|
|
|
|
মমতাকে জোটে ফেরাতে নরমে-গরমে চলবে বিজেপি |
দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় • মুম্বই |
লোকসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে বিজেপি চাইছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এনডিএ-তে সামিল হোন। কিন্তু কংগ্রেসের সঙ্গ ছাড়ার কোনও ইঙ্গিত দেননি তৃণমূল নেত্রী। বিজেপি নেতৃত্ব অবশেষে তাঁদের রাজ্য নেতৃত্বের মাধ্যমে তৃণমূলের উপর চাপ বজায় রাখার কৌশল নিচ্ছেন। যাতে মমতাকে রাজ্যে ‘দুর্বল’ করে তাঁর সঙ্গে দর কষাকষি করা সম্ভব হয়।
সাম্প্রতিক অতীতে নানান বিষয়ে মমতার সঙ্গে কংগ্রেসের সংঘাতের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। আগামিকাল পেট্রোলের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে মমতা মনমোহন সরকারের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামছেন। এই পরিস্থিতিতে বিজেপি নেতৃত্ব মমতাকে এনডিএ-তে ফিরিয়ে আনতে তৎপর। আজ মুম্বইয়ে জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠক শেষে দলের মুখপাত্র রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেন, “মমতার সঙ্গে কংগ্রেসের সম্পর্কের ক্রমশই অবনতি হচ্ছে। ইউপিএ-তে এখন তাঁর দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। এর আগে এনডিএ-র সঙ্গে থাকার অভিজ্ঞতা রয়েছে মমতার। ফলে তিনি এনডিএ-তে আসবেন কি না, সেই সিদ্ধান্ত তাঁকেই নিতে হবে।”
আজ কর্মসমিতির বৈঠকের সমাপ্তি বক্তৃতাতে লালকৃষ্ণ আডবাণীও মমতার তারিফ করেন। এই বিজেপি নেতার বক্তব্য, মূল্যবৃদ্ধি এবং দুর্নীতির জন্য কংগ্রেস দুর্বল হচ্ছে। কিন্তু সেই জনরোষকে বিজেপি পুঁজি করতে পারছে না। নিজেদের দলের খামতির প্রসঙ্গ উত্থাপন করে আডবাণী পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতা পরিবর্তনের দৃষ্টান্ত তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, “পশ্চিমবঙ্গে সিপিএমের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভকে সম্বল করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাম শাসনের অবসান ঘটিয়েছেন।”
কিন্তু বিজেপি নেতৃত্ব যা-ই বলুন, তৃণমূল নেত্রীর থেকে এখনও সবুজ সঙ্কেত আসেনি। সে কারণে বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহের মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গে মমতার বিরুদ্ধে আন্দোলন করে যাওয়ার ছাড়পত্র দিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। সম্প্রতি এক সমীক্ষায় ধরা পড়েছে, মমতার ভোট আগের তুলনায় ২০ শতাংশের বেশি কমেছে। সেই ভোট সিপিএমের ঝুলিতে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। বিজেপি মনে করছে, এই পরিস্থিতিতে রাজ্যে দলের শক্তি বাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে। বৈঠকের শেষ দিনে রাহুল সিংহ রাজ্যে ইমামভাতার প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছেন শীর্ষ নেতাদের সামনে। দলের সব নেতাই রায় দিয়েছেন, মমতাকে
চাপে রাখতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া হোক। আবার সম্পর্ক যাতে নষ্ট না হয়, তার জন্য খুব বেশি জঙ্গি রাস্তায় না যাওয়া হোক।
জাতীয় স্তরে বিজেপি নেতৃত্বের কৌশল হল, কংগ্রেসের বিরুদ্ধে আঞ্চলিক দলগুলি যত সক্রিয় হবে, ততই বিজেপির লাভ। যেমন নবীন পট্টনায়ক বা জয়ললিতা। নবীন এনডিএ-র সঙ্গত্যাগ করেছেন। এখনও পর্যন্ত এনডিএতে ফিরে আসার সিদ্ধান্তও নেননি। কিন্তু এনডিএর বাইরে থেকেও তাঁর কংগ্রেস বিরোধিতায় আখেরে রাজনৈতিক ভাবে লাভবান হচ্ছে বিজেপি। ফলে এই মুহূর্তে মমতাও যদি সেই অবস্থান নেন, তাতে লাভ বই লোকসান নেই। নিতিন গডকড়ী সেই দিকে ইঙ্গিত করেই বলেছেন, “জাতীয় রাজনীতিতে আঞ্চলিক দলগুলির বড় ভূমিকা রয়েছে।”
তাঁর কথায়, “এনডিএ জমানায় আমরা ২৩টি দলকে নিয়ে জোট সরকার চালিয়েছি। মনমোহন সিংহ সরকার জোট সরকার চালাতে ব্যর্থ। এই পরিস্থিতিতে বিজেপিই বিকল্প হতে পারে।”
নবীন-জয়ললিতাদের সঙ্গে লালকৃষ্ণ আডবাণী,
অরুণ জেটলি, নরেন্দ্র মোদী থেকে রবিশঙ্কর প্রসাদরা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। মমতার সঙ্গেও যোগসূত্র বিচ্ছিন্ন হয়নি। সুধীন্দ্র কুলকার্নির সঙ্গে মমতার
ব্যক্তিগত সম্পর্ক ভাল। রেলমন্ত্রী থাকার সময় কুলকার্নিকে উপদেষ্টা নিয়োগ করেছিলেন মমতা। সংসদের বিভিন্ন
বিষয়ে অরুণ জেটলি অনেক ক্ষেত্রে পরামর্শ দেন
তৃণমূলের সাংসদদের। রেলের বিষয়েও মুকুল রায়
দেখা করেছিলেন জেটলির সঙ্গে। আডবাণী তাঁর ব্লগে বারংবার উল্লেখ করেছেন, কী ভাবে মমতা সিপিএম-বিরোধিতার প্রতীক হয়ে উঠেছেন। অরুণ জেটলি আজ কংগ্রেসের সঙ্গে মমতার দূরত্বকে আরও উস্কে দিতে বলেন, “সরকারের শরিকরা যেন শুধু মিছিল করে বা প্রবচন দিয়েই ক্ষান্ত না হন। তাঁদের এই সরকারের বিরুদ্ধে প্রহারও
করতে হবে।” |
|
|
|
|
|