দুর্নীতি রুখতে বাস ডিপোগুলিতে জাল পেতেছিল কলকাতা রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগম (সিএসটিসি)। কর্তৃপক্ষের দাবি, সুফলও মিলছে। সম্প্রতি জালে পড়া ২০ জন কন্ডাক্টরের সাজাও হয়।
বাসযাত্রীদের একাংশ টিকিট না কেটে নির্দিষ্ট ভাড়ার থেকে কমে কন্ডাক্টরের সঙ্গে রফা করেন। এতে দু’পক্ষের লাভ হলেও বঞ্চিত হয় সিএসটিসি। এত দিন অভিযোগ খতিয়ে দেখা বা সাজা দেওয়া হত না বলে জানান কর্তৃপক্ষ। অভিযোগ পাওয়ার ৫ বছরের মধ্যে ব্যবস্থা না নিলে আইনানুযায়ী আর এগোনো যেত না। নিগমের এমডি প্রসন্নকুমার মণ্ডল এ কথা জানিয়ে বলেন, “নানা সীমাবদ্ধতায় পূর্বতনেরা দোষী কন্ডাক্টরদের ঘাঁটাতে চাননি। বিচারে সাজাপ্রাপ্তেরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে (‘অ্যাপিলেট’) যান। সেখানে প্রতিটি শাস্তিই বহাল। তিন মাসে ২০ জন দোষীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি।”
ডেপুটি ডিরেক্টর (অপারেশনস্) সমীর বিশ্বাস বলেন, “নিগমের ১১টি ডিপোকেই সতর্ক করা হয়েছে। টহল বাড়ছে। ভ্রাম্যমাণ নজরদারেরা ডিপোয় ঢোকার আগে আচমকা বিভিন্ন রুটের বাসে হানা দিচ্ছেন। দূরপাল্লার বাসেও অভিযান চলছে। হাতেনাতে ধরা পড়ছেন অনেকে। অতীতে তাঁদের বিরুদ্ধে আনা দুর্নীতির নানা অভিযোগের প্রসঙ্গ যুক্ত করে বর্তমানে সাজা দিচ্ছেন কর্তৃপক্ষ।” |
কী ভাবে ধরা হচ্ছে দোষীদের? প্রসন্নবাবু বলেন, “নিয়মানুযায়ী কর্মরত কন্ডাক্টরদের সঙ্গে টাকা থাকার কথা নয়। বাসের সংশ্লিষ্ট ট্রিপে কত টাকার টিকিট বিক্রি হয়েছে, তা টিকিটের নম্বর দেখে জানা যায়। আচমকা হানায় কন্ডাক্টরের ব্যাগে বেশি টাকা মিললে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত হয়। অভিযুক্তকে কারণ দর্শানোর সুযোগ দিয়ে কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেন। প্রয়োজনে কন্ডাক্টরের দেহ তল্লাশিও হয়।” তিনি আরও বলেন, “অভিযোগের গুরুত্ব বিচার করে দোষীদের ২-১০ বছর পর্যন্ত বেতন বৃদ্ধিতে কোপও পড়েছে।”
১৯৬০-এর সর্বভারতীয় সড়ক পরিবহণ আইনের ভিত্তিতে তৈরি হয়েছে সিএসটিসি-র সার্ভিস রেগুলেশন আইন। এমডি-র বিচার অপছন্দ হলে সাজাপ্রাপ্তেরা চেয়ারম্যানের কাছে বিচার চাইতে পারেন। নিগমের চেয়ারম্যান তথা বিধায়ক তাপস রায় বলেন, “সংস্থার স্বার্থ ও মানবিকতা দু’টি দিকই দেখা হয়। নিগমকে লাভের মুখ দেখতেই হবে। তাই দুর্নীতির সঙ্গে আপস করা হবে না। এ নিয়ে দলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার সহায়ক হচ্ছে।”
পাশাপাশি, টিকিট বিক্রির আয় বাড়াতে প্রতিটি ডিপোয়, প্রতি ট্রিপের হিসেব দেখে কোন কন্ডাক্টর কম আয় করছেন, জানা হচ্ছে। বাস খারাপের অজুহাতে এক শ্রেণির চালক-কন্ডাক্টর যাত্রী নামিয়ে মাঝপথে বসে যেতেন। সমীরবাবু বলেন, “এমন কর্মীদের কাছে কম টিকিট বিক্রি বা বাস খারাপের কারণ জানতে চাইছেন কর্তৃপক্ষ। উত্তর যাচাই করা হচ্ছে। প্রয়োজনে ওই কর্মীর কাজের নির্ঘণ্ট বদলে নজর রাখা হচ্ছে। আগে কখনও এত কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।” |