নজরে জাতীয় রাজনীতি। কিন্তু নিজের রাজ্যেই নির্বাচনের আগে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে চলেছেন নরেন্দ্র মোদী।
গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রীর প্রবল প্রতিপক্ষ কেশুভাই পটেল আজ মোদী-বিরোধী গোষ্ঠীর নেতাদের নিয়ে এই প্রথম নিজের বাড়িতে বৈঠক করেন। সেই বৈঠকে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কাঁসিরাম রানা, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সুরেশ মেটা, মোদী সরকারের প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গোর্ধন জাদাপিয়াও উপস্থিত ছিলেন। মোদীর সঙ্গে বিবাদের জেরে পাঁচ বছর আগেই বিজেপি ছেড়ে নতুন দল গড়েন জাদাপিয়া। মোদী-বিরোধীরা চাইছেন, কেশুভাইরাও সেই দলে সামিল হোন। আগামী ২ জুন আমদাবাদে বিশাল জনসভায় আয়োজন করেছেন কেশুভাই। সেখানেই মোদীর বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করতে পারেন বিজেপির এই প্রবীণ নেতা।
কেশুভাইকে সরিয়ে গুজরাতে মোদীকে আনার পর থেকেই দু’জনের বিবাদ প্রকট হতে থাকে। সৌরাষ্ট্র এলাকায় পটেল ও আদিবাসীদের মধ্যে কেশুভাইয়ের যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে। গুজরাতের নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে, ততই কেশুভাইয়ের মোদী-বিরোধিতার সুর তীব্র হচ্ছে। এই কেশুভাইকে উস্কে দেওয়ার জন্যই সঞ্জয় জোশীর উপরে কোপ পড়ে মোদীর। সম্প্রতি মুম্বইয়ে জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে সেই সঞ্জয় জোশীর ইস্তফা আদায় করাতে বাধ্য করেন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী। এই ঘটনার পরেই আরও উজ্জীবিত হন কেশুভাইরা। তিনি চাইছেন, দল তাঁকে বহিষ্কার করুক, যাতে আগামী নির্বাচনে মানুষের সহানুভূতি আদায় করে মোদীকে বেগ দেওয়া সম্ভব হয়।
বিজেপির এক শীর্ষ নেতার কথায়, “কেশুভাই দলের প্রবীণ নেতা। তাঁর জনভিত্তিও রয়েছে। গুজরাতের শহর এলাকায় মোদীর আধিপত্য থাকলেও গ্রামীণ ও আদিবাসী এলাকায় তাঁর ভোটব্যাঙ্কে ক্ষয় ধরেছে। সম্প্রতি একটি উপনির্বাচনেও তার প্রতিফলন ঘটেছে, যেখানে কংগ্রেসের কাছে আসন খুইয়েছে বিজেপি। মোদীর উপর পটেলদের ক্ষোভেরও বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল সেই উপনির্বাচনে। তার পর থেকে কংগ্রেস নেতারা একজোট হয়ে গোটা রাজ্যে প্রচার শুরু করেছেন। কেশুভাইকে উস্কে দেওয়ার কাজটিও কংগ্রেস করে যাচ্ছে সুকৌশলে। কিন্তু গত নির্বাচনে মোদীর দলের বিক্ষুব্ধদের টিকিট দিয়ে হাত পুড়িয়েছিল কংগ্রেস। এ বারে সেই ভুল সম্ভবত তারা করবে না। কিন্তু নিজেদের ভিত শক্ত করার পাশাপাশি কেশুভাইদের মতো নেতাদের দিয়ে মোদীকে দুর্বল করার সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইছে না কংগ্রেস।
বিজেপি মুখপাত্র নির্মলা সীতারামন বলেন, “কেশুভাই পটেল আমাদের দলের সম্মানিত নেতা। দল গোটা পরিস্থিতির উপরে নজর রাখছে। দলের নেতৃত্ব উপযুক্ত সময়ে উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নেবে।” কিন্তু দলের কাছে সমস্যা হল, গুজরাতে মোদী দলের অন্য কাউকে নাক গলাতে দেন না। রাজ্যের সঙ্ঘের নেতাদের সঙ্গেও মোদীর সম্পর্ক ভাল নয়। এই পরিস্থিতিতে মোদীর রাজ্যে গিয়ে তাঁর সঙ্কট মোকাবিলা করা অন্য কারও পক্ষে সম্ভব নয়। সঙ্কট মেটাতে হবে খোদ মোদীকেই। তবে মোদী যে ভাবে সঞ্জয় জোশীকে ইস্তফা দেওয়াতে বাধ্য করিয়েছেন, ঠিক সেই ভাবে যদি কেশুভাইকেও দল থেকে বরখাস্ত করার ব্যাপারে নেতৃত্বের উপরে চাপ দেন, তখন নিতিন গডকড়ীদের পক্ষেও তাঁর অবস্থানে সায় দেওয়া ছাড়া খুব বেশি পথ থাকবে না।
বিজেপি নেতৃত্বের আশঙ্কা, কেশুভাই বিজেপির সঙ্গ ছাড়লে গুজরাত নির্বাচনে দলের ক্ষতি হবে। গত বারের থেকে আসনও কমবে। এতে অবশ্য মোদীর কর্তৃত্ব কিছুটা খাটো হলে বিজেপি নেতৃত্বের অনেকেই খুশি হবেন। কিন্তু সামগ্রিক ভাবে একের পর এক রাজ্যে যদি বিজেপি দুর্বল হয়, তাতে লোকসভা নির্বাচনেও তার খেসারত দিতে হবে বলে আশঙ্কা রয়েছে গডকড়ীদের। |