|
|
|
|
|
জাঁহাপনা জাফরান |
চিকিৎসাবিজ্ঞান, সৌন্দর্যশাস্ত্রে তিন সহস্রাব্দ ধরে জাফরান
রাজত্ব চলছে। মসালা ম্যাজিক-এ তারই রূপ-গুণ বন্দনা। |
চিকিৎসাবিজ্ঞান, সৌন্দর্যশাস্ত্রে তিন সহস্রাব্দ ধরে জাফরান রাজত্ব চলছে। মসালা ম্যাজিক-এ তারই রূপ-গুণ বন্দনা।
ক্রুকাস স্যাটিভাস নামক ফুল থেকে জাফরানের জন্ম। খ্রিস্টপূর্ব সপ্তম শতাব্দী থেকে জাফরানের ব্যবহার আরম্ভ হয়। প্রথম শুরু করে আসিরীয় সভ্যতা, সেই ব্রোঞ্জ যুগে। একটি গুহাচিত্রে দেখা যায়, দেবতার নির্দেশে জাফরান চাষ হচ্ছে এবং জমি থেকে জাফরান তুলে একটি মেয়ের পায়ের ক্ষতে লাগানো হচ্ছে। ক্রমশ জাফরান চাষ সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে।
ছড়িয়ে পড়ে এর সৌরভের খ্যাতিও। শোনা যায়, গ্রিক ইতিহাসবিদ হেরোডোটাস সুগন্ধি হিসাবে জাফরান ব্যবহার করতেন। মিশরের রানি ক্লিয়োপাত্রা স্নানের জলে প্রতিদিন আধ কাপ জাফরান মেশাতেন। বিশেষ করে কোনও পুরুষের সঙ্গে আলাপের আগে জাফরান মিশ্রিত জলে স্নান করতেন তিনি, কারণ এর গন্ধে নাকি পুরুষরা তীব্র আকর্ষণ অনুভব করেন। ইতিহাসে ক্লিয়োপাত্রার নাকের অবদান নিয়ে অনেক কথা হয়েছে, পুরুষের ঘ্রাণে সেই রানির জাফরানি ত্বক কোন ইন্দ্রজাল সৃষ্টি করেছিল, সে কথা তেমন করে লেখা হয়েছে কি? শুধু সৌরভ নয়, জাফরান জলে স্নান করলে গায়ের রং উজ্জ্বল হয়। ফর্সাও হয়।
মিশরের লোকেরা জাফরানকে ওষুধ হিসাবেও ব্যবহার করত। ষাঁড়ের চর্বি, ধনে, ইত্যাদি মিশিয়ে এক ধরনের পুলটিস তৈরি করার চল ছিল। পেটের গোলযোগ এবং ব্যথায় এই পুলটিস লাগানো হত। মুখ দিয়ে রক্ত বের হলে বা মূত্রনালীর কোনও অসুখে জাফরান মিশ্রিত ওষুধ ছিল অব্যর্থ।
ক্রমে জাফরানের ব্যবসা সমগ্র পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে। সজ্জা-সরঞ্জাম, মদ, ওষুধ, সুগন্ধি, মাস্কারা, এ সবের জন্য জাফরানের চাহিদা বাড়তে থাকে। |
মধ্য ও পশ্চিম এশিয়া |
ইরাকে পাওয়া পঞ্চাশ হাজার বছর আগের এক গুহাচিত্র থেকে জানা যায়, তখন জাফরান ব্যবহারের চল ছিল। সুমেরীয়রা ওষুধ হিসাবে জাফরান ব্যবহার করত, কিন্তু জাফরান চাষের চেষ্টা করেনি। তাদের বিশ্বাস ছিল জাফরান ঈশ্বরপ্রদত্ত, সুতরাং জাফরান চাষ করলে তার দৈব মহিমা ও ক্ষমতা খর্ব হবে। পারস্যবাসীরা প্রথম জাফরানকে মশলা হিসাবে ব্যবহার করা শুরু করে। আলেকজান্ডার ও তাঁর বাহিনী এশিয়া অভিযানের সময় জাফরান দিয়ে চা খেতেন। আলেকজান্ডার নিজে জাফরান মিশ্রিত গরম জলে স্নান করতেন, তবে কেবল সুগন্ধের জন্য নয়, ক্ষত নিরাময়ের জন্য। তিনি নিয়ম করে দিয়েছিলেন, তাঁর বাহিনীর সব সৈন্যকেও জাফরান মেশানো জলে স্নান করতে হবে। |
