পাশে দাঁড়িয়েও হলদিয়া আইকেয়ার মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রছাত্রীদের কোনও পথ দেখাতে পারছিল না কলকাতা হাইকোর্ট। অবশেষে সুপ্রিম কোর্ট শুক্রবার জানিয়ে দিয়েছে, ওই কলেজের ৭৭ জন ছাত্রছাত্রী ফার্স্ট এমবিবিএস
পরীক্ষা দিতে পারবেন। এই নির্দেশে পড়ুয়াদের সমস্যা আপাতত মিটল।
অবিলম্বে ওই ছাত্রছাত্রীদের নাম নথিভুক্ত করিয়ে অ্যাডমিট কার্ড দেওয়ার জন্য পশ্চিমবঙ্গ স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়কে নির্দেশ দিয়েছে বিচারপতি দীপক বর্মা ও বিচারপতি এস জে মুখোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ। শীর্ষ আদালতের নির্দেশের ভিত্তিতে ভর্তি হয়েই পড়ুয়ারা এক বছর ক্লাস করেছেন। পড়াশোনা ও পরীক্ষা চালিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য ছাত্রছাত্রীরা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। কিন্তু তাঁদের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়েও উচ্চ আদালত কোনও আলো দেখাতে না-পারায় পড়ুয়ারা সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন।
কলেজের অনুমোদনের প্রশ্নটি ঝুলে থাকলেও সর্বোচ্চ আদালত তাঁদের পরীক্ষায় বসতে দেওয়ার ব্যাপারে যে-নির্দেশ দিয়েছে, তাতে উদ্বেগ অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছেন হলদিয়ার বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের পড়ুয়ারা। এ দিন দুপুরে ক্লাসের ফাঁকে খবরটা কলেজে পৌঁছনোর পরে অ্যানাটমির অর্ধেক ক্লাস করেই জনা তিরিশ পড়ুয়া মেতে উঠলেন আনন্দে। মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া (এমসিআই) কলেজের অনুমোদন খারিজ করে দেওয়ার পরে ওই মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রছাত্রীরা অকূলপাথারে পড়ে গিয়েছিলেন। ক্যাপিটেশন ফি হিসেবে মোটা টাকা দিয়ে ওখানে ভর্তি হয়েছিলেন উত্তর ২৪ পরগনার শ্যামনগরের শুভদীপ কাঞ্জিলাল, হাওড়ার সাঁকরাইলের সৌরভ পাত্রেরা। সমস্যা আপাতত মেটায় অগস্টে এমবিবিএসের ওই পরীক্ষার জন্য জোর কদমে তৈরি হতে তাঁদের পরামর্শ দিয়েছেন শিক্ষকেরা।
নন্দীগ্রাম-কাণ্ডে জেলবন্দি সিপিএমের প্রাক্তন সাংসদ লক্ষ্মণ শেঠের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা পরিচালিত ওই কলেজের ভবিষ্যৎ নিয়ে জট অবশ্য এখনও খোলেনি। উপযুক্ত পরিকাঠামো গড়ে না-তুলে ডেন্টাল কলেজের বাড়িতেই মেডিক্যাল কলেজ চালু করায় ওই প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন খারিজ করে দিয়েছিল এমসিআই। পরবর্তী কালে অনুমতি খারিজ করে রাজ্য স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ও। কলেজ-কর্তৃপক্ষ সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেন। সেই সময় শীর্ষ আদালত ছাত্র ভর্তি করার নির্দেশ দেয়। কিন্তু ছাত্রছাত্রীরা পরে জানতে পারেন, তাঁদের একটি বছর নষ্ট তো হচ্ছেই, বিপন্ন হয়ে পড়ছে ভবিষ্যৎও। তখনই তাঁরা হাইকোর্টে বিচারপতি প্রণব চট্টোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চে আবেদন করেন।
ডিভিশন বেঞ্চ সব পক্ষের বক্তব্য শুনে জানিয়ে দেয়, ছাত্রছাত্রীদের আবেদন মর্মস্পর্শী হলেও আইন অনুযায়ী আদালতের হাত-পা বাঁধা। ছাত্রছাত্রীরা সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ভর্তি হয়েছিলেন। হাইকোর্ট তাঁদের সম্পর্কে সহানুভূতিশীল হলেও কোনও ইতিবাচক রায় দিতে পারছে না। ছাত্রছাত্রীরা অগত্যা শীর্ষ আদালতে আবেদন করেন। আইকেয়ার কলেজ সোসাইটির আইনজীবী সুব্রত মুখোপাধ্যায় এ দিন বলেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের ফলে ৭৭ জন ছাত্রছাত্রী পরীক্ষায় বসতে পারবেন।
দমদমের বাসিন্দা, ওই কলেজের ছাত্রী শর্মিষ্ঠা নন্দীর প্রতিক্রিয়া, “পরীক্ষা দিতে পারব জেনে খুব খুশি হয়েছি। তবে কলেজ এমসিআইয়ের অনুমোদন ফেরত পেলে আরও ভাল হত।” শর্মিষ্ঠার সহপাঠী বর্ধমানের রিয়া রায়ের আশা, “একটা জয় হয়েছে। হয়তো এমসিআইয়ের অনুমোদনও এক দিন মিলবে।” অন্য পড়ুয়ারা বলেন, “পরীক্ষা দিতে পারব, এটাই আনন্দের কথা। একটা দুশ্চিন্তা কাটল। তবে এ বার পরীক্ষার চাপ এসে পড়ল। ডামাডোলে অনেক দিন ভাল করে পড়াশোনা হয়নি।”
সুপ্রিম কোর্টের এ দিনের রায়ে কলেজ-কর্তৃপক্ষের উপর থেকেও চাপ অনেকটা কমে গিয়েছে। কলেজের প্রশাসনিক আধিকারিক শ্রীমন্ত বসু বলেন, “আমরা এখনও আদালতের রায়ের প্রতিলিপি পাইনি। তাই বিস্তারিত ভাবে কিছু বলতে পারব না। তবে ছাত্রছাত্রীদের জয় হয়েছে এটাই বড় কথা। এমসিআইয়ের অনুমোদনও পাওয়া যাবে বলে আশা করছি আমরা।” |