ভারসাম্যের কৌশল নিয়েই এ বারে দলে নিজের কর্তৃত্ব আরও শক্ত করতে চাইছেন বিজেপি সভাপতি নিতিন গডকড়ী।
সভাপতি পদে নিজের মেয়াদ বাড়িয়ে নিতে নরেন্দ্র মোদীকে তুষ্ট করার পথে হেঁটেছিলেন গডকড়ী। মোদীকে মুম্বইয়ে দলের নীতিনির্ধারক কমিটির বৈঠকে নিয়ে যাওয়ার জন্য কর্মসমিতি থেকে সঞ্জয় জোশীর ইস্তফাও আদায় করে নিয়েছিলেন। কিন্তু তার পরেও সঞ্জয় জোশীকে উত্তরপ্রদেশের দায়িত্ব থেকে সরাননি। বরং পুরসভা নির্বাচনের আগে উত্তরপ্রদেশে সংগঠনের অঘোষিত দায়িত্ব ফের জোশীর হাতেই অর্পণ করেছেন বিজেপি সভাপতি। আবার এর ফলে মোদীর গোঁসা যাতে না বাড়ে, তার জন্য মোদী-ঘনিষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে নিয়ে আজ রাষ্ট্রপতি প্রতিভা পাটিলের সঙ্গেও দেখা করেন তিনি। গুজরাতের রাজ্যপাল কমলা বেণীওয়ালের বিরুদ্ধে নালিশ করে তাঁরা দাবি জানান, অবৈধ জমি দখলের অভিযোগ আসার পর রাষ্ট্রপতি তাঁকে অবিলম্বে অপসারণ করুন।
সাধারণত রাষ্ট্রপতি ভবনে বিজেপির প্রতিনিধি দলে লালকৃষ্ণ আডবাণী, সুষমা স্বরাজ, অরুণ জেটলি থেকে শুরু করে দলের ছোট-বড় নেতারা সকলেই থাকেন। কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ
ভাবে আজ মোদীর রাজ্যের রাজ্যপালকে অপসারণের দাবি জানাতে এই শীর্ষ নেতারা কেউই ছিলেন না। এর আগে মুম্বইয়ে দলের বৈঠকের পরে রাতের জনসভাতেও হাজির ছিলেন না আডবাণী-সুষমা। আর জেটলি সভায় গেলেও মোদীর ভাষণ শুরু হওয়া মাত্রই সভাস্থল ছেড়ে বেরিয়ে আসেন।
যদিও বিজেপির মুখপাত্র নির্মলা সীতারামনের কথায়, “আজ রাষ্ট্রপতির কাছে বিজেপির এই শীর্ষ নেতাদের যাওয়ার কোনও কর্মসূচিই ছিল না। অতীতেও রাজ্য স্তরের দাবি-দাওয়ার ক্ষেত্রে শীর্ষ নেতারা যাননি। এনডিএ বা জাতীয় স্তরের কোনও বিষয় নিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে যাওয়া হলেই সাধারণত সভাপতির সঙ্গে বিজেপির বাকি শীর্ষ নেতারা যান।”
কিন্তু গডকড়ী আজ রাষ্ট্রপতি ভবনে মোদীর দাবিপত্র বয়ে নিয়ে গিয়ে আসলে ভারসাম্যের রাজনীতিই করলেন। দলের এক নেতার কথায়, সঞ্জয় জোশীকে নিয়ে মোদীর চাপের কাছে নতিস্বীকার করতে হয়েছে গডকড়ীকে। আঁচ পড়েছে তাঁর কর্তৃত্বেও। গুজরাতের বাইরেও কী ভাবে মোদীর জনপ্রিয়তা বাড়ছে, গডকড়ী তা বিলক্ষণ দেখছেন। মোদীকে প্রধানমন্ত্রী পদের প্রার্থী করার জন্য দলের নিচু তলার কর্মীদের কাছ থেকেও প্রবল চাপ আসছে। সেই চাপের মুখে মোদীকে যদি এ বছরের শেষে জাতীয় রাজনীতিতে নিয়ে আসতে হয়, তা হলে তিনি আরও ক্ষমতাবান হয়ে উঠবেন।
তা ছাড়া মুম্বইয়ে কর্মসমিতির বৈঠকে সভাপতি পদের মেয়াদ বাড়ানো নিয়ে সংবিধান সংশোধন হলেও এখনও জাতীয় পরিষদের বৈঠকে তার অনুমোদন বাকি। সে ক্ষেত্রেও সকলের সমর্থন প্রয়োজন। তাই এক দিকে সঞ্জয় জোশীকেও তিনি যেমন গুরুত্ব দিচ্ছেন, তেমনই মোদীকেও চটাতে চাইছেন না।
গডকড়ী জানেন, সভাপতি পদে তাঁর মেয়াদ বাড়লে ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচন তাঁর নেতৃত্বেই হবে। অথচ এখনও সে ভাবে গ্রহণযোগ্য নেতাই হয়ে উঠতে পারেননি তিনি। তার উপরে দলে আডবাণী-সুষমার মতো অনেক শীর্ষ নেতাও তাঁর কৌশল নিয়ে ক্ষুব্ধ।
এই পরিস্থিতিতে সঙ্ঘের পরামর্শে সকলকে সঙ্গে নিয়েই এগোতে চাইছেন বিজেপি
সভাপতি। মুম্বই অধিবেশনের পর দিনই গডকড়ী সটান হাজির হন এনডিএ-র পুরনো শরিক শিবসেনা-প্রধান বালাসাহেব ঠাকরের বাড়িতে। সাম্প্রতিক অতীতে উভয়ের মধ্যে যে ‘ভুল বোঝাবুঝি’ হয়েছে, তা কাটাতে তৎপর
হয়েছেন তিনি। এ ভাবেই দলের পাশাপাশি এনডিএ-তেও নিজের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে সক্রিয় হয়েছেন গডকড়ী। |