সোমা মুখোপাধ্যায় • কলকাতা |
লাইনে দাঁড়িয়েই প্রবলবমি শুরু হয়ে গিয়েছিল প্রভাস সাঁতরার। পেটে অসহ্য ব্যথা নিয়ে এসএসকেএম হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে এসেছিলেন প্রভাসবাবু। চিকিৎসকেরা তাঁকে কয়েকটি পরীক্ষানিরীক্ষা করিয়ে আনতে বলেন। কিন্তু সে জন্য টাকা জমা দিতে গিয়ে ২০০ জনের পিছনে দাঁড়াতে হয় তাঁকে। অসহনীয় গরমে ওই যন্ত্রণা সহ্য করে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে শুধু বমি নয়, এক সময়ে সংজ্ঞাও হারিয়ে ফেলেন তিনি।
পড়ে গিয়ে পায়ের হাড় ভেঙেছিল করুণা সর্দারের। এসএসকেএমে আনার পরে চিকিৎসকেরা আগে তাঁকে এক্স-রে করাতে বলেন। কিন্তু সেই এক্স-রের সুযোগ আসে আরও ঘণ্টা তিনেক পরে। কারণ এক্স-রে করানোর জন্য তাঁর বাড়ির লোককে টাকা জমা দেওয়ার লাইনে দাঁড়াতে হয়েছিল সওয়া দু’ঘণ্টা। টাকা জমা দেওয়ার পরে সংশ্লিষ্ট বিভাগে অপেক্ষা, এক্স-রে মিলিয়ে সাড়ে তিন ঘণ্টা পরে তাঁর পায়ে প্লাস্টার হয়। ততক্ষণ যন্ত্রণায় ছটফট করেছেন ওই বৃদ্ধা।
দেড় হাজার শয্যার হাসপাতাল। প্রতি দিন আউটডোরে আসেন গড়ে পাঁচ হাজার রোগী। আর টাকা জমা দেওয়ার কাউন্টার মাত্র তিনটি। দুপুর দু’টোর পর থেকে তা কমে হয় একটি। ফলে ভোগান্তি অনিবার্য। প্রায় প্রতি দিনই এ নিয়ে রোগীদের ক্ষোভ-বিক্ষোভ চলে। সরকারি হাসপাতালে গেলে এমন ভোগান্তি হতেই পারে, তা মেনে নিয়ে নীরব থাকেন আরও বহু রোগী। কিন্তু কর্তৃপক্ষ গোটা বিষয়টি সম্পর্কে উদাসীন। ফলে ছবিটা কবে বদলাবে, কেউ জানে না।
বছরের পর বছর একটি কাউন্টার তালা বন্ধ থাকে। মাস কয়েক আগে এক সকালে কয়েক জন রোগীর বাড়ির লোকেরা ক্ষোভে কাউন্টার ভাঙচুরও করেন। সেই সময়ে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। তার পর দিন কয়েক ওই কাউন্টারে কর্মী ছিলেন। কিন্তু কিছু দিন পর থেকে পরিস্থিতি ফের যে কে সেই।
সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল এসএসকেএমে রাজ্যের সমস্ত প্রান্ত থেকেই সাধারণ মানুষ চিকিৎসার জন্য আসেন। সেখানে কেন টাকা জমা নেওয়ার জন্য মাত্র তিনটি কাউন্টার থাকবে? কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, কর্মীর অভাব। তাই কাউন্টারের সংখ্যা বাড়ানো যাচ্ছে না। যদিও চিকিৎসকদের একটি বড় অংশই জানাচ্ছেন, এটি সমন্বয়ের অভাব। বিভিন্ন বিভাগে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মীরা স্রেফ বসে থাকেন। কেন তাঁদের কাউন্টারে বসানো যাবে না, সেই প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা।
সুপার তমালকান্তি ঘোষ বলেন, “রোগীদের ভোগান্তির অভিযোগ সর্বাংশে সত্যি। আমরা তাই কাউন্টার বিকেন্দ্রীকরণের কথা ভাবছি। বিভিন্ন বিভাগের যেমন আউটডোর টিকিটের আলাদা কাউন্টার রয়েছে, তেমনই সেখানে পরীক্ষার টাকা জমার কাউন্টারও খোলা হবে। তাতে লাইনের সমস্যা অনেকটাই কমবে।”
কবে বাস্তবায়িত হবে এই পরিকল্পনা? সুপার বলেন, “বহু দিন ধরে কোনও নিয়োগ না থাকায় সমস্যা হচ্ছে। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা চলছে।” |