সম্পাদকীয় ২...
ব্যক্তিগত
শ্চিম মেদিনীপুরের বাখরাবাদে সম্প্রতি একটি ইতিহাস রচিত হইয়াছে। ছোট ইতিহাস। কিন্তু এই ধরনের ছোট ইতিহাসই শেষ অবধি একটি সমাজকে বাঁচাইয়া রাখে। বাসযোগ্য রাখে এবং ভরসা দেয়, এই ভরসা যে, ভবিষ্যৎ সম্পূর্ণ তমসাবৃত নয়। বেলদা অঞ্চলের বাখরাবাদের এক দরিদ্র দম্পতি একটি ভয়াবহ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাইয়াছেন। তাঁহাদের কন্যার বিবাহ নির্ধারিত হইয়াছিল, তাহার কয়েক দিন আগেই এই বিপর্যয়। সাধারণ অবস্থায় এই বিবাহ সম্পন্ন হইত না, মুলতুবি হইত, হয়তো ভাঙিয়াই যাইত। কিন্তু মিতা পোদ্দারের বিবাহ সুসম্পন্ন হইয়াছে। এই অসাধারণ ঘটনার কৃতিত্ব সংশ্লিষ্ট অঞ্চল তথা জেলার পুলিশ কর্তাদের। থানার ও সি হইতে শুরু করিয়া জেলার পুলিশ সুপার অবধি বিভিন্ন স্তরের কর্তারা স্বতঃপ্রণোদিত উদ্যমে এই বিবাহ সম্পাদনের দায়িত্ব লইয়াছেন এবং সেই দায়িত্ব ষোলো আনার উপর আঠারো আনা পালন করিয়াছেন। পুলিশ সুপার নিজে কন্যাদান করিয়া বলিয়াছেন, সামাজিক দায়বদ্ধতা হইতেই এই উদ্যোগ।
পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ সম্পর্কে, তাহার অমানবিক ঔদাসীন্য বা অমানবিকতর দুরাচার সম্পর্কে অভিযোগের অন্ত নাই। সেই সকল অভিযোগের পিছনে বিস্তর কারণও রহিয়াছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে বাখরাবাদের ঘটনাটিকে একটি ব্যতিক্রম বলিয়াই গণ্য করিতে হইবে। এই একটি ঘটনায় সামগ্রিক ভাবে রাজ্য পুলিশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হইয়াছে, অঞ্চলের পুলিশ প্রশাসনের নম্বর বাড়িয়াছে, এমন কথা বলিলে তাহা হইবে অযৌক্তিক আবেগের কথামাত্র। দুর্নীতির দায়ে মার্কিন আদালতে অভিযুক্ত বাণিজ্য-সংস্থার পরিচালক রজত গুপ্ত সম্পর্কে বিচারপতির মন্তব্যটি এ ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক। বিচারপতি বলিয়াছেন, মাদার টেরিজা যদি ব্যাঙ্ক ডাকাতির দায়ে অভিযুক্ত হইতেন, তাহা হইলে তাঁহারও নিরপেক্ষ বিচার করিতে হইত, তিনি মাদার টেরিজা বলিয়া বিনা বিচারে ছাড়িয়া দেওয়া যাইত না। পুলিশ একটি ভাল কাজ করিয়াছে বলিয়া তাহার অন্য অনাচারের কোনও সাফাই চলিতে পারে না।
কিন্তু আবেগেরও নিজস্ব দাবি আছে, যে দাবি অনস্বীকার্য। লক্ষণীয়, সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্তারা এ ক্ষেত্রে যে উদ্যোগটি করিয়াছেন, তাহা ব্যক্তিগত উদ্যোগ, কর্তারা মেয়েটির প্রতি সমব্যথী হইয়াছেন বলিয়াই সে অনাথ হইলেও অসহায় হয় নাই। পুলিশ সুপার যে সামাজিক দায়ের কথা বলিয়াছেন, তাহা কোনও ভাবেই আইনি দায় নয়। বস্তুত, আইন বা রীতির সঙ্কীর্ণ দৃষ্টিতে দেখিলে এমন যুক্তিও খাড়া করা যাইতে পারে যে, ‘অব্যাপারে’ সময় নষ্ট করিয়া কর্তারা এবং তাঁহাদের অনুগামীরা অন্যায় করিয়াছেন। কিন্তু তাহা কেবল সঙ্কীর্ণ দৃষ্টি নয়, দৃষ্টিবিভ্রম। এই ঘটনার গুরুত্ব এইখানেই যে, পুলিশ ‘ইহা আমার কাজ নয়, আমি কেন করিতে যাইব’ ভাবে নাই, নিজেই সমস্ত দায়িত্ব কাঁধে তুলিয়া লইয়াছে। এখানেই ব্যক্তির গুরুত্ব, ব্যক্তিগত মানবিকতার তাৎপর্য। প্রতিষ্ঠান, সংস্থা, প্রশাসন, প্রত্যেকটির সার্থকতার জন্যই নিয়ম জরুরি, শৃঙ্খলা জরুরি। নিয়মশৃঙ্খলাকে তাহার প্রাপ্য মর্যাদা না দিলে কী ক্ষতি হইতে পারে, পশ্চিমবঙ্গে তাহার বহু নিদর্শন অহরহ প্রকট। কিন্তু একই সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির ভূমিকা। এই ব্যক্তিগত মানবিকতা যখন একটি ব্যবস্থাকে অনুপ্রাণিত করিতে পারে, তখনই সেই ব্যবস্থাটিও উন্নত হয়, নূতন শক্তি অর্জন করে। ‘পরিবর্তিত’ পশ্চিমবঙ্গের প্রশাসকরা কথাটি ভাবিয়া দেখিতে পারেন।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.