মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ, শিলিগুড়ি-বাগডোগরা জাতীয় সড়কের দু’ধারে সৌন্দর্যায়ন করতে হবে। সেই মতো সুদৃশ্য ত্রিফলা আলো লাগানোর জন্য ই-টেন্ডার করে ঠিকাদার সংস্থাকে বাছাইও করে শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (এসজেডিএ)। কিন্তু, এসজেডিএ-র সদস্য তথা তৃণমূল নেতাদের একাংশের আপত্তিতে ওই কাজ থমকে গেল।
এসজেডিএ সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার সংস্থার টেন্ডার কমিটির বৈঠকে অন্যান্য সব দরপত্র গ্রহণে সম্মতি দেওয়া হলেও ত্রিফলা আলো লাগানোর কাজ বাতিলের দাবি তোলা হয়। আপত্তির কারণ হিসেবে তৃণমূল নেতাদের কেউ বাতিস্তম্ভের ‘ডিজাইন’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। কেউ তার ‘সুরক্ষা’ ব্যবস্থা যাচাই করার উপরে জোর দিয়েছেন। আবার কেউ বরাত পাওয়া সংস্থার ব্যাপারে প্রশ্ন তুলেছেন। যেখানে খোদ মুখ্যমন্ত্রী ওই বাতিস্তম্ভ বসানোর কথা বলেছেন, সেখানে তা নিয়ে আপত্তি করা ঠিক কি না, তা নিয়ে বৈঠকে উপস্থিত ইঞ্জিনিয়ার, অফিসারদের কয়েকজন প্রশ্নও তোলেন। পক্ষান্তরে, এক সদস্য বাতিস্তম্ভের ডিজাইন নিয়ে আপত্তির প্রশ্নে অনড় থাকেন। তা নিয়ে কিছুক্ষণ বিতর্ক চলে। এর পরেই ওই কাজ আপাতত স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেন কর্তৃপক্ষ।
এসজেডিএ-এর চেয়ারম্যান তথা শিলিগুড়ির বিধায়ক রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য বলেন, “নানা প্রশ্নে আপত্তি ওঠায় ওই কাজ আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে। তবে গোটা ঘটনাটি নগরোন্নয়ন দফতরকে জানানো হবে। তার পরেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।”
এসজেডিএ সূত্রের খবর, গত ফেব্রুয়ারি মাসে শিলিগুড়ি শহরে প্রায় ২ কোটি টাকা খরচ করে ওই ত্রিফলা আলো বসানো হয়। তার পরে নগরোন্নয়ন দফতরের পদস্থ ইঞ্জিনিয়াররা শিলিগুড়ি-বাগডোগরা ৩১ জাতীয় সড়কের দুধারের ৯ কিলোমিটার রাস্তায় ওই বাতি বসানোর ব্যাপারে সমীক্ষা করেন। বিশেষজ্ঞদের মত সাপেক্ষে এসজেডিএ-এর বোর্ড মিটিঙে ওই কাজ করানোর সিদ্ধান্ত অনুমোদিত হয়। ই-টেন্ডারে একাধিক সংস্থা অংশ নেয়। কিন্তু, দরপত্র সবচেয়ে কম হওয়ার সুবাদে ফেব্রুয়ারিতে যে সংস্থাটি কাজ করেছিল তাদেরই বেছে নেয় এসজেডিএ।
বিধি অনুযায়ী, দরপত্র বাছাইয়ের পরে তা অনুমোদনের জন্য টেন্ডার কমিটিতে পেশ করা হয়ে থাকে। সেই মতো কমিটির বৈঠকে তা পেশ হলে অন্যান্য সব কাজ অনুমোদিত হয়ে যায়। কিন্তু, ত্রিফলা আলোর কাজ সংক্রান্ত টেন্ডার একই সংস্থা আগের তুলনায় কম টাকায় কী ভাবে করবে সেই প্রশ্ন ওঠে।
তৃণমূল নেতা তথা শিলিগুড়ির ডেপুটি মেয়র রঞ্জন শীলশর্মা, জলপাইগুড়ির তৃণমূল নেতা চন্দন ভৌমিক, শিলিগুড়ির জ্যোৎস্না অগ্রবালরা ওই কাজ নিয়ে আপত্তি তোলেন বলে এসজেডিএ সূত্রের খবর। এসজেডিএ-এর একজন ইঞ্জিনিয়ারও তাতে সহমত প্রকাশ করেন বলে সংস্থা সূত্রের খবর।
এই ব্যাপারে চন্দনবাবু বলেন, “ওই বাতিস্তম্ভগুলি কম উচ্চতার। নির্জন জাতীয় সড়কে আলো চুরি হয়ে যেতে পারে। সে জন্য আমরা আপত্তি করেছি। সুরক্ষা নিয়ে ভাবার জন্য ইঞ্জিনিয়ারদের বলা হয়েছে।”
পাশাপাশি, তৃণমূল নেত্রী তথা এসজেডিএ-এর বোর্ড সদস্য জ্যোৎস্নাদেবী বলেন, “একই সংস্থা তিন মাস আগে শহরে ওই কাজ করেছে। এখন তার চেয়েও কম টাকায় সেই কাজ করবে বলে শর্ত দিয়েছে। এতে জনমানসে ও অডিটের সময়েও প্রশ্ন উঠতে পারে। তা ছাড়া, সরকার সব রাস্তা দেখভালের জন্য একটি অথরিটি গড়তে চলেছে। তাদের অনুমতিও দরকার। সে জন্য আপত্তি করেছি আমরা।”
বোর্ড মিটিঙে ওই কাজের প্রস্তাব পেশের সময়ে কোনও আপত্তি ওঠেনি। তা হলে টেন্ডার কমিটির বৈঠকে অবস্থান বদল কেন? জ্যোৎস্নাদেবীর যুক্তি, “আমরা জানতাম সৌন্দর্যায়ন হবে। কিন্তু, টেন্ডার প্রক্রিয়ার আগে আমাদের কিছু জানানো হয়নি।” |