খুঁড়িয়ে হাঁটার জন্য দোষারোপ করা হচ্ছিল বর্ষাকে। অবশেষে গোটা আন্দামানেই ভারী বৃষ্টি নামিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু মায়ানমারের পথ ধরেছে। সেই সঙ্গে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে দক্ষিণবঙ্গেও।
বায়ুপ্রবাহের পরিবর্তনের ফলে শুক্রবার সকাল থেকেই প্রচুর জলীয় বাষ্প ঢুকে পড়েছে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে। বৃষ্টি নামাতে না-পারলেও সেই জলীয় বাষ্প ঝাড়খণ্ড-ওড়িশা থেকে আসা গরম ও শুকনো বাতাসকে কিছুটা ঠেলে সরিয়ে দিয়েছে। ফলে তাপমাত্রা কমেছে। কেটে গিয়েছে ‘তীব্র’ তাপপ্রবাহের অবস্থা। বাঁকুড়া-পুরুলিয়া ছাড়া আর কোনও জেলাতেই তাপপ্রবাহের পরিস্থিতিও ছিল না এ দিন।
আন্দামানে পৌঁছতে তিন দিন দেরি করেছে বর্ষা। কিন্তু এ দিনই সে ‘অতিসক্রিয়’ হয়ে গিয়েছে বলে জানিয়েছে দিল্লির মৌসম ভবন। তাই পুরো আন্দামানেই নেমেছে বৃষ্টি। শুধু তা-ই নয়, বর্ষা এখন মায়ানমারের পথে। পরিস্থিতি অনুকূল থাকলে মায়ানমারে বৃষ্টি নামিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু আগামী সপ্তাহেই উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ঢুকে পড়বে। উত্তর-পূর্বে এখন একটি ঘূর্ণাবর্ত রয়েছে। তাই সেখানে প্রাক্বর্ষার বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়ে রেখেছে আবহাওয়া দফতর।
কিন্তু বাংলায় বৃষ্টির কী হল? প্রচুর পরিমাণে জলীয় বাষ্প ঢুকলেও কেন নামছে না বৃষ্টি?
আবহবিদেরা জানাচ্ছেন, যে-জলীয় বাষ্প ঢুকছে, তাতে সূর্যের তাপ কিছুটা প্রশমিত হচ্ছে মাত্র। এই পরিস্থিতিতে বৃষ্টি নামানোর জন্য দরকার একটা নিম্নচাপ অক্ষরেখা, নিদেনপক্ষে একটি সক্রিয় ঘূর্ণাবর্ত। কিন্তু এই মুহূর্তে দক্ষিণবঙ্গে তার কোনওটাই নেই। তাই বৃষ্টিও নেই। এবং তাপমাত্রা কমলেও পুরোপুরি আশ্বস্ত হওয়ার উপায় নেই। কারণ, যে-বাড়তি জলীয় বাষ্প তাপমাত্রার লাগাম টেনে ধরছে, তার প্রভাবেই বাড়তে থাকবে আর্দ্রতা। আর সেই অতিরিক্ত আর্দ্রতায় বাড়বে অস্বস্তি। তবে দারুণ দহনে ছেদ কিছুটা পড়ছেই। আর বায়ুপ্রবাহ অনুকূল হলে দক্ষিণবঙ্গের কোথাও কোথাও স্থানীয় ভাবে বজ্রগর্ভ মেঘ তৈরি হয়ে বৃষ্টিও নামতে পারে জানাচ্ছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর। এখন একটি ঘূর্ণাবর্ত রয়েছে উত্তরবঙ্গে। সেখানে বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে হাওয়া অফিস।
বৃহস্পতিবার ১১টি জেলায় তাপপ্রবাহের পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। পানাগড়ের তাপমাত্রা উঠেছিল ৪৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। শ্রীনিকেতনে ৪৫.৬ ডিগ্রি পর্যন্ত উঠেছিল পারদ। শুক্রবার পানাগড়ের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা নেমে এসেছে ৪২.৮ ডিগ্রিতে। শ্রীনিকেতনে ৪১.২ ডিগ্রি। মালদহে দু’দিন ধরে প্রবল তাপপ্রবাহের পর এ দিন সেখানে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রিতে নেমে এসেছে। শুক্রবার বাঁকুড়া, পুরুলিয়া ছাড়া অন্য সব জেলা থেকেই তাপপ্রবাহের সতর্কতা তুলে নিয়েছে আবহাওয়া দফতর। তবে বাঁকুড়ায় এ দিনও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪৫.৮ ডিগ্রি। ছিল তাপপ্রবাহের পরিস্থিতিও। |