কেন্দ্র শেষ পর্যন্ত পেট্রোলের দাম কমায় কি না এবং কমালেও কতটা কমায়, তা দেখে তবেই ‘সেস’ বা কর কমানো নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে চাইছে রাজ্য প্রশাসন। এর মধ্যে কংগ্রেসের উপরে চাপ বাড়াতে আজ, শনিবার প্রতিবাদ মিছিলে যোগ দিতে পথে নামছেন তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সম্প্রতি ডলারের তুলনায় টাকার দামে ধস কিছুটা আটকানোয় এবং আন্তর্জাতিক বাজারে অশোধিত তেলের দাম কমায় অর্থনৈতিক কারণেই পেট্রোলের দাম কিছুটা কমার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। তাই পেট্রোলিয়াম এবং কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক সূত্রের ইঙ্গিত, কয়েক দিনের মধ্যে পেট্রোলের দাম কমলেও কমতে পারে। শুক্রবার মহাকরণের খবর, শেষ পর্যন্ত পেট্রোলের দাম কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়, তা দেখে ‘সেস’ কমানোর ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন মুখ্যমন্ত্রী নিজে।
শুধু এক লাফে সাড়ে সাত টাকা দাম বাড়ানোর তীব্র নিন্দাই নয়, মুখ্যমন্ত্রী কিন্তু বৃহস্পতিবারই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, তিনি এর প্রতিবাদে পথে নামবেন। এ দিন দলের তরফে ঘোষণা করা হয়, আজ, শনিবার বিকেলে যাদবপুর থানা থেকে হাজরা মোড় পর্যন্ত মিছিলে হাঁটবেন মমতা।
কিন্তু ঘটনা হল, পেট্রোলের দাম বাড়ায় রাজ্যের ‘বাড়ন্ত’ কোষাগারে বাড়তি অর্থ আসবে বলে জানান অর্থ দফতরের অফিসারেরা। সরকারি হিসেব, এক লিটার পেট্রোলে ২৫% বিক্রয় কর নেয় সরকার। এ ছাড়াও পেট্রোল-ডিজেলে লিটার পিছু ১ টাকা করে ‘সেস’ আদায় করে রাজ্য। এ বার অতিরিক্ত কত অর্থ সরকারি কোষাগারে আসবে, এর মধ্যেই সেই হিসেব শুরু করেছেন অফিসারেরা। প্রাথমিক হিসেব বলছে, বাড়তি দামের জন্য বছরে প্রায় ১০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত আয় হবে সরকারের। তা হলে কেরল, উত্তরাখণ্ডের মতো পশ্চিমবঙ্গও কি বিক্রয় কর বা সেস কমাবে? অর্থ দফতরের বক্তব্য, এখনও তেমন নির্দেশ নেই। মহাকরণের খবর, বিক্রয় কর অথবা সেস কমিয়ে রাজ্যবাসীকে কিছুটা স্বস্তি দেওয়া যায় কি না, তাই নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে মন্ত্রিসভার কয়েক জন সদস্যের কথাবার্তা হয়েছে। তবে এই নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেননি মুখ্যমন্ত্রী।
মমতার আজকের মিছিল নিয়ে কংগ্রেস অখুশি হলেও তৃণমূল নেতাদের অনেকের মতেই, এটা সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত। তাঁদের বক্তব্য, এতে এক দিকে মমতা দেখালেন, তিনি অনেক পরিণত। তাই সরকার ছাড়ার মতো ‘হঠকারী’ সিদ্ধান্ত না নিয়ে বরং চাপ বাড়াতে পথে নামছেন। আবার, পুরভোটের আগে এই ভাবে জনগণের পাশে থাকারও বার্তা দিলেন তিনি। পুরভোটে কংগ্রেস ও তৃণমূলের জোট হয়নি। এই অবস্থায় পেট্রোলের দাম বাড়ায় কিছুটা বেকায়দায় কংগ্রেস। পরিস্থিতি কাজে লাগিয়ে নিজের প্রতিবাদী ভাবমূর্তি তুলে ধরতেও এটা মমতার মোক্ষম চাল বলে অনেকের বক্তব্য। শরিক কংগ্রেস নেতারা অবশ্য এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য শুক্রবার বলেন, “মিছিল না করে বরং মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের করটা কমান!” কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরী বলেছেন, “পেট্রোলের বিনিয়ন্ত্রণের সময় তৃণমূল তো সরকারে ছিল। তখন সমর্থন তোলেনি কেন? এখনই বা কেন তুলছে না?” |