রাষ্ট্রপতি ভোটের আগে প্রার্থী বাছাই নিয়ে জাতীয় স্তরে তাঁর প্রভাব যখন বাড়ছে, তখন দলেই ‘বিদ্রোহের’ মুখে পড়লেন বিজু জনতা দলের প্রধান তথা ওডিশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক।
মঙ্গলবার রাতে নবীনের বিরুদ্ধে অসন্তোষ প্রকাশ করে বিজেডির প্রায় ৩০ বিধায়ককে নিয়ে বৈঠক করেন দলে তাঁর প্রতিপক্ষ বলে পরিচিত সাংসদ পেয়ারীমোহন মহাপাত্র। খবর পেয়েই পরিস্থিতি সামলাতে লন্ডন সফর কাটছাঁট করে তড়িঘড়ি দেশে ফেরার চেষ্টা করছেন মুখ্যমন্ত্রী। তার আগেই মহাপাত্রকে সতর্ক করে তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, দল ভাঙার চেষ্টার পরিণতি ভাল হবে না। বিজেপির শীর্ষ নেতারাও নবীনের পাশে দাঁড়িয়েছেন। বুধবার লন্ডনে নবীন বলেন, “আমার অনুপস্থিতিতে বিজেডিরই এক সাংসদ আমাদের সরকারকে সমস্যায় ফেলতে চাইছেন, দলে ভাঙনও ধরাতে চাইছেন। এটা ক্ষতিকর।” |
এর পরেই সুর নরম করে মহাপাত্র জানান, নবীনই বিজেডির প্রধান মুখ। সাংবাদিক বৈঠক ডেকে দাবি করেন, দল ভাঙার চেষ্টাও তিনি করেননি। শনিবার দেশে ফেরার কথা নবীনের। তবে নবীন জানিয়েছেন, যত দ্রুত সম্ভব ফিরতে চাইছেন তিনি। সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবারই দেশে ফিরতে পারেন ওডিশার মুখ্যমন্ত্রী। গোটা ঘটনায় কংগ্রেসের হাত রয়েছে বলে মনে করছেন বিজেডি নেতৃত্বের একাংশ। তবে কংগ্রেস সূত্রে জানানো হয়েছে, বিজেডির অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে তাদের কোনও বক্তব্য নেই।
বিজেডি সূত্রের খবর, নবীনের অনুপস্থিতিতে গত কাল মধ্যরাত পর্যন্ত দলের প্রায় ৩০ বিধায়ককে নিয়ে বৈঠক করেন পেয়ারীমোহন মহাপাত্র। অভিযোগ, নবীনের বিরুদ্ধে অসন্তোষকে একজোট করে দল ভাঙারও চেষ্টা করেন মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার ‘স্বপ্ন’ দেখা মহাপাত্র। কিন্তু খবর পেয়েই বিদেশ থেকে হস্তক্ষেপ করেন নবীন। তিনি জানান, দল ভাঙার চেষ্টা করলে পরিণতি ভাল হবে না। মহাপাত্রের বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ রয়েছে, তার জন্য তাঁকে জেলেও যেতে হতে পারে বলে সতর্ক করেন নবীন। তার পরেই পিছু হঠেন মহাপাত্র। আজ তিনি বলেন, “নবীনই দলের নেতা। আমি মুখ্যমন্ত্রী হতে চাই না। দল ভাঙার কোনও চেষ্টাই আমি করছি না। তবে আমলাদের ঔদ্ধত্য যে ভাবে বাড়ছে, তাতে দলের নেতাদের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে।”
গোটা ঘটনায় রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র দেখছে বিজেডি। দলীয় সূত্রের মতে, ইউপিএ-র শরিক দলের নেতা পূর্ণ সাংমাকে রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী করার জন্য জয়ললিতার পাশাপাশি সবথেকে বেশি সক্রিয় নবীনই। তার পিছনে বিজেপিরও প্রচ্ছন্ন সমর্থন রয়েছে। এই পরিকল্পনা ভেস্তে দিতেই কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীর রাজনৈতিক সচিব আহমেদ পটেল মহাপাত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করে দল ভাঙার প্রস্তাব দেন। মহাপাত্র অনেকদিনই নবীনের প্রতি ক্ষুব্ধ। সেই বিরোধকে কংগ্রেস উস্কে দিতে চায় যাতে আনুষ্ঠানিক ভাবে তারা রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী ঘোষণার আগে বিরোধীদের কৌশল ভেস্তে যায়। যদিও কংগ্রেসের মুখপাত্র রশিদ অলভির বক্তব্য, “বিজেডির অভ্যন্তরীণ বিষয়ে আমাদের কোনও বক্তব্য নেই।” |
প্রকাশ্যে মন্তব্য না করলেও গোটা পরিস্থিতিতে নজর রাখছে বিজেপি। পরিস্থিতি সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে ওডিশায় দু’জন প্রতিনিধি পাঠিয়েছেন দলের সভাপতি নিতিন গডকড়ী। দিল্লিতে বিজেপির এক শীর্ষ নেতা বলেন, “কংগ্রেসের এই চাল আমরা সফল হতে দেব না। এনডিএ ছেড়ে নবীন পট্টনায়কের বেরিয়ে যাওয়ার পিছনেও মহাপাত্র সবথেকে সক্রিয় ছিলেন। নবীনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে তিনি মুখ্যমন্ত্রীর আরও বিরাগভাজন হলেন।”
ওই বিজেপি নেতার কথায়, “গতকাল রাতে তিন মন্ত্রী-সহ যে ৩০ বিধায়ক নবীন-বিরোধিতায় একজোট হন, এখন তাঁদের সংখ্যা কমে এসেছে। এই মুহূর্তে নবীনের সঙ্গেই ৯০ জনের বেশি বিধায়কের সমর্থন রয়েছে। মহাপাত্রের সঙ্গে সর্বসাকুল্যে রয়েছেন দশ জনের মতো।”
লোকসভা নির্বাচন মাথায় রেখে বিজেপি এনডিএ-র বিস্তার চাইছে। আসন্ন রাষ্ট্রপতি ভোটকে কেন্দ্র করে তার প্রস্তুতিও শুরু করেছেন বিজেপি নেতৃত্ব। নবীন পট্টনায়কের উপরেও অনেকটা ভরসা করছে দল। লালকৃষ্ণ আডবাণী, অরুণ জেটলির সঙ্গে এখন নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন নবীন। অদূর ভবিষ্যতে মহাপাত্রের ক্ষমতা খর্ব হলে নবীনকে পাকাপাকি এনডিএ-র ছাতার তলায় আনার আশা রাখছে বিজেপি। সে কারণেই রাজ্যে তাঁর সঙ্কটে বিজেপি পাশে এসে দাঁড়াল বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।
|