|
|
|
|
অন্য আইপিএল |
লড়ব, জিতব বলে ‘যুদ্ধে’ নামছেন জামাইরা |
সুনন্দ ঘোষ |
এ বার ফাঁদে পড়েছেন খোদ বব বিশ্বাস!
ভাল মানুষের মতো মুখ করে লোককে ফাঁদে ফেলে এ বার নিজেরই হাঁসফাঁস অবস্থা। প্রচণ্ড গরমের দুপুরে টক দই আর ভাত কিম্বা দু’বাটি টক ডাল দিয়ে এ বারের জামাইষষ্ঠী ‘ম্যানেজ’ করতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু কেটে বেরোতে পারছেন না কিছুতেই।
‘কহানি’-খ্যাত বব বিশ্বাস ওরফে এ বারের অন্যতম ‘সেরা বাঙালি’ অভিনেতা শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়ের শাশুড়ি অরুন্ধতী দত্ত অবশ্য জামাইয়ের কোনও অনুরোধই রাখছেন না। একমাত্র জামাইকে বছরের এই দিনটায় তরিবৎ করে খাওয়ানোর সুযোগ মোটেই হাতছাড়া করতে রাজি নন তিনি। চল্লিশ ছুঁই ছুঁই তাপমাত্রাও তাই কাহিল করতে পারছে না ৬৫ বছরের শাশুড়িকে। ভাত, সুক্তো, পাঁচ রকমের ভাজা, মুড়ো দিয়ে ডাল, চিংড়ির মালাইকারি এবং মাংস থাকছে এই দিনের মেনুতে।
বেকায়দায় পড়া শাশ্বত ফোন তুলে হাসতে হাসতে বললেন, “পরিচালক-প্রযোজকদের বলে রেখেছি, রবিবার এত কিছু খাওয়ার পরে বেঁচে থাকলে তবেই সোমবার থেকে শু্যটিং করতে পারব! তা ছাড়া টক দই আর ভাত কিম্বা দু’বাটি টক ডালে খরচও তো বাঁচত। বাজারের যা অবস্থা!”
অরুন্ধতীদেবীর জন্য সুখবর শুনিয়েছেন গোকুলচন্দ্র দেবনাথ! গরম যত বাড়ছে, তত শিরোনামে আসছে এই আবহাওয়াবিদের নাম। শাশুড়িদের উদ্দেশ্যে তাঁর পরামর্শ, “রবিবার সকালে গরম কমার আশা আছে! তাই, গরমের কথা মাথা থেকে উড়িয়ে পুরোদমে কোমর বেঁধে ঢুকে পড়ুন হেঁশেলে।” কথা প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, নিজেরও পাত পেড়ে জামাইষষ্ঠী খাওয়ার ষোলোআনা ইচ্ছা ছিল। কিন্তু তাঁর আশঙ্কা, এই গরমে কলকাতা ছেড়ে ষষ্ঠী পালন করতে যদি উত্তরবঙ্গে ছোটেন, তা হলে দুর্জনে অন্য কারণ খুঁজবে। |
|
এই গরমে জামাইষষ্ঠীর মেনু নিয়ে রীতিমতো গবেষণা শুরু করে দিয়েছেন রেস্তোরাঁর মালিকেরাও। এই মরসুমের কথা ভেবেই রবিবারের মেনুতে তরমুজ আর কাঁচালঙ্কা দিয়ে মুরগি এবং ডাবের জল দিয়ে ভেটকি মাছের স্ট্যু রাখছে খাদ্য রসিকদের অন্যতম গন্তব্য ‘বোহেমিয়ান’। এমন খাবার যা বেশি মশলাদার-গরগরে নয়, অথচ স্বাদে আহ্লাদিত হবেন জামাই, দাবি করেছেন মালিক জয়মাল্য বন্দ্যোপাধ্যায়।
প্যাচপ্যাচে গরমে ‘সিক্স বালিগঞ্জ প্লেস’-এর বিশেষ মেনুতে থাকছে আমপোড়া সরবত ও গন্ধরাজ লেবু দিয়ে দইয়ের ঘোল। তবে জামাইকে খাওয়াতে নিয়ে গেলে শাশুড়ি সেখানে একসঙ্গে চিংড়ি-কাঁকড়া-ইলিশ এবং মাংসও পাবেন। রেস্তোরাঁর অন্যতম মালিক স্বামীনাথন রামানির কথায়, “বাইরের তাপমাত্রা বাঙালির রসনায় সামান্যতম প্রভাবও ফেলতে পারবে বলে আমার মনে হয় না।”
