সিপিএম চুপ, জমি বুঝে
নরমে-গরমে বাকি দুই
ভোটের আর তিন দিন বাকি। প্রচারের মোটে এক দিন।
গত বছরও যে দুর্গাপুর ভোটের আগে লাল নিশানে ছেয়ে থাকত, দেওয়াল ভরে যেত কাস্তে-হাতুড়ি-তারায়, সেখানে এ বার সিপিএম যেন স্রেফ গায়েব।
বরং দাপিয়ে বেড়াচ্ছে নতুন শাসকদল তৃণমূল। সর্বত্র তাদের সশব্দ, বহুবর্ণ উপস্থিতি। সেই সঙ্গে সরকারে তাদের শরিক, এই ভোটে শত্রু কংগ্রেসও পাল্লা দিচ্ছে। প্রতি বারের মতোই সামান্য দু’এক জায়গায় উঁকি দিচ্ছে বিজেপি-র পদ্ম।
সিপিএম এ বার গোড়া থেকেই অভিযোগ করে আসছে, তাদের প্রচার করতে দেওয়া হচ্ছে না। প্রতিটি ওয়ার্ডে তাদের কণ্ঠরোধ করছেন শাসকদলের লোকজন। এমনকী প্রাক্তন বিধায়ক, পুরভোটে বামেদের অন্যতম ‘প্রধান’ মুখ বিপ্রেন্দু চক্রবর্তীও নিজের ওয়ার্ডে বিশেষ প্রচার করতে পারেননি। দেওয়াল লেখা যায়নি। মিছিল করতে হয়েছে পুলিশের পাহারায়।
প্রচারের ঢ্যাঁড়া। নিজস্ব চিত্র।
তৃণমূল পাল্টা বলছে, তারা কাউকে ‘বাধা’ দেয়নি। কিন্তু গত ৩৪ বছর ধরে ‘মার খাওয়া’ সাধারণ মানুষই সিপিএমকে দেওয়াল ছাড়ছেন না। তাঁদের ‘বিতৃষ্ণা’ দেখেই সিপিএম প্রচারে যেতে পারছে না। তা বলে ফাঁকা মাঠে গোল করতে পারছে না ঘাসফুল। এলাকার বুঝে তারা যেমন নানা দাবি-আশ্বাসের ফুলকি তুলছে, পাঞ্জা কষছে কংগ্রেসের হাত-ও।
৪৩ ওয়ার্ডের দুর্গাপুর পুরসভার বেশির ভাগটাই শহরাঞ্চল। তার মধ্যে মল-মাল্টিপ্লেক্সে শোভিত ‘আধুনিক’ম এলাকা যেমন আছে, বস্তিও আছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে। শহরের গায়ে লেগে থাকা কিছু গ্রাম। আর সর্বোপরি ডিএসপি টাউনশিপ তথা শিল্পতালুক। এক-এক এলাকার সমস্যা-আকাঙ্ক্ষা আলাদা। তাই প্রচারের ভাষাও যাচ্ছে পাল্টে।
ডিএসপি টাউনশিপে নাগরিক পরিষেবা পুরসভার হাতে নেই। কিন্তু ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা বস্তির মন জয়ে কংগ্রেস-তৃণমূল উভয়েই লড়ে যাচ্ছে। টাউনশিপ ও তার বাইরে মিলিয়ে মোটামুটি ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ৯, ২১, ৩১, ৩৩, ৩৭ ও ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডে বস্তি রয়েছে। বেশির ভাগেই বামফ্রন্টের কাউন্সিলর। তাঁদের সাফাই, অধিকাংশ এলাকা ডিএসপি বা ডিপিএলের আওতায় থাকায় ‘ইচ্ছা’ থাকা সত্ত্বেও আইনি বাধায় সব ‘কাজ’ করা যায়নি। এখন সিপিএম যখন ‘চুপ’, বিরোধীরা কিন্তু অনুন্নয়নকেই বড় করে দেখাচ্ছেন। রাস্তার দুর্দশা থেকে শৌচাগারের অভাব, সবই এসেছে প্রচারে।
