|
|
|
|
|
কংগ্রেসকে সমর্থন নয়, ভোটে
মেরুকরণ চেয়ে বার্তা তৃণমূলের
সুব্রত সীট • দুর্গাপুর |
|
কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী তাদের। রাজ্যের পুরমন্ত্রীও। আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদের (এডিডিএ) রাশও তাদেরই হাতে।
‘ত্র্যহস্পর্শে’ দুর্গাপুরে ‘শরিক’ ও ‘শত্রু’ নিকেশ করতে নেমেছে তৃণমূল। সেই দুর্গাপুর, যা কলকাতার পর দক্ষিণবঙ্গে উন্নয়ন ও প্রগতির অন্যতম ‘মুখ’। শিল্পপতিদের ভবিষ্যৎ গন্তব্য হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে যে শহরকে।
আগামী রবিবার আরও যে পাঁচ পুরসভায় ভোট হতে চলেছে, তার মধ্যে দুর্গাপুর ব্যতিক্রম। ডিএসপি-র ইস্পাতনগরী আর তার বাইরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা বস্তিতে বাস করে এক দুর্গাপুর। কিছুটা পুরনো, কিছু মলিন। আর বিধাননগর-সিটি সেন্টারে শপিং মল, মাল্টিপ্লেক্সে ঝকঝকে ভবিষ্যৎমুখী দুর্গাপুর। এই পুরভোটে শিল্পশহর নিজেই এক চরিত্র, যার প্রধান দাবি আরও উন্নয়ন।
আগাগোড়া বামদখলে থাকা পুরসভায় প্রচারে নেমে প্রধান শাসকদল তৃণমূল যে কেন্দ্র-রাজ্য-এডিডিএ ‘উন্নয়নের সরলরেখা’ তৈরির চেষ্টা করবে, সেটা স্বাভাবিক। সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী থেকে রেলমন্ত্রী মুকুল রায়, একযোগে বলছেন, “ভাল কাজ পেতে হলে তৃণমূলকেই ভোট দেবেন।” মনে করিয়ে দিচ্ছেন, শহরের দুই বিধায়কও তৃণমূলের। যে ‘বার্তা’র নিহিত অর্থ কংগ্রেস নেই এখানে! মুকুলবাবুর কথায়, “সিপিএম যা করে গিয়েছে, তার পরেও যদি কারও ওদের ভোট দিতে ইচ্ছে করে তো দেবেন। কিন্তু সিপিএমের উচ্ছিষ্টভোগী কাউকে ভোট দেবেন না।” ইঙ্গিত স্পষ্টতই কংগ্রেসের দিকে। |
|
দুর্গাপুরের ৪২ নম্বর ওয়ার্ড। —নিজস্ব চিত্র |
ছয় পুরসভার মধ্যে শুধু দুর্গাপুরেই ঢাক পিটিয়ে ‘জোট’ করতে নেমেছিল সরকারের দুই শরিক কংগ্রেস-তৃণমূল। কিন্তু আসন নিয়ে দর কষাকষিতে তা ভেস্তে গিয়েছে। বামফ্রন্ট ও তৃণমূল সব আসনেই (৪৩টি) প্রার্থী দিয়েছে। কংগ্রেস দিয়েছে ৩৫টিতে। প্রচারে ‘শত্রু’ সিপিএমের চেয়ে ‘শরিক’কেই বেশি আক্রমণ করছে দু’পক্ষ। উদ্দেশ্য, যথাসম্ভব বেশি আসনে ত্রিমুখী (বিজেপি ৩০ আসনে প্রার্থী দিলেও তেমন শক্তি নেই) লড়াইকে কার্যত ‘দ্বিমুখী’ লড়াইয়ে পরিণত করা। ভোট কাটাকাটি এড়ানো।