একমত চন্দ্রবিন্দুর অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়ের শাশুড়ি মন্দার মুখোপাধ্যায়ও। তবু এই গরমে সেলিব্রিটি জামাইয়ের অবস্থা অনুধাবন করে খানিকটা নিমরাজি হয়েই মেনুতে কিছু কাটছাঁট করছেন তিনি। তবে কমসম করে যে মেনু তিনি শোনালেন, তা এই রকম ভাত, সুক্তো, মুসুর ডাল, পাঁচ রকম নিরামিষ ভাজা, নারকেল-কুমড়ি, আড় মাছের কালিয়া, পমফ্রেট মাছ সেঁকা, তিন রকমের চাটনি, লিচু দিয়ে ভাপা দই। ফোনে বেশ অভিযোগ করে বললেন, “নেহাত গরম তাই ইলিশ, চিংড়ি, পাবদা বাদ গেল। মাংসও তো করছি না।”
অনিন্দ্য বলেন, “শুনলেই আতঙ্ক লাগছে (হাসতে হাসতে)! আমি তো বলি ‘ঘামাইষষ্ঠী’। ঘেমে-নেয়ে অস্থির! শাশুড়িরা যেন ‘দ্যাখ কেমন লাগে’ গোছের মুখ করে সারা বছর অপেক্ষা করে থাকেন এই দিনটার জন্য।” |
|
নাট্যকার, অধুনা রাজ্যের মন্ত্রী ব্রাত্য বসু এমনিতেই হাল্কা খাবার খেতে পছন্দ করেন। তার উপরে এই প্যাচপ্যাচে গরম। শাশুড়িমা গত হয়েছেন চার বছর আগে। কিন্তু তাঁর ইচ্ছা মেনেই বন্ধ হয়নি জামাইষষ্ঠী পালন। এখন উদ্যোগ শ্বশুরমশাই সন্তোষ চট্টোপাধ্যায়ের। ব্রাত্যের কথায়, “ও দিন আমি, আমার স্ত্রী ও শ্বশুর মিলে বাড়িতেই রান্না করি। এ বারেও করব। ভাত-ডাল-মাছ, বড়জোর মাংস, এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে মেনু।” মায়ের রান্নার হাত তাঁর মেয়ে পৌলমী পাননি বলেই মনে করেন সন্তোষবাবু। তবু এই গরমের দুপুরে হাল্কা রান্নায় পটু পৌলমী। সন্তোষবাবু বলেন, “আমার বয়স হয়েছে। রান্নাটা হাল্কা হলে, তবুও কয়েক পদ খেতে পারি।”
গরম এবং শাশুড়িদের শারীরিক অবস্থার কথা ভেবে বাড়ি ছেড়ে হোটেলে যাওয়া মনস্থির করেছেন চিত্র-পরিচালক বিরসা দাশগুপ্ত এবং অভিনেত্রী মাধবী মুখোপাধ্যায়ের জামাই সব্যসাচী ভট্টাচার্য। বিরসা ঠিক করেছেন এ বার জামাইষষ্ঠীতে চায়না টাউন যাবেন। তাঁর শাশুড়ি দীপালি চক্রবর্তী যদিও প্রাচীন-পন্থী। পাত পেড়ে খাওয়ানোতেই এখনও বিশ্বাস করেন তিনি। তাঁর কথায়, “এই গরমে
ইচ্ছা থাকলেও ভোর থেকে উঠে গ্যাসের সামনে দাঁড়িয়ে রান্না করা বেশ কষ্টের।” এ দিকে, বাইরে খেলেও সব্যসাচীবাবুর পছন্দ বাঙালি খাবারই। মাধবীদেবী বলেন, “এখন আর রান্না করে জামাইকে খাওয়ানোর মতো শরীরের অবস্থা নেই। তাই রেস্তোরাঁয় পালন করি।”
হোটেলমুখী এই শাশুড়ি-জামাইদের কাছে রবিবারের কলকাতায় এক পছন্দের গন্তব্য ‘ওহ্ ক্যালকাটা’। বাঙালি রান্নার আরও এক পীঠস্থান। মালিক অঞ্জন চট্টোপাধ্যায় মুম্বই থেকে জানান, জামাইয়ের পাতে শাশুড়িরা যাতে তোপসে মাছ ভাজা, তেল কই, মুড়িঘন্ট তুলে দিতে পারেন, তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। রবিবারের ‘স্পেশ্যাল’ মেনুতে এর সঙ্গে থাকছে মোচা-চিংড়ির শিক কাবাব, বেজওয়ানি খাসিও। তবে তিনি নিজে রবিবার কলকাতায় ফিরে শাশুড়ির কাছেই যাচ্ছেন। তাঁর বক্তব্য, সিলেটি মাছ, রাঁধুনি ফোঁড়ন দিয়ে লাউ, মাংস ও মালপোয়া ৮১ বছরের নেলি সেনের হাতে এখনও যে অনবদ্য! এই গরমও সেই অশীতিপর বৃদ্ধাকে দমিয়ে রাখতে পারবে না।
|
অলঙ্করণ: সুমন চৌধুরী ও ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য |
|
|
|
|
|