|
|
|
|
জলসঙ্কটে জেরবার নান্দাই, দাবি প্রকল্পের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কালনা |
জনসংখ্যার তুলনায় সরকারি নলকূপের সংখ্যা কম। প্রতি বছর গরমে জলস্তর নেমে গেলে নলকূপ থেকে পানীয় জল তুলতে মাথার ঘাম পায়ে ফেলার মতো অবস্থা হয় বাসিন্দাদের। এর সঙ্গে রয়েছে আর্সেনিকের সমস্যা। দীর্ঘ দিন ধরে এমন পরিস্থিতির মধ্যেই দিন কাটাতে হচ্ছে কালনা ১ ব্লকের নান্দাই পঞ্চায়েতের বাসিন্দাদের।
সম্প্রতি পরিশ্রুত পানীয় জলের জন্য কালনা ১ পঞ্চায়েত সমিতির কাছে এলাকায় জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের একটি প্রকল্প দাবি করলেন নান্দাই এলাকার বাসিন্দারা। পঞ্চায়েত সমিতির দাবি, ওই এলাকার বিষয়টি ২০০৯ সালের ৯ জুন জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ স্থায়ী সমিতির সভায় আলোচিত এবং গৃহীত হয়। ওই সভার পরিপ্রেক্ষিতে জেলাশাসককেও একটি চিঠি দেওয়া হয়। ২০১১ সালে ফের জেলাশাসক, মহকুমাশাসক, জেলা সভাধিপতি ও জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরে চিঠি পাঠানো হয়েছে। |
|
গুরজোয়ানি নদীর জলেই প্রকল্পের দাবি বাসিন্দাদের। ছবি: কেদারনাথ ভট্টাচার্য। |
নান্দাই পঞ্চায়েত এলাকায় মোট ১৪টি মৌজা রয়েছে। সেগুলি হল উত্তর রামেশ্বরপুর, খাঁ পুর, নান্দাই (পূর্ব), আসাননগর, নান্দাই আশ্রমপাড়া, ঘুঘুডাঙা, নতুনগ্রাম, দুপসা, কুত্তিরডাঙা, পার দুপসা, হাতিপোতা, দুর্গাপুর, দিঘিরডাঙা ও মির্জাপুর। পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতিটি মৌজাতে প্রায় হাজার চারেক মানুষ বাস করেন। তাঁদের বেশির ভাগই পানীয় জলের জন্য পঞ্চায়েতের নলকূপের উপর নির্ভরশীল। এলাকায় প্রায় তিনশোটি নলকূপ রয়েছে। জনসংখ্যার তুলনায় তা নিতান্তই কম। এর মধ্যে প্রতি গ্রীষ্মেই টিউবওয়েলগুলিতে নানা সমস্যা দেখা যায়। জলস্তর নেমে গেলে বেশির ভাগ নলকূপ থেকেই খুব কম জল বেরোয়। সেটুকু জলের জন্য এলাকার বাসিন্দাদের লাইন পড়ে যায়। ফলে জনসংখ্যার চাপে এই সময়ে বেশির ভাগ নলকূপই অকেজো হয়ে পড়ে। গৃহবধূ রহিমা বিবির কথায়, “গরমে এমনিতেই পানীয় জল বেশি লাগে। অথচ এই সময়েই জল মেলে অনেক কম। জানি না কবে সমস্যার সমাধান হবে।”
পঞ্চায়েত প্রধান ঈদের আলি মোল্লাও বলেন, “গ্রীষ্মে প্রায় সব নলকূপই খারাপ হতে শুরু করে। তা সারাতে পঞ্চায়েতের তহবিল থেকে প্রচুর টাকা খরচ হয়। ফলে উন্নয়নের অন্য কাজের খরচে টান পড়ে।” তিনি জানান, এলাকার মানুষের দাবি মেনে নান্দাই পঞ্চায়েতের তরফে কালনা ১ পঞ্চায়েত সমিতিকে চিঠি লিখে পানীয় জলের সমস্যা মেটানোর জন্য জনস্বাস্থ্য কারিগরির একটি প্রকল্প গড়ার আবেদন জানিয়েছেন তাঁরা।
শুধু যে পানীয় জলের সমস্যা, তা নয়। পাশাপাশি রয়েছে আর্সেনিকে আক্রান্ত হওয়ার ভয়ও। পাশেই পূর্বস্থলী ১ পঞ্চায়েত সমিতিতে আর্সেনিকের প্রকোপ রয়েছে বহুদিন ধরে। ওই রোগে আক্রান্ত হয়ে সেখানে মৃত্যুও হয়েছে বহু মানুষের। নান্দাই পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান আরজেদ শেখ বলেন, “পূর্বস্থলীর দু’টি ব্লকে নদীর পাড় ঘেঁষা এলাকাগুলিতে আর্সেনিক ছড়িয়েছে। আমাদের পঞ্চায়েত এলাকার মধ্যে দিয়ে গুরজোয়ানি ও খড়ি নদী চলে গিয়েছে। ভবিষ্যতে ব্যাপক ভাবে ছড়াতে পারে আর্সেনিক। তা রুখতে এলাকায় দ্রুত জনস্বাস্থ্য দফতরের একটি প্রকল্প দরকার।” এলাকার বাসিন্দারাও জানান, বছর তিনেক আগে খাঁ পুর গ্রামের এক ব্যক্তি আর্সেনিকে আক্রান্ত হন। তাঁদের আশঙ্কা, ধীরে ধীরে গোটা এলাকাতেই ছড়িয়ে পড়তে পারে এই রোগ। এলাকার বাসিন্দা কুরদুম শেখের কথায়, “বর্তমানে জলসঙ্কট এবং ভবিষ্যতে আর্সেনিকের কথা মাথায় রেখে এলাকায় জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের ওই প্রকল্প হলে মানুষের উপকার হবে।” নান্দাই পঞ্চায়েত এলাকাটি পূর্বস্থলী (দক্ষিণ) বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত। স্থানীয় বিধায়ক স্বপন দেবনাথ বলেন, “সোমবার কালনার ধাত্রীগ্রামে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের একটি প্রকল্পের কাজে এবং পূর্বস্থলীর পাটুলিতে একটি জলপ্রকল্পের উদ্বোধনে কালনায় আসার কথা বিভাগীয় মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের। তাঁর কাছে সরাসরি নান্দাইয়ের প্রকল্পের ব্যাপারে অনুরোধ জানানো হবে।” এ ছাড়াও, নান্দাই এলাকার দু’টি নদীর জল শোধন করে পানীয় জলের সমস্যা মেটানোর ব্যাপারেও মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হবে বলে জানান তিনি। |
|
|
|
|
|