ডিএমের বিরুদ্ধে অভিযোগ মালদহে
শৌচাগারে ‘আটক’ মহিলা এনভিএফ কর্মী
বাতানুকূল যন্ত্র চালানোর ‘স্যুইচ’ খুঁজে না পাওয়ায় এক মহিলা পুলিশকর্মীকে (এনভিএফ) প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা নিজের বাংলোর শৌচাগারে আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে মালদহের জেলাশাসক শ্রীমতি অর্চনার বিরুদ্ধে। বছর পঞ্চাশেকের পার্বতী হালদার নামে ওই মহিলা এনভিএফ কর্মী অসুস্থ হয়ে মালদহ জেলা সদর হাসপাতালে
শ্রীমতি অর্চনা।
চিকিৎসাধীন। বুধবার দুপুরে ওই ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ।
এনভিএফের জেলা দফতরে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন পার্বতী দেবী। তা রিজার্ভ ইন্সপেক্টরের মাধ্যমে পুলিশের সুপারের কাছে পাঠানো হয়েছে। অভিযোগের খবর পৌঁছেছে মহাকরণেও। বৃহস্পতিবার মুখ্যসচিব সমর ঘোষ বলেন, “আমি বিষয়টি পুলিশের কাছ থেকে খোঁজ নিচ্ছি।” জলপাইগুড়ির ডিভিশনাল কমিশনার অমরেন্দ্রকুমার সিংহও অভিযোগের কথা শুনে খোঁজখবর শুরু করেছেন বলে প্রশাসনিক সূত্রে জানা যাচ্ছে। মালদহের পুলিশ সুপার জয়ন্ত পাল বলেন, “ডিএম বাংলোর অন্দরমহল নিয়ে মন্তব্য করা সম্ভব নয়। অভিযোগ নিয়ে খোঁজ নিতে হবে। তার পরেই যা বলার বলব।”
জেলাশাসক অবশ্য অভিযোগ ‘ভিত্তিহীন’ বলে দাবি করেছেন। তাঁর বক্তব্য, “পার্বতী হালদার নামে কোনও এনভিএফ কর্মীকে চিনি না। যে সময়ে ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ, তখন আমি হবিবপুরের বুলবুলচণ্ডীতে সরকারি কাজে গিয়েছিলাম। আমি নিজেও খোঁজ নিয়ে দেখেছি, ওই ধরনের কোনও ঘটনা আমার বাংলোয় অন্তত হয়নি।” জেলাশাসক এই দাবি করলেও এনভিএফের জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার জুরানচন্দ্র রায় অবশ্য দাবি করেছেন, বুধবার পার্বতীদেবী জেলাশাসকের বাংলোয় ডিউটি করতে গিয়েছিলেন। তিনি জানান, কর্মরত অবস্থায় স্বামীর মৃত্যু হওয়ায় এ বছর ২ এপ্রিল পার্বতীদেবী চাকরি পান। তিনি এর আগে বিভিন্ন জায়গায় সন্তোষজনকভাবেই ‘ডিউটি’ করেছেন। জুরানবাবু বলেন, “গত শুক্রবার থেকে পার্বতীদেবীকে জেলাশাসকের বাংলোয় ডিউটি করার জন্য পাঠানো হয়। রোজ দুপুর ১টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত বাংলোয় কাজ করার কথা। পার্বতীদেবী বুধবার হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরে লিখিতভাবে অভিযোগ করেছেন। তাতে লেখা রয়েছে, তিনি বাতানুকূল যন্ত্রের স্যুইচ খুঁজে না পাওয়ায় বুধবার দুপুর ২টো নাগাদ তাঁকে শৌচাগারে আটকে দেন জেলাশাসক। প্রায় সাড়ে ৩ ঘণ্টা পরে বাংলোর এক রাঁধুনি তাঁকে দরজা খুলে বার করেন। এর পরেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।”
মালদহ সদর হাসপাতালে পার্বতী হালদার।
এ দিন হাসপাতালে পার্বতীদেবী বলেন, “আমি নতুন কাজে গিয়েছি। কোথায় কোন স্যুইচ জানি না। সে জন্য একবারে বাতানুকূল যন্ত্রের স্যুইচ খুঁজে পাইনি।” তাঁর অভিযোগ, জেলাশাসক তাঁকে ‘বকাঝকা’ করে শৌচাগারে আটকে রাখেন। জেলাশাসকের দাবি, “যে সময়ের কথা বলা হচ্ছে, সে দিন ওই নামের কোনও এনভিএফ কর্মী আমার বাংলোর ডিউটিতে যাননি। বাংলোর রেজিস্টারেও পার্বতীদেবীর কোনও সই নেই।” এ প্রসঙ্গে পার্বতীদেবীর দাবি, “আমি বাংলোয় যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কিছু কাজ করতে বলা হয়। সে জন্য তখন সই করতে পারিনি। ঘটনার পরে সই করতে গিয়ে হাজিরা খাতা পাইনি। শরীর অসুস্থ থাকায় জোরাজুরি না করে হাসপাতালে চলে যাই।” ডিএমের দাবি, হাজিরা খাতা না পাওয়ার অভিযোগও সাজানো।
তবে, পার্বতীদেবীকে যে বুধবার ডিএম বাংলোর ডিউটিতে পাঠানো হয়েছিল, পুলিশ লাইনে এনভিএফের অফিসে থাকা রেজিস্টারে তার স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। ওই বাংলোর কিছু কর্মীও পার্বতীদেবীর বুধবার ডিউটিতে যাওয়ার কথা মেনে নিয়েছেন। জেলাশাসক সব অভিযোগ ‘ভিত্তিহীন’ বললেও প্রশ্ন উঠছে, এক জন মহিলা এনভিএফ কর্মী কেন তাঁর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ তুলবেন? এনভিএফের জেলা আধিকারিক জুরানবাবু বলেন, “ইদানীং কোনও এনভিএফ কর্মী জেলাশাসকের বাংলোয় কাজ করতে যেতে চাইছেন না। সে কথা জেলা পুলিশকর্তাদের নজরেও এনেছি। এর বেশি কিছু বলছি না। বাকিটা নিরপেক্ষ তদন্তেই স্পষ্ট হয়ে যাবে।” ওয়েস্ট বেঙ্গল এনভিএফ অ্যাসোসিয়েশনের মালদহ জেলা সম্পাদক রুহিদাস বিশ্বাসের অভিযোগ, “বর্তমান জেলাশাসক কর্মীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। ওই কর্মীরা বাংলোর নিরাপত্তার কাজে বহাল হলেও তাঁদের দিয়ে ফাইফরমাশ খাটানো হয়।”
ঘটনা হল, বাম জমানায় পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক থাকার সময়েও শ্রীমতি অর্চনার বিরুদ্ধে কর্মী ও প্রশাসনিক অফিসারদের সঙ্গে ‘দুর্ব্যবহার’-এর অভিযোগ উঠেছিল। ডব্লিউবিসিএস অফিসারদের সংগঠন সে সময় রাজ্য সরকারের কাছে তাঁর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগও করেছিল।

ছবি: মনোজ মুখোপাধ্যায়



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.