণিতেও সে একই ভাবে স্কুলে ভর্তি হয় বলে শুভ জানায়।
তার দু’জন গৃহশিক্ষক রয়েছেন। ইংরেজি এবং অঙ্ক পড়ান তাঁরা। অঙ্ক পড়ান স্কুলেরই শিক্ষক প্রশান্ত বেরা। এর জন্য তিনি বেতন নেননি। অন্য দিকে, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য পড়িয়েছেন ইংরেজি। শুভ বলে, “ইংরেজির শিক্ষকেরও বেতন নিয়মিত দিতে পারতাম না। তবুও তিনি আমাকে নিয়মিত পড়িয়েছেন।” এ ছাড়াও তাকে সাহায্য করেছেন স্কুলের শিক্ষকেরা।
প্রধান শিক্ষক আব্দুল হাই বলেন, “আমরা জানতাম ওর মধ্যে মেধা রয়েছে। তাই ওর প্রতি আমাদের আলাদা নজর ছিল।”
মাধবীদেবী বলেন, “মাত্র এক হাজার টাকা আয়। নুন আনতে পান্তা ফুরিয়ে যায়। পাঁচ বাড়িতে কাজ করে এই টাকা উপার্জন করতে হয়। সকলের সাহায্য ছাড়া ছেলে পরীক্ষায় ভাল ফল করতে পারত না।”
বিপিএল তালিকায় নাম রয়েছে এই পরিবারটির। বাড়ি তৈরির জন্য মাধবীদেবী পঞ্চায়েত থেকে ১০ হাজার টাকা সাহায্য পেয়েছেন। সেই টাকা এবং নিজের সামান্য কিছু সঞ্চয় দিয়ে কোনওমতে ইটের দেওয়াল টালির চালের বাড়ি তৈরি করেছেন। জীর্ণ সেই বাড়ি মেতে উঠেছে শুভর মাধ্যমিক পরীক্ষায় ভালো ফল করার খুশির আলোতে।
দাওয়ায় মায়ের কাছে বসে সে হাসতে হাসতে বলে, “ভবিষ্যতে বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে চাই।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.