গ্রীষ্মের মরসুমে দার্জিলিঙে যেন পর্যটকদের ঢল নেমেছে। হোটেল, অতিথি নিবাস কোথাও জায়গা মেলা ভার। ভিড় দেখেই পর্যটকদের থেকে হোটেল বুকিং, গাড়ির ভাড়া বাবদ কয়েকগুণ বেশি টাকা আদায় করতে একটি চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ। এনজেপি থেকে দার্জিলিং সর্বত্র চক্রটি সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ। খবর পৌঁছেছে পুলিশ-প্রশাসনের কাছেও। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, শুধু দার্জিলিং পাহাড়ে বর্তমানে পর্যটকের সংখ্যা অন্তত ২০ হাজার। দার্জিলিঙের জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন বলেছেন, “পুরোপুরি স্বাভাবিক ছন্দে থাকায় পাহাড়ে প্রচুর পর্যটক এসেছেন। চাহিদার তুলনায় হোটেল, অতিথি নিবাসের সংখ্যাও কম। তবুও কোথাও পর্যটকেরা যাতে অসুবিধেয় না-পড়েন, সে দিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে।”
পুলিশের তরফেও বিশেষ নজরদারি শুরু হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। বাড়তি টাকা নেওয়ার অভিযোগ শুনেছেন গোর্খা জনমুরক্তি মোর্চার নেতারাও। এতে দার্জিলিং পাহাড়ের ভাবমূর্তি পর্যটকদের কাছে খারাপ হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন মোর্চা নেতৃত্ব। মোর্চা সূত্রের খবর, ইতিমধ্যে দলের তরফে পাহাড়ের পুলিশ-প্রশাসনের কাছে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে। পাশাপাশি, পাহাড়ের তিন মোর্চা বিধায়কেও বিষয়টি দলের তরফে দেখার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। যেখানে প্রয়োজনে গাড়ি বা হোটেলের লাইসেন্স বাতিল করার জন্য প্রশাসনকে জানানোর জন্য বিধায়কদের বলা হয়েছে। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তথা বিধায়ক হরকাবাহাদুর ছেত্রী বলেন, “পাহাড়ে শান্তি রয়েছে। পর্যটকেরা পাহাড়কে উপভোগ করছেন। সেই সময় এটা চলতে দেওয়া যায় না। |
হোটেল পাওয়ার অপেক্ষায়। ছবি: রবিন রাই। |
আমরা পুলিশ-প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে বলেছি। কোনও গাড়ি বা হোটেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হতে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” ইর্স্টান হিমালয়ান ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সম্রাট সান্যাল বলেন, “ঘুরতে এসে সবাই সুখের স্মৃতি নিয়ে ফিরতে চায়। এতে ওই পর্যটক তো বটেই অন্যরাও তাঁর কাছ থেকে শুনে আবার এলাকায় আসেন। তা যাতে কোনওভাবেই কষ্টের না হয়, সেই ব্যাপারে সবাইকে সচেষ্ট হওয়া প্রয়োজন।” প্রতি বছর ১৫ এপ্রিল থেকে ১৫ জুন অবধি পাহাড়ে গরমের মরশুম চলে। এরমধ্যে পাহাড়ে পর্যটকদের ভিড় উপচে পড়ে ১৫ মে থেকে ১০ জুন অবধি। দক্ষিণবঙ্গে স্কুলগুলিতে আগাম গরমের ছুটি দেওয়ায় এবার ভিড় বেড়েছে। সেই সুযোগেই ওই অসাধু চক্রটি সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ।
৫০০-১০০০ হাজার টাকার হোটেলগুলিতে এই সমস্যা হচ্ছে বলে পর্যটকদের অভিযোগ। প্রথমে ঘর নেই বলে দাবি করে তার পরে ২-৩ হাজার টাকার নিচে কোনও ঘর ভাড়া দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ। দার্জিলিঙে ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় ৪০০ হোটেল রয়েছে। সিকিম ঘুরে দার্জিলিঙে ঘুরতে এসেছেন নিউ ব্যারাকপুরের বাসিন্দা সুকুমার মণ্ডল। গত বুধবার বিকাল থেকে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে হোটেলের ঘর মিলেছে সুকুমারবাবুদের। তিনি বলেন, “বন্ধুর পরিবার-সহ মোট ছয় জন একটি ঘরে আছি। দুদিনের ভাড়া ৮ হাজার টাকার মত চাওয়া হয়েছে। উপায় নেই তাই দিতে হয়েছে।”
একই ভাবে বাঁকুড়ার বাসিন্দা অমিত শর্মা বলেন, “স্ত্রী, মেয়ে এবং আত্মীয়দের নিয়ে ঘুরতে এসেছি। অনেক কষ্টে হোটেল পেয়েছি। ভাড়া তো বেশিই। তার উপরে জলের সমস্যা রয়েছে। কী আর করব এর মধ্যেই থাকবে হবে।” একই অবস্থায় গাড়ি ভাড়ারও। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং ছোটবড় গাড়ি সাধারণ ১৫০০-২ হাজার টাকা ভাড়া, কার্শিয়াঙের ক্ষেত্রে ১ হাজার থেকে ১২০০ টাকা এবং কালিম্পঙে তা ১৫০০ টাকা মত। সেখানে ২৫০০ থেকে ৪ হাজার টাকা গাড়ি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। |