|
|
|
|
দাসপুরে মেলায় জুয়ার আসর |
অভিযানে গিয়ে আক্রান্ত পুলিশ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • দাসপুর |
গ্রামীণ কালীপুজো উপলক্ষে মেলা বসেছে দাসপুরের পশ্চিম রাজনগরে। রাত বাড়তেই জুয়া-সাট্টার আসর জমে উঠছে মেলা প্রাঙ্গণে। গত রবিবার থেকে এমনটাই চলছিল। বৃহস্পতিবার রাতে ওই আসরে ‘হানা’ দেয় পুলিশ। বাধা দেন স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ। পুলিশকর্মীদের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধ বেধে যায়। পুলিশের দু’টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। মারধরে জখম হন দাসপুর থানার ওসি-সহ ৭ পুলিশকর্মী। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ লাঠি চালায়। তাতে জনা দশেক গ্রামবাসী জখম হন। এই ঘটনায় ২০ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শুক্রবার ধৃতদের ঘাটালের এসিজেম আদালতে হাজির করা হলে বিচারক ১৪ দিন জেল-হাজতের নির্দেশ দেন। পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরী বলেন, “জুয়ার আসরে অভিযানে গিয়ে গ্রামবাসীদের সঙ্গে পুলিশের গণ্ডগোল হয়েছে। ৭ পুলিশকর্মী জখম হয়েছেন। ২০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনায় জড়িতদের ধরতে তল্লাশি চলছে।” |
|
গণ্ডগোলের পর ভেঙে গিয়েছে মেলা। নিজস্ব চিত্র। |
প্রতি বছরই জ্যৈষ্ঠ মাসে পশ্চিম রাজনগর গ্রামে কালীপুজো উপলক্ষে মেলা বসে। হয় যাত্রা, নাটক, বাউল গান-সহ নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আশপাশের বেলবেড়া, সামাট, চৌকা, মসরপুর, যদুপুর, রামগড়-সহ ২০-২৫টি গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে এই মেলা ঘিরে একটা আবেগ রয়েছে। খাতায়-কলমে ৭ দিনের অনুমতি থাকলেও মেলা চলে প্রায় দেড় সপ্তাহ ধরে। এ বারের মেলা শুরু হয়েছে ২০ মে, রবিবার। মেলায় জুয়া-সাট্টার আসর বসছে খবর পেয়ে বৃহষ্পতিবার রাতে জেলার ডিএসপি (ক্রাইম) দেবজ্যোতি চক্রবর্তীর নেতৃত্বে দাসপুর থানার বিশাল পুলিশবাহিনী আচমকাই মেলা প্রাঙ্গণে ‘হানা’ দেয়। ৩ জনকে পাকড়াও করে পুলিশ। তখন সবে যাত্রা শুরু হয়েছে। ফলে, মেলা প্রাঙ্গণে যথেষ্ট ভিড় ছিল। পুলিশ জানায়, মদ্যপ কয়েক জন ওই তিন জনকে পুলিশের কাছ থেকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। বাধা দেয় পুলিশ। তার জেরে প্রথমে বচসা, পরে রীতিমতো খণ্ডযুদ্ধ বেধে যায়। পুলিশ লাঠিচার্জ করলে এলাকার মানুষও পুলিশকে লাঠিপেটা করে। পুলিশকে লক্ষ করে ইট-পাটকেলও ছোড়া হয়। তাতেই জখম হন দাসপুরের ওসি অভিজিৎ বিশ্বাস। লাঠির ঘায়ে জখম হন আরও ৬ পুলিশকর্মী। তাঁদের মধ্যে দু’জন মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি। দু’জনের চিকিৎসা চলছে দাসপুর গ্রামীণ হাসপাতালে। রাত প্রায় দেড়টা পর্যন্ত গোলমাল চলে। তারপর বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালায় পুলিশ। গ্রেফতার করা হয় ২০ জনকে। গোলমালের জেরে মেলা তখন ছত্রভঙ্গ। যাত্রা বন্ধ, দোকানদারেরাও পালিয়েছেন। শুক্রবার বেলা ১২টার মধ্যে মেলা বন্ধের নির্দেশ দেয় পুলিশ। এ দিন সকালে গ্রামে গিয়ে দেখা যায় চার দিক সুনসান। গ্রামবাসীদের অনেকেই এলাকা ছেড়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মেলার কয়েক জন দোকানি বলেন, “সবেমাত্র মেলা জমেছিল। কিন্তু পুলিশের নির্দেশে সব বন্ধ হয়ে গেল। আমাদের অনেক লোকসান হল।” মেলায় যে জুয়া-সাট্টার আসর বসেছিল, তা স্বীকার করেছেন মেলা কমিটির তরফে অশোক মাল, নীলকমল দোলই, শুকচাঁদ প্রামাণিকেরা। মেলা-কমিটির এক সদস্য আবার দাবি করেন, “জুয়ার বিষয়টি পুলিশের অজানা ছিল না।” |
|
|
|
|
|