বাংলাদেশে যাচ্ছেন মালিকরা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
দেশ ভাগের সময়ে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে ফেলে আসা জমি-বাড়ির মালিকদের একটি প্রতিনিধি দল আগামী মাসে বাংলাদেশে যাচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার সম্প্রতি ‘অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যপর্ণ আইন’ বাস্তবায়ন করে দখল হয়ে যাওয়া জমি-বাড়ি হিন্দুদের ফেরাতে তৎপর হয়েছে। তার পরেই বাংলাদেশ সফরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বাংলাদেশে দখল হয়ে যাওয়া সম্পত্তির মালিকরা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সময় দিলে তাঁর সঙ্গেও দেখা করা হবে। সম্পত্তি ফেরত সংক্রান্ত বিষয়টি দেখাশোনার জন্য আন্তর্জাতিক একটি সলিসিটর ফার্মের সঙ্গে কথাবার্তাও বলা হচ্ছে।
বাংলাদেশে দখল হয়ে যাওয়া সম্পত্তির মালিকদের সংগঠন ‘সোসাইটি অফ এনিমি অ্যান্ড ইভাকুই প্রপার্টিজ ইন বাংলাদেশ’-এর সম্পাদক শচীপতি মৈত্র জানিয়েছেন, দীর্ঘ আন্দোলনের পরে এই প্রথম তাঁরা হিন্দুদের দখল হয়ে যাওয়া সম্পত্তি ফেরতের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের সাড়া পেয়েছেন। তাঁদের প্রতিনিধিরা বাংলাদেশের প্রতিটি জেলার প্রশাসকের সঙ্গে দেখা করে বিষয়টি নিয়ে দরবার করবেন। প্রধানমন্ত্রী হাসিনার সঙ্গেও দেখা করার চেষ্টা করা হবে। ঢাকায় আইনজীবী নিয়োগের পাশাপাশি
আন্তর্জাতিক একটি সলিসিটর ফার্মকেও দায়িত্ব দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। |
|
শচীপতিবাবু বলেন, শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় আসার পরে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক অনেক ঘনিষ্ঠ হয়েছে। দেশ ভাগের সময়ে প্রাণের দায়ে সম্পত্তি ফেলে চলে আসতে বাধ্য হয়েছেন, এমন অজস্র পরিবার ভারতে রয়েছেন। তাঁরা সেই সম্পত্তি ফিরে পেলে দু’দেশের সম্পর্ক আরও ভাল হবে। তিনি জানান, এ দেশের বহু বিশিষ্ট মানুষের পারিবারিক সম্পত্তি বাংলাদেশে দখল হয়ে রয়েছে। শোভাবাজারের রাজবাড়ির এমন প্রায় ৩ লক্ষ বিঘে জমি রয়েছে কুমিল্লায়। পাবনায় সুচিত্রা সেনের বাড়ি-জমির একাংশ দখলমুক্ত করতে বাংলাদেশ সরকার সচেষ্ট হলেও এই জেলাতেই ঋত্বিক ঘটক-মহাশ্বেতা দেবীদের বহু সম্পত্তি দখলদারদের জিম্মায় রয়েছে। দখল হয়ে রয়েছে রাজশাহীতে রঞ্জিত মল্লিক, ময়মনসিংহে সত্যজিৎ রায়, স্নেহাংশুকান্ত আচার্য, বরিশালে মাধবী মুখোপাধ্যায়, ফরিদপুরে মৃণাল সেনের পারিবারিক বহু সম্পত্তি।
|
সম্পত্তি ফিরে পেতে |
• আগে জানুন আপনার বাড়ি-জমি ‘ক’ না ‘খ’ তালিকায়
রয়েছে। (সরকারের দখলে থাকা অর্পিত সম্পত্তি ‘ক’ তালিকায় এবং বেসরকারি দখলে থাকা অর্পিত সম্পত্তির বিবরণ রয়েছে ‘খ’ তালিকায়।)
• ‘ক’ তালিকায় থাকলে জেলা ট্রাইব্যুনাল এবং ‘খ’ তালিকায় থাকলে জেলা কমিটির কাছে আবেদন করতে হবে।
• আবেদন করতে হবে গেজেট প্রকাশের ৯০ দিনের মধ্যে। তবে সময়সীমা আরও ৩০ দিন বাড়ানোর সুপারিশ করেছে মন্ত্রিসভা।
• আবেদনের শেষ তারিখের ১২০ দিনের মধ্যে জেলা ট্রাইব্যুনাল বা জেলা কমিটি আবেদন যাচাই, শুনানি ও তদন্ত করে জেলা প্রশাসকের কাছে সুপারিশ পাঠাবে।
• জেলা প্রশাসক ৩০ দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত জানাবেন।
• সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট না হলে ৬০ দিনের মধ্যে কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে আবেদন করতে পারেন।
• কেন্দ্রীয় কমিটি ১২০ দিনের মধ্যে শুনানি শেষ করে সিদ্ধান্ত জানাবে।
• সেই সিদ্ধান্তও মনঃপুত না হলে আপিল ট্রাইব্যুনালে আবেদন করা যেতে পারে।
• সেই রায়ও সন্তোষজনক না হলে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে যাওয়া যাবে।
• আবেদনের সময়সীমা পেরিয়ে গেলে বা দাবি বাতিল হলে অর্পিত সম্পত্তি সরকারি সম্পত্তি হিসাবে গণ্য হবে। সেই জমি বিক্রি বা ভাড়ার ক্ষেত্রে আগের ভোগদখলকারীই অগ্রাধিকার পাবেন। |
|
|