গ্রাম রয়েছে ১, ২, ১০, ৩১ নম্বর ওয়ার্ড। সেখানে আবার তোলা হচ্ছে কৃষির উন্নতি এবং একশো দিনের কাজের কথা। যেমন, ১ নম্বর ওয়ার্ডের রঘুনাথপুর, ধোবিঘাট, পারুলিয়া, কমলপুর, বিজপাড়া মূলত কৃষি নির্ভর। বিরোধীদের নালিশ, এ রকম সব এলাকায় সিপিএম কাউন্সিলর সেচের ব্যবস্থা করেননি। বাকি ওয়ার্ডগুলিতেও ঘুরে-ফিরে সেই কথাই তোলা হচ্ছে। একশো দিনের কাজে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে বলেও অভিযোগ করছেন প্রার্থীরা। ১৪ থেকে ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে ছড়ানো পুরনো বাজার এলাকা বেনাচিতিতে আবার অগ্রাধিকার পাচ্ছে ব্যবসার বিভিন্ন সমস্যা। ঘিঞ্জি এলাকা হওয়ায় ভোটে জিতলে এলাকা সাজানোর ঢালাও প্রতিশ্রুতিও দিচ্ছে ঘাসফুল-তেরঙ্গা।
রাতুরিয়া-অঙ্গদপুর শিল্পতালুক যেখানে, সেই ৩৭ ও ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডে আর সব ছাপিয়ে ক্ষোভের কেন্দ্রে আছে দূষণ। গত এক দশক ধরে বামেদের দায়িত্বজ্ঞানহীন ‘শিল্পায়নের’ ধাক্কাতেই বিষবাষ্পে বাতাস ভারী অভিযোগ তুলছে তাদের বিরোধীরা। যদিও এলাকার মানুষের একটা বড় অংশের খেদ, ডান-বাম কোনও পক্ষই তাঁদের কথা ভাবে না। বিদায়ী মেয়র রথীন রায় (এ বার আর দাঁড়াননি) অবশ্য তা পুরোপুরি মানতে রাজি নন। তাঁর দাবি, “প্রথম দিকে দূষণের পরিমাণ খুব বেশি ছিল। বারবার সতর্ক করে, কারখানাগুলির উপরে চাপ সৃষ্টি করে আংশিক নিয়ন্ত্রণ করা গিয়েছে।” তবে তিনি এ-ও বলেন, “এখনও যা চলছে তা ভয়াবহ। কারখানা মালিকরা মুনাফা ছাড়া কিছু বুঝতে না চাওয়াতেই সমস্যা। তবু চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।”
তথাকথিত ‘আধুনিক’ দুর্গাপুর থাকে বিধাননগর এবং সিটি সেন্টারে। বিশেষত সিটি সেন্টারের উন্নতির জন্য আগাগোড়া কৃতিত্ব দাবি করে সিপিএম। শপিং মল, মাল্টিপ্লেক্স, তারকা হোটেল কী নেই সেখানে। সিটি সেন্টার অর্থাৎ ২২ নম্বর ওয়ার্ড থেকেই এ বার দুর্গাপুর পশ্চিমের বিধায়ক তথা ‘মেয়র পদপ্রার্থী’ অপূর্ব মুখোপাধ্যায়কে দাঁড় করিয়েছে তৃণমূল। কিন্তু তাঁর অভিযোগ, “শুধু সিটি সেন্টার-কেন্দ্রিক উন্নতি হয়েছে। আশপাশের অঞ্চলে কোনও উন্নতি হয়নি। সেখানকার মানুষ নাগরিক পরিষেবা থেকে বঞ্চিত।” বোর্ড দখল করতে পারলে আনাচে-কানাচে উন্নয়ন ছড়িয়ে দেবেন বলে তাঁর আশ্বাস।
বিপ্রেন্দুবাবুরা বারবার অনুযোগ করছেন, জনতার কাছে তাঁদের পৌঁছতেই দেওয়া হচ্ছে না। যদি তা সত্যি বলে ধরেও নেওয়া যায়, পৌঁছতে পারলে তাঁরা কী বলতেন? গত দেড় দশক ধরে ‘সুতোর টানে’ যিনি পুরসভা চালিয়ে এসেছেন বলে জনশ্রুতি, সেই বিপ্রেন্দুবাবুর জবাব, “তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে গত এক বছর ধরে রাজ্যে কী হচ্ছে, তা মানুষ দেখছেন। আর কংগ্রেস তো কেন্দ্রে বসে পেট্রোল-ডিজেল থেকে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস সবেরই দাম বাড়িয়ে চলেছে। মানুষই স্থির করবেন, কারা তাঁদের সঙ্গে আছেন।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.