দক্ষিণ এশিয়া |
দক্ষিণ এশিয়ায় জাফরানের ব্যবহার কবে শুরু হয় তা নিয়ে মতান্তর আছে। একটি মত হল, পারস্যে জাফরানের বাপক চাষ শুরু হওয়ার পরে সে দেশের বণিকরা নিজেদের বাণিজ্যের স্বার্থেই একে এশিয়ার বিভিন্ন প্রান্তে নিয়ে যান। এমনও শোনা যায় যে, খ্রিস্টীয় এগারো শতকে দু’জন বিখ্যাত সুফির হাত ধরে কাশ্মীরের রাজদরবারে জাফরান প্রবেশ করে। তখন থেকেই ভারতে এর প্রচলন।
|
|
ইউরোপ |
ইউরোপের দেশগুলিতে জাফরানের ব্যবহার প্রায় ছিল না বললেই চলে। ওষুধের জন্য কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হত। ক্রুসেড-এর পর থেকে জাফরান
পাওয়া প্রায় দুষ্কর হয়ে যায়, কারণ জাফরান মূলত মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলে চাষ করা হত। তবে ভেনিসের বণিকরা সমুদ্রপথে জাফরানের ব্যবসা বজায় রেখেছিল।
বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে জাফরান
নির্দিষ্ট পরিমাণ জাফরান নিয়মিত ভাবে ছয়-আট সপ্তাহ খেলে মানসিক অবসাদ দূর হয়। অনিয়মিত ঋতুচক্রের জন্য জাফরান মহৌষধ। অ্যালঝাইমার প্রতিরোধেও এর ব্যবহার আছে। এ ছাড়া,
কতকগুলি বিশেষ রোগের প্রতিষেধক হিসেবে জাফরান উপকারী। যেমন অ্যাজমা, অনিদ্রা,
সর্দি-কাশি, পেটের বিভিন্ন সমস্যা, বাত, চুল উঠে যাওয়া ইত্যাদি। |
জাফরানের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া |
রোগ নিরাময়ের সময়ে, জাফরানের যথাযথ পরিমাণ জানা না থাকলে বিপদ হতে পারে। বমি, মাথাব্যথা, ক্ষুধামান্দ্য, এ সব তো আছেই, এমনকী নাক-মুখ দিয়ে রক্ত পড়া, ত্বক ও চোখের রং খুব দ্রুত হলদে হয়ে যাওয়া এই ধরনের সমস্যাও দেখা দিতে পারে। গর্ভবতী মায়েদের জন্য জাফরান একেবারেই নিষিদ্ধ। |
সৌন্দর্যের জন্য জাফরান |
জাফরান শুষ্ক ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। ক্রিম, মাস্ক, স্ক্রাবার-এ জাফরান মেশালে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে। গোলাপজল, চন্দনগুঁড়ো, দুধ এবং অল্প জাফরান মিশিয়ে প্যাক লাগালে, অল্প দিনের মধ্যেই উজ্জ্বল ত্বক পাওয়া যাবে। সূর্যের অতিরিক্ত তাপে ত্বকের ওপর যে ছোপ ছোপ দাগ হয়, জাফরান মিশ্রিত দুধ প্রতি দিন লাগালে তা দূর হয়ে যায়, দেহবর্ণে ক্রমশ হলুদ আভা দেখা যায়। |
|
|
|
|
|