মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজ্যের সঙ্গে ঘনিষ্ট সহযোগিতার সম্পর্ক রেখে চলতে আগ্রহী মার্কিন প্রশাসন। মার্কিন বিদেশসচিব হিলারি ক্লিন্টন মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি পাঠিয়ে সেটাই আরও এক বার বোঝালেন। আরও এক বার জানালেন, পশ্চিমবঙ্গ তার সম্ভাবনার পূর্ণ সদ্ব্যবহারের ক্ষেত্রে যাতে আমেরিকাকে পাশে পায়, সে দিকে তাঁর নজর থাকবে।
মাত্র এক দিন আগে এ রাজ্যের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর শাহরুখ খানের নাইট রাইডার্স টিমকে ঘিরে উদ্বেল উদ্যাপনে মেতেছিল কলকাতা। পুরোপুরি সরকারি ব্যবস্থাপনায় আয়োজিত সেই অনুষ্ঠান সফল ও শান্তিপূর্ণ হওয়ায় তার যাবতীয় কৃতিত্ব আদায় করে নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এর ২৪ ঘণ্টা না কাটতেই বুধবার সুদূর আমেরিকা থেকে মার্কিন বিদেশসচিব হিলারি ক্লিন্টন চিঠি দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে জানালেন, এ রাজ্যের পাশে দাঁড়াতে আগ্রহী তাঁর দেশ।
এক পাতার চিঠিটি গত ১৫ মে লেখা। তাতে মমতাকে ‘প্রিয় মুখ্যমন্ত্রী ম্যাডাম’ বলে সম্বোধন করে হিলারি লিখেছেন, ‘আমার কলকাতা সফরের সময় আপনার আতিথেয়তার জন্য ধন্যবাদ। আপনার সঙ্গে দেখা হওয়া এবং কথাবার্তা আমার খুবই ভাল লেগেছে। শিকাগো এবং কলকাতার মধ্যে যে ইতিহাসের যোগ রয়েছে, তা নিয়ে এবং আমাদের ভবিষ্যৎ আকাঙ্ক্ষা নিয়ে যে আলোচনা হয়েছিল, তা খুবই উৎসাহব্যঞ্জক।’ মমতার সঙ্গে বৈঠকে প্রাসঙ্গিক ভাবেই উঠে এসেছিল বিনিয়োগের প্রসঙ্গ। পশ্চিমবঙ্গে কোন কোন ক্ষেত্রে অর্থ বিনিয়োগ থেকে প্রযুক্তি সহায়তা করতে পারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, দুই প্রান্তের দুই নেত্রীর মধ্যে সে দিন তাই নিয়ে অনেক কথা হয়েছিল। পরে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখানে লগ্নি করতে চায়। পশ্চিমবঙ্গকে ‘অংশীদার রাজ্য’ হিসেবে পেতে আগ্রহী তারা।
ক্লিন্টনের চিঠিতেও তার রেশ রয়েছে। তিনি লিখেছেন, ‘পশ্চিমবঙ্গ যাতে তার ক্ষমতার পূর্ণ সদ্ব্যবহার করতে পারে এবং সেটা করার ক্ষেত্রে তারা যাতে আমেরিকাকে পাশে পায়, সে দিকে আমার নজর থাকবে। আপনার নিজের আঁকা যে সুন্দর ফুলের ছবি, বই এবং বস্ত্র আমাকে উপহার দিয়েছেন, তার জন্য ধন্যবাদ। এগুলো আমাকে বাংলার সমৃদ্ধশালী ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির কথা মনে করাবে।’
এই চিঠি পেয়ে স্বভাবতই খুশি মুখ্যমন্ত্রী। তবে লগ্নির বিষয়টি নিয়ে আমেরিকার সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ চান তিনি। মহাকরণের খবর, হিলারির সঙ্গে কথা অনুযায়ী যদি সে দেশ থেকে বিনিয়োগের নির্দিষ্ট কোনও প্রস্তাব আসে, তবে রাজ্য তা গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করতে প্রস্তুত।
গত ৭ মে ঢাকা থেকে দিল্লি যাওয়ার পথে এক দিনের সফরে কলকাতায় এসেছিলেন হিলারি। কেন তিনি ভারতের বিশেষ একটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছেন, তার ব্যাখ্যা দিয়ে ক্লিন্টন সে দিন মমতাকে বলেছিলেন, “নিউ ইয়র্কের ‘টাইম’ ম্যাগাজিনের অনুষ্ঠানে (এ বছর ওই পত্রিকা দু’জনকেই বিশ্বের ১০০ জন প্রভাবশালী মহিলার তালিকায় রেখেছে) ভেবেছিলাম আপনার সঙ্গে দেখা হবে। আপনি সারা জীবন লড়াই করেছেন শুনে দেখা করার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু আপনি যাননি বলে আমিই চলে এলাম।”
মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর গত এক বছরে মমতাকে আমেরিকা যাওয়ার জন্য বারবার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। কিন্তু স্রেফ আমন্ত্রণ রক্ষা করার জন্য তিনি সেই দেশে যেতে চান না। ঘনিষ্ঠ মহলে তিনি বলেছেন, লগ্নির যদি কোনও নির্দিষ্ট প্রস্তাব আসে, তা হলে তাঁর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যাওয়াটা অর্থবহ হতে পারে। হিলারির চিঠির জবাবে মুখ্যমন্ত্রী যে চিঠি দেবেন, সেখানেও বিনিয়োগের নির্দিষ্ট প্রস্তাবের ইঙ্গিত থাকতে পারে বলে মহাকরণের খবর।
আগামী জুলাই মাসে প্রবাসী বাঙালিদের একটি অনুষ্ঠান হবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রকে যেতে বলেছেন মমতা। সেই অনুষ্ঠানে ‘গন্তব্য পশ্চিমবঙ্গ’-এর পক্ষে তথ্যসমৃদ্ধ ‘প্রেজেনটেশন’ তুলে ধরবেন অর্থমন্ত্রী। |