বিধানসভা ভোটে কংগ্রেস-তৃণমূল জোটের পক্ষে মেরুকরণই বামফ্রন্টকে হটিয়ে বিরোধী জোটকে ক্ষমতায় এনেছিল। ২০০৭ সালে পুর নির্বাচনে বামফ্রন্ট ৩৭টি আসন পেলেও বিধানসভা ভোটে বাম প্রার্থীরা ‘লিড’ পান মাত্র ১০ ওয়ার্ডে। এ বারও তার পুনরাবৃত্তি দেখতে চান তৃণমূল নেতারা। কিন্তু বিনা জোটে তা কতটা সম্ভব, সংশয় থাকছেই।
সংশয়ের একটা কারণ শ্রমিক সংগঠনে তৃণমূলের ‘একাধিপত্য’ এখনও প্রতিষ্ঠিত না-হওয়া। শহরের ১০টি ওয়ার্ড জুড়ে ডিএসপি টাউনশিপ। সংস্থার কর্মী প্রায় ১১ হাজার। সেপ্টেম্বরে সেখানে ওয়ার্কস কমিটির ভোটে সিটু এবং তৃণমূল প্রভাবিত আইএনটিটিইউসি ৩৯ শতাংশ করে ভোট পায়। কিন্তু ২০ শতাংশ কংগ্রেস প্রভাবিত আইএনটিইউসি-র হাতে রয়ে গিয়েছে। অপর রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ডিপিএলেও কংগ্রেসের শক্তি রয়েছে। গত এপ্রিলে অ্যালয় স্টিল কো-অপারেটিভ সোসাইটির নির্বাচনে আইএনটিইউসি ৫২ শতাংশ ভোট পায়। বাকিটা সিটু। তৃণমূলের সংগঠন সেখানে এখনও তৈরি হয়নি। প্রদেশ কংগ্রেস সদস্য তথা শ্রমিকনেতা বংশীবদন কর্মকারের দাবি, “বিভিন্ন কারখানায় তৃণমূল এখনও দুর্বল। যারা মেরুকরণের কথা বলছে, তারা বাস্তব অস্বীকার করছে।” আইএনটিটিইউসি-র বর্ধমান জেলা সভাপতি প্রভাত চট্টোপাধ্যায়ের অবশ্য দাবি, “সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থায় এখন আমরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ।”
তবে শুধু শ্রমিক সংগঠন দিয়ে কি আর ভোট হয়? টাউনশিপ-সহ প্রায় সব ওয়ার্ডে নাগরিক চাওয়া-পাওয়ার ভিন্ন সমীকরণও আছে। শহরের দুই ‘অভিজাত’ এলাকা বিধাননগর ও সিটি সেন্টারে গত পুরভোটের তুলনায় বিধানসভা ভোটে প্রায় পাঁচ হাজার করে ভোট খুইয়েছে বামফ্রন্ট। পুর-এলাকায় মাত্র ১০টি ওয়ার্ডে ‘লিড’ ধরে রাখতে পেরেছে তারা। এ বার দেওয়াল লিখন থেকে মিটিং-মিছিল প্রচারের দৌড়ে তারা খানিকটা ‘ব্যাকফুটে’। যার কারণ হিসেবে বারবার ‘সন্ত্রাসে’র অভিযোগ করছে সিপিএম। যদিও তৃণমূল তাতে আমল দিতে যথারীতি নারাজ। তবে রাজ্যে পালাবদলের আগে সিপিএমের বিরুদ্ধে যেমন সিন্ডিকেট-দুর্নীতি বা দাদাগিরির অভিযোগ উঠত, নতুন শাসকের বিরুদ্ধে খানিকটা হলেও তা উঠতে শুরু করেছে। বিভিন্ন প্রশ্নে মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য থেকে কার্টুন-কাণ্ড আমজনতার মনে কতটা দাগ কেটেছে তার পরীক্ষাও হবে পুরভোটে। এখনও ‘পরিবর্তনের হাওয়া’ না কি ‘হাওয়ার পরিবর্তন’? উত্তর দেবে দুর্গাপুর। |
|
|
|
|
|