দু’বছর আগে ‘এপ্রিল-ফুল’-এর দিনে তিনি সেনাপ্রধানের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। কলকাতা থেকে দিল্লিতে এসে সেনাবাহিনীর মধ্যে ‘শুদ্ধকরণ’-এর ডাক দিয়েছিলেন। এই দু’বছরে তিনি যে গোটা সরকারকে ‘এপ্রিল-ফুল’ করে ছেড়েছেন, তাতে সংশয় নেই। ২৬ মাসের জমানায় জেনারেল বিজয়কুমার সিংহকে নিয়ে যে পরিমাণ বিতর্ক হয়েছে, তাতে তিনি যে সমস্ত পূর্বসূরিকে পিছনে ফেলে দিয়েছেন, তা নিয়েও কোনও বিতর্ক নেই। তিনিই প্রথম সেনাপ্রধান, যিনি কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার সকালে ইন্ডিয়া গেটের অমর জওয়ান জ্যোতিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য জানাবেন তিনি।
বেলা ১১টায় সাউথ ব্লকের সামনে ভি কে সিংহকে ‘গার্ড অফ অনার’ দেওয়া হবে। তার পরেই অবসর নেবেন তিনি। নতুন সেনাপ্রধানের দায়িত্ব নিয়ে দিল্লি পৌঁছে গিয়েছেন বিক্রম সিংহ।
|
ভি কে সিংহ |
প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, অধিকাংশ পূর্বসূরি যে ভাবে সরকারের ধামাধরা হয়ে থেকেছেন, ভি কে সিংহ সে পথে হাঁটেননি। উল্টে বার বার বাহিনীর আধুনিকীকরণের স্বার্থে সরকারকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন। আবার অন্য অংশের মতে, ভি কে সিংহের জমানায় যাবতীয় বিতর্কের প্রধান কারণ সেনা-অফিসারদের নিজেদের মধ্যে লড়াই। কিন্তু ৪২ বছরের কর্মজীবনের পর অবসর নেওয়ার আগের দিন ভি কে বলেছেন, “আমি চাই মানুষ আমাকে এক জন সাধারণ সেনা হিসেবেই মনে রাখুক।” নতুন সেনাপ্রধানের মতো ভি কে-ও আগে ইস্টার্ন কম্যান্ডের দায়িত্বে ছিলেন। ভি কে’র আশা, আধুনিকীকরণের মাধ্যমে সেনাবাহিনীর দক্ষতা বাড়ানোর যে কাজ তিনি শুরু করেছিলেন, নতুন প্রধান তা এগিয়ে নিয়ে যাবেন। কিন্তু, বিজয়কুমার যে শুদ্ধকরণ-এর পথে হেঁটেছেন, বিক্রম সিংহ তা চান কি না, স্পষ্ট নয়। তবে, সরকারের সঙ্গে সংঘাতে নামা যে সেনাদের কাজ নয়, তা আভাসে বুঝিয়ে দিয়েছেন বিক্রম। মারুফ রাজার মতো প্রতিরক্ষা-বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, ভি কে সিংহের বিরুদ্ধে যে ভাবে সবাই এককাট্টা হয়েছে, তাতে ভবিষ্যতে আর কেউ মাথা তুলতে চাইবে না।
আবার নিজের জন্মসাল নিয়েই বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন ভি কে। বিতর্ক সুপ্রিম কোর্ট অবধি গড়ায়। সেখানেই থামেননি। বাহিনীকে নিম্নমানের ট্রাক বিক্রি করার চেষ্টায় তাঁকে এক অবসরপ্রাপ্ত অফিসার ১৪ কোটি টাকা ঘুষ দিতে চেয়েছেন বলে প্রকাশ্যে অভিযোগ তুলেছেন। উল্টো দিকে সেনার তরফে প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর অফিসে আড়ি পাতার চেষ্টা হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। আবার দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেহাদে সুকনা জমি কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত অফিসারকে বরখাস্তের অনুমতি দিয়েছেন। সব থেকে বেশি বিতর্ক হয়েছে সেনার অস্ত্রসম্ভারের হাঁড়ির হাল নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে লেখা তাঁর চিঠি নিয়ে। কী ভাবে এই ‘টপ সিক্রেট’ চিঠি ফাঁস হল, তা নিয়ে গোয়েন্দা-তদন্ত চলছে। |