ইঙ্গিত মিলতে শুরু করেছিল আগেই। রাজ্য সরকারের প্রথম বর্ষপূর্তির পরে এ বার সুর চড়ানোর পথে আরও এক ধাপ এগোনোর প্রস্তুতি শুরু হল বামফ্রন্টে। বিধানসভার ভিতরে-বাইরে সরকার-বিরোধী ভূমিকাকে এখন আরও ‘ধারালো’ করতে চাইছে বামেরা।
সেই লক্ষ্যেই বামফ্রন্টের বিধায়কদের এ বার থেকে বিধানসভার ভিতরে সরব হওয়ার পাশাপাশিই বাইরেও আন্দোলনে নামার ‘পরামর্শ’ দেওয়া হয়েছে।
বিধানসভার দফাওয়াড়ি বাজেট অধিবেশন শুরু হওয়ার কথা আগামী ১৫ জুন। তার আগে বৃহস্পতিবার বামফ্রন্টের বিধায়কদের বৈঠকে বিরোধীদের ভবিষ্যৎ রণকৌশল নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে।
ফ্রন্ট সূত্রের খবর, সেখানেই বাম বিধায়কদের ‘পরামর্শ’ দেওয়া হয়েছে, তাঁদের ভুমিকা শুধুই বিধানসভা ভবনের চৌহদ্দিতে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না। বিভিন্ন প্রশ্নে বামেদের আন্দোলনে তাঁদেরও ‘সক্রিয়’ ভাবে অংশ নিতে হবে। মিছিলে পা মেলাতে হবে, স্মারকলিপি বা দাবিপত্র জমা দিতে যেতে হবে।
সংসদীয় ভূমিকায় যাঁরা আছেন, তাঁরা কেন ক্রমশ আন্দোলন-বিমুখ হয়ে পড়ছেন, এই নিয়ে সিপিএমের সদ্যসমাপ্ত সম্মেলনে যথেষ্টই প্রশ্ন উঠেছিল। তার পরে সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্বই বিধায়কদের আরও ‘সক্রিয়’ করে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে দলীয় সূত্রের খবর।
মহাকরণে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এক বছরের পাশাপাশিই বিরোধী ভূমিকায় বামফ্রন্টেরও বর্ষপূর্তি হল। সাতের দশকে কংগ্রেস জমানায় বিরোধী আসনে থাকার সময় পরিষদীয় রাজনীতিতে ছিলেন, এমন নেতার সংখ্যা বর্তমান বাম শিবিরে হাতে-গোনা। নতুন ভূমিকায় তাঁদের ‘অভিজ্ঞতা’ কেমন, সেই বিষয়ে বাম বিধায়কদের কাছে রিপোর্টও চেয়েছেন পরিষদীয় নেতৃত্ব।
বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের কথায়, “নানা ঘটনায় তাঁদের অভিজ্ঞতা থেকে বিধায়কদের অভিমত কী, সে সব জানার পরে আমরা আবার আলোচনা করব।”
বিধানসভায় বিরোধী বেঞ্চে বসার অভিজ্ঞতা আছে, এমন বিধায়ক এখন বাম শিবিরের দু’জন। তাঁদের মধ্যে এক জন, প্রাক্তন মন্ত্রী তথা ডিএসপি নেতা প্রবোধ সিংহ এ দিনের বৈঠকে মুক্ত কণ্ঠে বলেছেন, তিনি ‘অভিজ্ঞ’ হলেও বিগত এক বছরে অনেক নতুন বিধায়কের ‘পারফরম্যান্স’ চোখে পড়ার মতো। সঙ্ঘবদ্ধ ভাবে বামফ্রন্টকে বিধানসভার ভিতরে-বাইরে আরও ‘কার্যকরী’ হয়ে উঠতে হবে।
বিরোধী ভূমিকার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন আর এক বিধায়ক তথা প্রাক্তন মন্ত্রী, সিপিএমের আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা অবশ্য এ দিনের বৈঠকে ছিলেন না। অধিবেশন শুরু হলে প্রথামাফিক আবার বাম পরিষদীয় দলের বৈঠক হবে। সেখানেই ঠিক হতে চলেছে অধিবেশনের রণকৌশল।
বিধানসভার স্থায়ী ও হাউস কমিটিগুলির রদবদলের সময় এগিয়ে আসছে। বাম বিধায়কদের কারা কোন কমিটিতে কেমন কাজ করছেন এবং তাঁরা অন্য কোনও কমিটিতে যেতে চান কি না, সেই বিষয়ে তাঁদের মতামত চাওয়া হয়েছে। কোন দফতরের বাজেটে কারা বক্তা হতে চান, তা নিয়েও কথা হয়েছে এ দিনের বৈঠকে।
তবে এই দুই বিষয়েই বিধায়কেরা তাঁদের সংশ্লিষ্ট দলীয় নেতৃত্বের মতামত নেবেন। সূর্যবাবুর বক্তব্য, “দফতরভিত্তিক বাজেটের খুঁটিনাটি পর্যালোচনা ঠিক ভাবে হয়, তা নিয়েই আমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেছি।” |