নিজস্ব সংবাদদাতা • উলুবেড়িয়া |
বৃষ্টির জন্য হাহুতাশ করছেন হাওড়া জেলার বাদাম চাষিরা।
কেননা, প্রবল গরমে পুষ্ট হচ্ছে না বাদাম। ফলে, ব্যাপক লোকসানের আশঙ্কায় চাষিদের রাতের ঘুম উবে গিয়েছে।
আমতা-২ এবং উদয়নারায়ণপুর জেলার এই দুই ব্লকেই মূলত বাদাম চাষ হয়। বীজ বপণ শুরু হয় জানুয়ারি মাস থেকে। চলে মার্চ মাস পর্যন্ত। সাধারণত আলু চাষের পরে সেই জমি খালি ফেলে না রেখে চাষিরা বাদাম চাষ করেন। বীজ বপণ করার মাস চারেকের মধ্যেই বাদাম তুলতে শুরু করেন চাষিরা। সেই হিসেবে জানুয়ারি মাসে প্রথম পর্যায়ে যে বীজ বপণ করা হয়েছিল, তার ফলন বাড়িতে তুলতে শুরু করেছেন চাষিরা। কিন্তু ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে যে বীজ বপণ করা হয়েছিল, সেই ফসল এখনও মাঠেই পড়ে রয়েছে। সেই ফসল উঠবে জুন মাস নাগাদ। তার পরে সেই জমিতে ফের আমন ধান চাষ করবেন চাষিরা। আলু এবং আমন চাষের মধ্যবর্তী সময়ে জমি খালি ফেলে না রেখে বাদাম চাষ করার প্রবণতা আমতা-২ এবং উদয়নারায়ণপুরে বাড়ছে। এই চাষ থেকে চাষিরা বেশ কিছু টাকা বাড়তি উপার্জন করছেন। অনেক সময়ে আলু বা আমন চাষের ক্ষতি বাদাম চাষ করেয় পুষিয়েও নেন তাঁরা। কিন্তু এ বার আবহাওয়ার কারণে বাদাম চাষিদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে।
চলতি বছর উদয়নারায়ণপুরে সাড়ে তিন হাজার হেক্টর এবং আমতা-২ ব্লকে ১৮০০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ হয়েছে বলে উলুবেড়িয়া মহকুমা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। উদয়নারায়ণপুর ব্লক কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বছর জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত যে বীজ বপণ করা হয়েছে, তার প্রথম পর্যায়ের ফসল চাষিরা ঘরে তুলেছেন। ফলন বেশ ভালই হয়েছে। বিঘাপ্রতি চাষিরা ২০-২৫ কিলোগ্রাম করে বাদাম পাচ্ছেন। কিন্তু সমস্যা দেখা দিয়েছে, ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে চাষিরা যে বীজ বপণ করেছিলেন, তার ফলন নিয়ে। এই ব্লকের বাদাম চাষিদের মতে, এত গরমে বাদাম চাষে ক্ষতি হবে মনে হচ্ছে। প্রথম পর্যায়ের যে ফসল তোলা গিয়েছে, তা দিয়ে ক্ষতি পোষানো যাবে না। মনে হচ্ছে, অপুষ্ট বাদাম মিলবে এর পরে। ব্লক কৃষি উন্নয়ন আধিকারিক অভিমন্যু বারিক বলেন, “জুন মাসে যে সব বাদাম চাষিরা ঘরে তুলবেন, বৃষ্টি না হওয়ার কারণে তার ফলন ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তার পরিমাণও কম নয়। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে বৃষ্টির প্রয়োজন রয়েছে। নয়তো গাছ শুকিয়ে যাবে। বাদাম অপুষ্ট হয়ে যাবে।”
একই সমস্যা দেখা দিয়েছে আমতা-২ ব্লকেও। এখানেও প্রথম পর্যায়ে যে সব বাদাম ফলেছে, তা নিয়ে কোনও সমস্যা হয়নি। কিন্তু এখনও যে সব বাদামগাছ মাঠে রয়েছে, সেগুলি শুকিয়ে যাচ্ছে।
ব্লকের কৃষি উন্নয়ন আধিকারিক ননীগোপাল ভঞ্জ বলেন, “অবিলম্বে বৃষ্টি না-হলে বাদাম চাষিরা সমস্যায় পড়বেন।” ব্লকের অমরাগড়ির বাসিন্দা মোহিনী মণ্ডল এবং হারাধন মণ্ডল ২ বিঘা করে জমিতে বাদাম চাষ করে এখন ক্ষতির আশঙ্কায় ভুগছেন। তাঁরা বলেন, “গাছ শুকিয়ে যাচ্ছে। বাদাম আকারে ছোট হয়ে যাচ্ছে। এখনই বৃষ্টি দরকার।” একই বক্তব্য অন্য বাদাম-চাষিদেরও। |